শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা ঝুঁকছে ইরি-বোরো আবাদে

বন্যার পলি আমনের বাম্পার নিশ্চিত করেছে

দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বন্যা বিধ্বস্থ দিনাজপুরে আমন ধান কাটা মাড়া শুরু হয়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে আসা পলি যেন আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ জমির ধানে বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু দুই বার চারা রোপনসহ বীজ ও সার ক্রয়ে দ্বিগুন খরচ হওয়ায় বাম্পার ফলনের পরও কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তাই আমন কাটা মাড়াই পূরোপুরী শেষ না হতেই কৃষকেরা ইরি-বোরো ধান আবাদে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এবার দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪৬৪ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে আবাদ আরো বেশী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারী থেকে জেলায় ইরি-বোরো চাষ শুরু করা হবে। এই লক্ষ্যে জেলায় আমন ধান কর্তনের পর কৃষকদের ইরি-বোরো চাষে জমি প্রস্তুত করতে মাঠকর্মীদের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ১৫ নভেম্বর থেকে জেলার ১৩টি উপজেলাতে ইরি-বোরো চাষের জন্য ধানের বীজতলা প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়ে গেছে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ইরি-বোরো ধান চাষের বীজতলা প্রস্তুত সম্পন্ন করতে কৃষকদের বীজ সরবরাহের কাজ সরকারী বিএডিসি এবং ব্যক্তি মালিকানা ও এনজিওদের সরবরাহ বীজ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এবারে কৃষি অধিদপ্তর জেলায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল উৎপাদন নির্ধারণ করা হয় ৬ লক্ষ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৬ সালে জেলায় ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮৯৭ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ অর্জিত হয়েছিল। অর্জিত বোরো চাষে ফলন হয়েছিল ৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন চাল।
সুত্রটি জানায়, ধানের জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে গত কয়েক বছর ধরে সকল ধানের বাম্পার ফলন হয়ে আসছে। এবারও তাই হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে আমন আবাদ। বন্যা পরবর্তীতে জীবন জীবিকার একমাত্র মাধ্যমে হওযায় এই অঞ্চলের কৃষকেরা শত সংকট সত্বেও নুতনভাবে আমন আবাদ করে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর জমিতে ভেসে আসা পলি আমন ধানের চেহারা পাল্টে দেয়। ফলনও হয়েছে ভাল। তবে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব হবে না কৃষকদের। আর এ কারণে কৃষকেরা আসন্ন ইরি-বোরো আবাদের দিকে ঝুকে পড়েছে আগে-ভাগেই। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ইরি-বোরো’র বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগসহ অন্যান্য সকল বিভাগ প্রয়োজনীয় উপকরণ, সেচ কাজে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, সার, কীটনাশক ও ডিজেল সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। নির্ধারিত লক্ষমাত্রা অর্জিত হলে দিনাজপুর থেকেই চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে সাত লক্ষ মেট্রিক টনের অধিক।
এদিকে ধানের উৎপাদন বাড়াতে হাইব্রিড জাতের অধিক ফলনশীল ধানের ভ্যারাইটি এসিআই, আফতার, জিরা, জাগরণ, এরাইস, টিয়া ও নীলসাগর ধানের চারা রোপন করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এই ভ্যারাইটির ধান প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন থেকে ৫ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন উৎপাদন করা সম্ভব হবে। দেশী উফশী জাতীয় ধানের মধ্যে ব্রি-২৮, ২৯, ৫৮, ৪৫, ৫৫, বিআর-১৬ ও কোটরা পারি ধানের ফলন বেশি ও বালাইমুক্ত হওয়ায় কৃষকদের এই ধানের বীজ রোপনে উদ্বুদ্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব দেশী উফশী জাতীয় ধান প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৮৬ মেট্রিক টন থেকে ৪ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন অর্জিত হয়। এবারে হাইব্রিড ও উফশী উন্নত জাতের এসব বোরো ধানের চারা রোপন বেশি করতে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানোর কাজ চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন