চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসে প্রতিবছর প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। পাহাড় ধসরোধে ঝুঁকিপূর্ণ ও পাহাড়ী এলাকা চিহ্নিত করে ব্যাপক বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন বিভাগ। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ও পাহাড় ধসপ্রবণ এলাকায় বনায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের চাহিদাপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
বন বিভাগের মাঠ পর্যায় হতে সংগৃহীত তথ্যমতে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন করেরহাট, মিরসরাই, বারৈয়াঢালা, কুমিরা, হাটহাজারী, ইছামতি, নারায়নহাট, হাজারীখিল রেঞ্জে বন বিভাগের পাহাড়ী এলাকায় প্রায় ৮৫ হেক্টর এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ৪০ হেক্টর পাহাড়ী এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন রাঙ্গুনিয়া, খুরুশিয়া, পদুয়া, চুনতি, বাঁশখালী, পটিয়া রেঞ্জে বন বিভাগের প্রায় ১শ’ হেক্টর এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু কিছু পাহাড়ী এলাকায় সাম্প্রতিক প্রবল বর্ষণে বিক্ষিপ্তভাবে পাহাড় ধস হয়েছে। পাহাড় ধস রোধকল্পে ২০০৬ থেকে ২০০৮ এবং ২০০৮-০৯ আর্থিক সালে চট্টগ্রাম শহর ও সংলগ্ন লেবু বাগান, কাইচ্চাঘোনা, পরিবেশ অধিদপ্তর অফিস কম্পাউন্ড সংলগ্ন পাহাড়, রেল বিভাগের টাইগারপাস সংলগ্ন পাহাড় ও অফিস কম্পাউন্ডের আশেপাশে পাহাড়ী এলাকা, বাটালি হিল, মতিঝর্ণার উপরের অংশ, সেকান্দর কলোনী, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট হেলী প্যাড সংলগ্ন পাহাড়, ১৪৩ ফিল্ড ওয়ার্কসপ সংলগ্ন পাহাড়, জাহাঙ্গীর লেন উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন পাহাড়, ভাটিয়ারী ১০ কিলোমিটার এবং ১১ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী সেকান্দর কলোনীর পার্শ্ববর্তী পাহাড়, পাঁচলাইশ হিল ভিউ ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়, মতিঝর্ণা, সিটি কর্পোরেশন জাতীয় কবরস্থান ইত্যাদিসহ ৫৭ হেক্টর এলাকায় বন বিভাগ বনায়ন কর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ভূমি মালিকদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো প্রবণতা রোধ করা না গেলে বনজসম্পদ রক্ষা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানোর কারণে পাহাড় বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়লে অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধস হবেই। তিনি বলেন, বন বিভাগে স্টাফ স্বল্পতা সত্তে¡ও লাইসেন্স বিহীন অবৈধ করাত কল বন্ধ করতে বন কর্মচারীরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে লাইসেন্স বিহীন অবৈধ করাত কলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা প্রয়োজন। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে আইল্যান্ডে সড়ক বিভাগ কৃষ্ণচূড়া, কদমসহ বিভিন্ন প্রজাতির নরম কাঠের গাছের চারা লাগানো হয়েছে। যা বড় হলে আইল্যান্ড বা ডিভাইডার ক্ষতিসহ গাছ ভেঙে জান-মালের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, হাইওয়েতে আইল্যান্ডে নরম কাঠের গাছের চারার পরিবর্তে কামিনী, নাগেশ্বর, সনালু, পলাশ, জারুল, কাঞ্চন, বকুলসহ ছোট ও শক্ত প্রজাতির শোভা বর্ধনকারী গাছের চারা রোপণ করা যেতে পারে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ পাহাড় মাটির। অতি বৃষ্টির কারণে যেকোন সময় প্রাণহানি ঘটতে পারে। জনসচেতনতা সৃষ্টি করে বৃক্ষাচ্ছাদনের মাধ্যমে এ প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব। ভবিষ্যত প্রজন্ম বা সন্তানদের জন্য আমাদের বেঁচে থাকা। এ ধরনের পাহাড় ধস থেকে আমাদের প্রজন্মকে রক্ষার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হলে পরিবেশ উন্নত রাখা যায়। কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারলেই সফলতা আসবে। তিনি বলেন, মাটির গুনাগুণ, ভালো বীজ, প্রজাতি বৈচিত্র্য ইত্যাদি একটি উন্নত নার্সারীর জন্য যেমন অপরিহার্য তেমনি একটি পাহাড়ের মাটির গুনাগুণের ভিত্তিতে প্রজাতি নির্বাচন করে সে চারা রোপণ করাও একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। পাহাড় ধস রোধকল্পে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বৃক্ষরোপণ অপরিহার্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন