অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আহরণ বাড়ছে। বিগত ছয় মাসে ৩০ হাজার ১৮০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ছয় হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সঙ্কটে এলসি খোলার হার কমে যাওয়ায় আমদানি কমেছে। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আহরণে। আমদানিতে মন্দা না কাটলে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরেও মন্দার প্রভাব পড়েছে। সার্বিকভাবে গত এক বছরে পণ্য আমদানি বাড়লেও কমেছে কনটেইনার পরিবহন। সামনে পবিত্র মাহে রমজান। অথচ ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে রমজানে অতি প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে।
চলতি ২০২২ থেকে ২৩ অর্থবছরে দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। অর্থবছরে প্রথম মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়। আর প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়ে যায় ৪০ শতাংশ। তবে এরপর বিশ^ অর্থনৈতিক মন্দা সেই সাথে দেশে ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি কমতে থাকে। যা এখনও অব্যাহত আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলার-সঙ্কট দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। রেমিট্যান্স এবং রফতানি খাতে মন্দার কারণে রিজার্ভে টান পড়ে। এ কারণে বিলাস পণ্য এবং অতি জরুরি নয় এমন সব পণ্যের ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে সরকার। ফলে বছরের শেষদিকে এসে দেশে আমদানি অনেক কমে গেছে। এতে টান পড়ছে রাজস্ব আদায়ে। তবে বিশ^বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে শুল্ক ও রাজস্ব আদায় বেড়েছে। এই কারণে রাজস্ব আহরণ আগের বছরের তুলনায় বেশি হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে রাজস্ব আহরণের টার্গেট ছিল ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩০ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি ছয় হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয় ২৭ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে এবার দুই হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ১০.৬১ শতাংশ। রাজস্ব আহরণ কমে গেলে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের হার বাড়ে। তাতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যায়। ফলে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সঙ্কোচিত হয়। যার সুদূরপ্রসারি প্রভাব পড়ে সার্বিক অর্থনীতিতে।
অন্যদিকে সদ্য সমাপ্ত বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহন বেড়েছে। সব ধরনের পণ্য পরিবহন ২০২২ সালে আগের বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। ২০২২ সালে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮২ মেট্রিকটন পণ্য পরিবহন হয়। ২০২১ সালে পরিবহন হয় ১১ কোটি ৬৬ লাখ। পণ্য পরিবহন বেড়েছে ২ শতাংশের কিছু বেশি। তবে কমেছে কনটেইনার পরিবহন।
২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ও এর আওতাধীন কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও নৌ টার্মিনালের দিয়ে আমদানি-রফতানি ও খালি মিলিয়ে কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউএস। ২০২১ সালে ৩২ লাখ ১৪ হাজার কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। এ হিসেবে প্রায় আড়াই শতাংশ কমেছে কনটেইনারে পণ্য পরিবহন। দেশের আমদানি-রফতানি খাতের ৯৮ শতাংশ কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়। বাকি দুই শতাংশ মোংলা বন্দর দিয়ে হয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। তাই বন্দরের সার্বিক আমদানির উপর নির্ভর করে কাস্টমস হাউসের রাজস্ব আহরণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন