শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি গ্রেফতার ২৩

প্রক্সি দিতে ১০ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেন তারা

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সিপাহি পদে লিখিত পরীক্ষার জালিয়াতির অভিযোগে ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, ১০ থেকে ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভিন্নজনকে দিয়ে কৌশলে তারা লিখিত পরীক্ষায় জালিয়াতি করিয়েছিলেন। গতকাল বুধবার পাঁচজন এবং আগের দিন ১৮জনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল নগরীর সাগরিকা রোডে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট প্রশিক্ষণ একাডেমি থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পাহাড়তলী থানা পুলিশ। তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম, শামীম আখন্দ, শামীম প্রধান, শাহেদ মিয়া ও মো. নূরনবী।
আগের দিন গ্রেফতারকৃতরা হলেন-আবুল বাশার, এনামুল হক, শহীদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ, সবুজ চন্দ্র, জয় চন্দ্র, বাবুল মিয়া, মোবারক হোসেন, মো. আক্তারুজ্জামান, খলিলুর রহমান, আরিফুর রহমান, সুজন সরকার, নিতোষ চাকমা, সোহেল রানা, মো. ইলিয়াছ, কাজ দেলোয়ার হোসেন এবং মো. মহিউদ্দিন।
জানা গেছে, ২০১৪ এবং ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে দুই দফায় সিপাহী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত ছিল। জটিলতা অবসানের পর গত ১১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত একমাস ধরে প্রার্থীদের শারীরিক যোগ্যতার পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২৩ ডিসেম্বর প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। পরে গত সোমবার থেকে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট প্রশিক্ষণ একাডেমিতে শুরু হয় মৌখিক পরীক্ষা। তিনদিন ধরে চলা পরীক্ষার শেষদিন ছিল গতকাল।
পুলিশ জানায়, মৌখিক পরীক্ষার প্রথমদিন ১৮ জন এবং দ্বিতীয় দিন আরও ৫ জনকে কাস্টমস কর্মকর্তারা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তারা কেউই লিখিত পরীক্ষা দেননি। পরীক্ষার্থী ভাড়া করে তাদের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, ১০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকায় তারা প্রক্সি পরীক্ষার্থী ভাড়া করেন।
প্রথম দফায় গ্রেফতার ১৮ জনের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় মামলা দায়ের করেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ চৌধুরী। এদের মধ্যে ১৭ জনকে মঙ্গলবার আদালতে হাজিরের পর কারাগারে পাঠানো হয়। মহিউদ্দিন নামে এক প্রার্থী আটকের পর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে পুলিশ হেফাজতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলায় গ্রেফতার ১৮ জনের পাশাপাশি তাদের হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অজ্ঞাতনামা ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। পরে গ্রেফতার ৫ জনের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. আবু নুর রাশেদ আহমেদের নেতৃত্বাধীন নিয়োগ কমিটির সদস্যরা জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটন করেন। মৌখিক পরীক্ষার শুরুতে লিখিত পরীক্ষার স্বাক্ষর পাতার স্বাক্ষরের সঙ্গে মৌখিকের মিল আছে কি না যাচাই করা হয়। সেখানে ২৩ জনের স্বাক্ষরে অমিল পাওয়া যায়। তাদের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় লিখিত পরীক্ষার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞাসা করা হয়।
কিন্তু কেউই সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। এরপর নিয়োগ কমিটি তাদের আটক করে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের হাতে তুলে দেয়। দীর্ঘদিন পর পরীক্ষা হওয়ায় চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনের ছবির সঙ্গে বর্তমান চেহারার অনেক পরিবর্তন এসেছে। ফলে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি চক্র মূল প্র্রার্থীর বদলে অন্যজনকে দিয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়েছে।
কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, ৯৮ জন সিপাহি পদে ৩ হাজার ৩৪৪ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ ৩৫০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়টি মৌখিক পরীক্ষার সময় ধরা পড়ায় ২৩ জনকে আটক করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন