কোনো প্রকার শুল্কায়ন ছাড়াই চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে রোলস-রয়েস ব্র্যান্ডের একটি বিলাসবহুল গাড়ি খালাস করা হয়েছে। পরে ঢাকার বারিধারা থেকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা গাড়িটি জব্দ করেছেন। গাড়িটির মালিক বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্য অনন্ত ডেনিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির। তার নিজ বাড়ি থেকেই গাড়িটি জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
সূত্র মতে, গত এপ্রিলে আমদানির পর শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ২৭ কোটি টাকা দামের বিশ্ববিখ্যাত রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়িটি প্রভাব খাটিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসেন শরীফ জহির। এর আগে গাড়িটি আমদানির পর চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায়ও নেয়া হয়। পরে শুল্কায়নের জন্য কাগজপত্র দাখিল করা হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। তবে শুল্কায়নের আগেই গত ১৭ মে গাড়িটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ঢাকার বারিধারায় বাসায় সরিয়ে নেয়া হয়। এ খবর জানতে পেরে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক শামসুল আরেফিন খানের নেতৃত্বে তার বাসার গ্যারেজে অভিযান চালানো হয়। গত সোমবার ওই বাসার গ্যারেজ থেকে গাড়িটি জব্দ করেন তারা। যুক্তরাজ্যের রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়িটির বাজারমূল্য ২৭ কোটি টাকা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই গাড়ির সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৬ হাজার ৭৫০। এ ধরণের গাড়িতে শুল্ককর দিতে হয় শুল্কায়িত মূল্যের আট গুণ। স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল ধরণের এ গাড়ি উৎপাদনের সাল ২০২১। মডেলের নাম কুলিনান এসইউভি। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর জানায়, চট্টগ্রাম ইপিজেডের হংকং ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটস লিমিটেড গাড়িটি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করে।
কোন ধরনের শুল্কায়ন ছাড়াই কিভাবে গাড়িট ছাড় হলো জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপকমিশনার এ কে এম সুলতান মাহমুদ বলেছেন, কোনো পণ্যই শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বন্দর বা শুল্ক স্টেশন থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। ৭০ দিন আগে গাড়িটি আমদানি করা হলেও আমদানিকারক অজানা কারণে শুল্কায়ন করেননি। গাড়িটি কোন প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিইপিজেড এবং সেখান থেকে ঢাকায় এসেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুল্কসহ গাড়িটির দাম ২৭ কোটি টাকা।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোবেরা খানম ইনকিলাবকে বলেন, আমদানিকারক যে বিধিতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়িটি আমদানি করেছেন, তাতে দুই হাজার সিলিন্ডার ক্যাপাসিটির গাড়িতে এ সুবিধা পাওয়ার কথা। তবে আমদানি করা গাড়ির বনেটে স্টিকার অনুযায়ী এটির সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৬ হাজার ৭৫০। অর্থাৎ শুল্কমুক্ত সুবিধা না পেলে গাড়িটি আমদানি বাবদ ২৪ কোটি টাকা শুল্ককর দিতে হবে। বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে।
মোবেরা খানম বলেন, আমদানির পর থেকেই আমরা গাড়িটির অবস্থান সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। কারণ গাড়িটি কেন এতাদিন ধরে পরে আছে এ নিয়ে সন্দেহ হচ্ছিল। কিন্তু চট্রগ্রাম কাস্টমস হাউস কি কারণে এতোদিন গাড়ির ছাড়করণ পেন্ডিং করে রেখেছে তা বলতে পারছিনা। তবে আমদানিকারক বেআইনিভাবে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া না করেই গাড়িটি গ্যারেজে লুকিয়ে রেখে শুল্ক আইনের বিধান ভঙ্গ করেছেন। এমনকি গাড়িটি অবৈধভাবে ঢাকার রাস্তায় তার ছেলে চালিয়েছেনও। এ ক্ষেত্রে চোরাচালান হিসেবে গণ্য হওয়ার অপরাধ হয়েছে। জব্দ করা গাড়িটি ঢাকা কাস্টম হাউসের শুল্ক গুদামে জমা দেয়া হয়েছে। এখন চট্রগ্রাম কাস্টমস হাউস এ্যাসেসমেন্ট করে সিদ্ধান্ত নিবে। তাদের সিদ্ধান্তের উপরই গাড়ির ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তবে গাড়িটির আমদানিকারক এখন এসআরও বেনিফিটও পাবেন না বলে উল্লেখ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক।
উল্লেখ্য, কাস্টমসের নথি অনুযায়ী, গত ১৭ মে গাড়িটি যুক্তরাজ্যের ভারটেক্স অটো লিমিটেড থেকে আমদানি করে বাংলাদেশি ও চীনা নাগরিকের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জেড এন্ড জেড ইন্টিমেটস লিমিটেড। আমদানির তারিখ রাতেই গাড়িটি স্থানীয় ইপিজেড থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। পরবর্তী সময়ে এটি ঢাকার বারিধারায় নিয়ে আসা হয়। কাস্টমসের তথ্যমতে, গাড়িটিতে শুল্ক আসবে প্রায় ২৪ কোটি টাকা। এই বড় অঙ্কের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়িটিকে উর্ধ্বতন কারো নির্দেশে হস্তান্তর করা হয়েছিল
এ প্রসঙ্গে শরীফ জহির বলেন, তারা বেপজার পারমিটেড। বেপজা পিআই থেকে শুরু করে কত সিসি এবং ইম্পোর্ট পারমিট দেয়। বিএল থেকে শুরু করে প্রত্যেক জায়গায় স্পষ্ট করে লেখা থাকে। এখানে শুল্কের কোনো বিষয় নেই। তিনি বলেন, গাড়ি আনা হয়েছে এপ্রিল মাসে এবং এটি চিটাগং ইপিজেড-এ এনে কাস্টমস ইনস্পেকশন শেষে আমাদের হস্তান্তর করে। এটা থাকার কথা চিটাগং ইপিজেডে। কিন্তু ডেন হয়ে যাওয়ায় এটাকে আমার লোকজন ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছে। মূলতঃ ভুল হয়েছে অ্যাসেসমেন্ট কমপ্লিট হওয়ার আগে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া।
কত সিসি গাড়ি আমদানি করা যায় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিডান হলে ২০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানি করা যায়। তবে এসিবি হলে তার কোনো লিমিট নেই বলে তিনি জানান।
জনাব শরীফ বলেন, আগাম অনুমতি নিয়েই আমরা গাড়ি আমদানি করি। এটা করোনা মহামারির আগে অনুমোদন করা বলেও তিনি জানান। খুব দ্রæত বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন