স্টাফ রিপোর্টার : নিন্ম আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধির গেজেট নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি আজ (বুধবার)। গতকাল মঙ্গলবার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বিষয়টি এ দিন বেলা সাড়ে ১১টায় শুনানির জন্য রাখেন।
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ওই গেজেট গত ১১ ডিসেম্বর প্রকাশ করে সরকার, যা ১৩ ডিসেম্বর এফিডেভিট আকারে আপিল বিভাগে জমা দেয়ার কথা ছিল রাষ্ট্রপক্ষের। কিন্তু একজন বিচারকের অনুপস্থিতিতে সেদিন শুনানি পিছিয়ে যায়, নতুন তারিখ রাখা হয় ২ জানুয়ারি।
আদালতে শুনানিতে ছিলেন- অ্যাটর্নি জেনালের মাহবুবে আলম, ব্যারিস্টার এম. আমীর উল ইসলাম ও মনজিল মোরসেদ। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আদালত। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, এ মামলা আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম এখনও আসেননি।
ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম পরে আদালতে উপস্থিত হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একট কর্মসূচির কারণে বিষয়টি বুধবারের জন্য রাখেন। শৃঙ্খলা বিধির ওই গেজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আইনজীবীরা। অ্যাটর্নি জেনারেল এই বিধিমালায় সব ঠিকঠাক বলে মনে করলেও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এর ভেতরে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মৃত্যু দেখতে পাচ্ছেন। আর আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের অন্যতম নেতা আমীর-উল ইসলাম বলে আসছেন, এই গেজেটের মধ্যে দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন করে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের দ্বদ্বের অবসান ঘটাকেই আপাতত বড় পাওয়া বলছেন সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ।
মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়। ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্র¯ুÍত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ। এরপর ও খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রনালয় থেকে বিধিমালার যে খসড়া জমা দেয়া হয়েছিল,তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন