চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে বাংলাদেশ গেজেট আইন, নিয়ম অবজ্ঞা করে জোর পূর্বক নিকাহ্ রেজিস্ট্রার (কাজী) নিয়োগ দেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কধুরখীল অসমাপ্ত ইউনিয়নে ৭ বছর আগে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে অবৈধ ও নিয়ম বর্হিভূত এ নিয়োগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ায় এলাকায় বিয়ে নিবন্ধন কর্ম নিয়ে বিপাকে পড়েছে মুসলিম সমাজ। জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রেসিডেন্ট নির্দেশে প্রণীত গেজেটের ধারা ও নিয়ম অনুযায়ী কেনো এলাকা নিকাহ রেজিস্ট্রারের শুন্যপদ সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরখাস্ত আহবান করবেন। ৫ জনের নিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি যাছাই-বাছাইসহ ৩ জনের প্যানেল তৈরি করে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৭ এ প্রেরণ করবেন। তবে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের দিন থেকে ক্রমান্বয়ে ১২০ দিনের মধ্যে নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় আবারো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। কিন্ত বোয়ালখালীর কধুরখীল ইউনিয়নের ক্ষেত্রে এর কিছুই তোয়াক্কা করেননি নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১০ সালের ২৫ জুলাই তারিখে কধুরখীল, শাকপুরা, আমুচিয়া ও কড়লডেঙ্গায় তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত কাজী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এরপর ২৫-০৮-২০১০ নিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা আহবান করেন। জটিলতার কারণে কোনো সভা বা প্যানেল হয়নি। পরবর্তীতে ২০১১ সালে পোপাদিয়া, আমুচিয়া ও কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের কাজী অবসর জনিত কারণে শূন্য পদ ঘোষণা হলে বিধি অনুযায়ী কাজী নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ১৭-০৫-২০১২ সাল, ২৩-০৪-২০১৫ সাল এবং ২৬-০৭-২০১৬ ইং তারিখসহ কধুরখীল ইউনিয়নে কয়েকবার নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সভা আহবান করলেও আইন সঙ্গত ও বিধি বর্হিভূত হওয়ায় কোন সভা হয়নি। কিন্ত পরবর্তী সময়ে সকল আইন-গেজেট ও নিয়ম কানুনকে অবজ্ঞা করে ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারী ও ২০১৭ সালের ১৭ মার্চের এলোমেলো স্বাক্ষরে প্যানেল বানিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ পূবর্ক অবৈধ কাজী নিয়োগে সহযোগিতা করার অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া তথ্য গোপন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আইনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। যেহেতু ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পশ্চিম গোমদন্ডী ৬ ওর্য়াড, পূর্ব গোমদন্ডী পুরো, সংশ্লিষ্ট কধুরখীল ইউনিয়নের ৩ ওর্য়াডকে নিয়ে পৌরসভা গঠিত হয়। ৬ ওয়ার্ডের অসম্পুর্ণ ইউনিয়ন হওয়ায় দীর্ঘ ১৪ বছরেও নির্বাচন দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে। আর যদি ইউনিয়নই না হয় তবে দীর্ঘদিনের পুরনো বিজ্ঞপ্তির ধারাবাহিকতায় কিভাবে কাজী নিয়োগ হয়? তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে কধুরখীল ইউনিয়নে কাজী নিয়োগ সংক্রান্ত নং-বিচার-/২.এন-০৯/৮৮-১৬৬ স্বারকে সিনিয়র সহকারী সচিব জি এম নাজমুছ শাহাদাৎ স্বাক্ষরিত ২৭-০৪-২০১৬ইং তারিখের নির্দেশনায় বিধি মোতাবেক উল্লেখ থাকলেও এর ৩মাস পর সভা আহবানের তারিখ ২৭-০৭-২০১৬ইং, নিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্ট কমিটির সভার তারিখ ছিল ০২/০৮/২০১৬ইং, রোজ মঙ্গলবার বেলা ০৩ ঘটিকায়। কিন্তু ৫ জনের কমিটির ৪ জনের স্বাক্ষরের তারিখ ছিল সভার প্রায় ৫মাস পর ১৭/০১/২০১৭ইং তারিখে। তবে এতেও দেখা যায় আগের-পরের হিসেব। আর অপর এক জনের স্বাক্ষর ছিল আরো ২ মাস পর ১৭/৩/২০১৭ ইংরেজি তারিখে। অথচ শূন্য ঘোষণা বা নিয়োগ প্রক্রিয়ার দিন থেকে সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্দেশে রচিত বাংলাদেশ গেজেটের আইনের বিধি ৬ ও তৎসংশ্লিষ্ট উপবিধি মতে। একদিকে অসমাপ্ত ইউনয়ন অপরদিকে গেজেটে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে না হওয়া। এতোসব অনিয়ম-দুর্নীতি সত্তে¡ও নিয়োগকৃতের ব্যাপারে কোন ধরনের অনুসন্ধান বা খোঁজ খবর ছাড়া জন বিচ্ছিন্ন এক ব্যাক্তিকে কাজী নিয়োগ দেয়ায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বলে জানান এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য নিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব ও বোয়ালখালী সাব-রেজিস্ট্রারের মোবাইলে একাধিবার ফোন করলেও তাঁর মোবাইলে সংযোগ পায়নি। কধুরখীল ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস বলেন, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৬১ নং আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ওয়ার্ড গঠন ৩(১) ধারায় উল্লেখ মতে ৯ ওয়ার্ডে প‚র্ণ নয় এমন এলাকা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনসহ সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাওলানা মো. ওবাইদুল হক হক্কানী বলেন, ইউনিয়নে কাজী নিয়োগের জন্য হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। অন্যথায় আইন বর্হিভূত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন