শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার বিচার ক্যামেরা ট্রায়ালে -নবম দিনের যুক্তিতর্কে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ

প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ১২ জানুয়ারি, ২০১৮

অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি দুদক- ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার : পরবর্তী শুনানি ১৬ , ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি
স্টাফ রিপোার্টার : ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিচার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আদালতে আইনজীবীদের ঢুকতে বাধা দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে আদালতের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, খালেদার বিচার পাবলিক ট্রায়াল হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন না। জনগণের উপস্থিতিতে বিচার হচ্ছে না, হচ্ছে ক্যামেরা ট্রায়াল। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরম বহিঃপ্রকাশ। এটা ফৌজদারি মামলার আবরণে রাজনৈতিক মামলা।
গতকাল বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থপনার সময় বিশেষ জজ ৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামানের আদালতে তিনি এসব কথা বলেন। নবম দিনের মতো খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন বিএনপি নেতা সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার। তিনি তার বক্তব্যে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য আদালতের প্রতি আহবান জানান। কোনো অভিযোগই দুদক প্রমাণ করতে পারেনি। তাই খালেদা জিয়ার খালাস পাবেন বলে আশাও প্রকাশ করেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর যুক্তিতর্ক শুরু করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। যুক্তি উপস্থাপন শেষে দুটি মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।
ঢাকার আলিয়া মাদ্রসা সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে-৫-এর আদালতে চলছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার চলছে। এর আগে বেলা ১১টার দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিশেষ আদালতে হাজির হন। এরপর আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে আইনজীবীদের ঢুকতে বাধা দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে আদালতের উদ্দেশে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদার বিচার পাবলিক ট্রায়াল হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন না। জনগণের উপস্থিতিতে বিচার হচ্ছে না, হচ্ছে ক্যামেরা ট্রায়াল।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাকে বানোয়াট মামলা আখ্যায়িত করে মওদুদ বলেন, এমামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরম বহিঃপ্রকাশ। এটা ফৌজদারি মামলার আবরণে রাজনৈতিক মামলা। ক্যামেরা ট্রায়াল করার জন্য খালেদা জিয়ার আরও ১৪টি মামলা এখানকার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বাবা-মায়ের নামে করা ট্রাস্টের টাকা কেউ আত্মসাৎ করতে পারে তা বাংলাদেশের কোনো সুস্থ মানুষ বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, আদালতের ওপর যদি রাজনৈতিক প্রভাব না থাকত তাহলে আগেই খালেদা জিয়ার এই মামলা খারিজ করে দিতে পারতেন। মওদুদ আহমদ বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ তো দূরের কথা, ২ কোটি থেকে ৬ কোটি টাকা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রশাণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে দুদক। আইনের দৃষ্টিতে এই মামলা অগ্রহণযোগ্য।
মওদুদ আদালতকে জানান, অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হওয়ার কারণে দুদক থেকে তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ তাঁর চাকরি হারান। পরে তিনি মইন উদ্দিন ও ফখরুদ্দিনের অবৈধ সরকারকে ধরে চাকরিতে ফেরেন। তাঁর ক্ষোভ ছিল। অথচ তাঁকে দিয়ে মামলা তদন্ত করানো হলো। দুদক মূল নথি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে মওদুদ বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে নথি তৈরি করা হয়েছে, যা ভয়াবহ ফৌজদারি অপরাধ। জালিয়াতি নিয়ে উচ্চ আদালতের একাধিক নজির পড়ে শোনানোর পর মওদুদ আদালতকে জানান, নিশ্চয় আদালত জালিয়াতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তদন্ত করানোর ব্যবস্থা করবেন। তা না করেও যদি বিশ্বাস করেন যে জালিয়াতি হয়েছে তাহলে মামলা আর এগোতে পারে না। কুয়েতের আমির জিয়াউর রহমানকে খুব ভালোবাসতেন জানানোর পর মওদুদ বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুস্তাফিজুর রহমান কুয়েতের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এতিমদের জন্য জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে কুয়েতের আমির টাকা দেন। এই টাকা সরকারের কোনো টাকা না। নথিপত্রের কোথাও কোনো জায়গায় খালেদা জিয়ার স্বাক্ষরও নেই। খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ।
কোনো অভিযোগই দুদক প্রমাণ করতে পারেনি: সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার সব সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে তিনি দেখেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই দুর্নীতি দমন কমিশন প্রমাণ করতে পারেনি। ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারলে এর সুবিধা পাবেন আসামি। তিনি আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার চান, ন্যায়বিচার করুন। জমির উদ্দিন সরকার আদালতে খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পড়ে শোনান। বিশেষ করে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের এমন বক্তব্য আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ কি না, সে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন তিনি। বিএনপির এই নেতা তাঁর বক্তব্যে বারবারই আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের কথা আদালতকে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি এক-এগারোকে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ওই সময় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন বাধাগ্রস্থ করতে মামলা দেয়া হয়েছে। এখন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা আছে।
এর আগে বুধবার এ মামলায় অষ্টম দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানি হয়। শুরুতে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। জালিয়াতির মাধ্যমে নথি তৈরির অভিযোগ এনে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ছয়জন সাক্ষীর শাস্তি চেয়ে লিখিত আবেদন করে তিনি তাঁর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করেন। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন জমির উদ্দিন সরকার। খালেদার রাজনৈতিক জীবন ধ্বংসের জন্য মিথ্যা মামলা করা হয়েছে দাবি করেন তিনি। গতকাল যুক্তিতর্কের শুনানির সময় বারবার তিনি সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের প্রসঙ্গ তোলেন। আদালতকে তিনি বলেন, মাইনাস টু থিওরির অংশ হিসেবে খালেদার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে দুদক। অনেক কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে মইন উ আহমেদকে বিএনপির সরকারই সেনাপ্রধান করেছিলেন বলেও আদালতকে জানান প্রবীণ এই আইনজীবী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন