বিশেষ সংবাদদাতা : চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যদিও প্রকল্পটি চূড়ান্ত করতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ২ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। এর আগে চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। গত বছর চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দর কষাকষির সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৩৭০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেছে দুই হাজার ২৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকা বা ২১ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাড়তি ব্যয়ের বড় অংশই প্রাইস অ্যাডজাসমেন্ট (ব্যয় সমন্বয়) খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক নির্মাণ খাতে ব্যয় সমন্বয় ১ হাজার ৩৩৩ কোটি ২০ লাখ ও অবকাঠামো খাতে পৃথকভাবে ধরা হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে শুধু প্রাইস অ্যাডজাসমেন্ট ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এর বাইরেও ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা অনিশ্চিত খাতে ব্যয় (প্রাইস ও ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি) ধরা হয়েছে।
সওজের তথ্যমতে, ঢাকা-সিলেট রুটে ২১৪ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা ছাড়াও উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া পুরো চার লেনের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সরলীকরণ করা হবে, যাতে ৮০ কিলোমিটার গতিতে যান চলাচল করতে পারে। এছাড়া প্রকল্পটির আওতায় ৩২১টি কালভার্ট, ৭০টি ছোট-মাঝারি সেতু, পাঁচটি রেল ওভারপাস, চারটি ফ্লাইওভার, ১০টি আন্ডারপাস ও ৪২টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
চার লেন নির্মাণ ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর প্রকল্পটির জন্য সাধারণ ও সাইট ফেসিলিটি অংশের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, মাটির কাজে ১ হাজার ৪০৩ কোটি ৪১ লাখ, পেভমেন্ট ওয়ার্কে ৪ হাজার ৫১২ কোটি ৫০ লাখ, ফাউন্ডেশন ওয়ার্কে ৮৪৭ কোটি ৩৯ লাখ, অবকাঠামো খাতে ২ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৫ লাখ, অন্যান্য খাতে ৪৯৫ কোটি ২২ লাখ ডে-ওয়ার্ক খাতে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এখান থেকে সেলভেজ সামগ্রী বিক্রি বাবদ অর্থ বাদ ও ১০ শতাংশ কন্টিনজেন্সি যোগ করে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৭০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। নতুন হিসাবে দেখানো হয়েছে, সাধারণ ও সাইট ফ্যাসিলিটি অংশের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এছাড়া ৪৭ গাড়ি ও ৩৭ মোটরসাইকেলসহ সম্পদ সংগ্রহ খাতে ৩৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, মাটির কাজে ১ হাজার ৩৫০ কোটি তিন লাখ, পেভমেন্ট ওয়ার্কে ৪ হাজার ১৩৭ কোটি, অবকাঠামো খাতে ২ হাজার ৯৫০ কোটি ৭৫ লাখ এবং অন্যান্য ডে-ওয়ার্ক খাতে ৬৫৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আর ব্যয় সমন্বয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ১০ শতাংশ বা ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা কন্টিনজেন্সি। এতে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। জিটুজি ভিত্তিতে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে চায়না হারবার প্রস্তাব করেছিল ১৬ হাজার ৩৪৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। সে তুলনায় সওজের ব্যয় প্রাক্কলন অনেকাংশে কম। এক্ষেত্রে সওজের সর্বশেষ রেট শিডিউল ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ মূল্যহার বিবেচনা করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তর বাবদ কোনো ব্যয় অন্তর্ভুক্ত নেই। এজন্য সরকারি অর্থায়নে পৃথক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫ হাজার ১৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সেক্ষেত্রে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে তামাবিল পর্যন্ত চার লেন নির্মাণে ৯৯০ দশমিক ২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করবে সওজ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন