শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

জনমনে উদ্বেগ ও শংঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে ঘিরে সারাদেশে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পক্ষে-বিপক্ষে দীর্ঘ শুনানী শেষে প্রায় দু’ সপ্তাহে আগে ৮ ফেব্রয়ারী রায় ঘোষনার দিন ধার্য হওয়ার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এক-এগারো সেনা সমর্থিত সরকারের সময় দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাসহ ৫টি এবং পরবর্তি সময়ে সরকারবিরোধি আন্দোলনের সময় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলাসমুহকে শুরু থেকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বলে দাবী করছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মত দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতা এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় সাজা দেয়া হলে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির আশঙ্কা অমূলক নয়। তবে রায় ঘোষনার আগেই সরকারীদলের মন্ত্রী-এমপিদের নানা ধরনের মন্তব্য এবং রায় ঘোষনার দিন বিএনপি’র যে কোন ধরনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে কঠোরভাবে দমন করার ঘোষনায় সারাদেশে আতংক দেখা দিয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষনার দিন ধার্য হওয়ার পর থেকেই একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের আশঙ্কা ও প্রতিরোধের কথা বলা হচ্ছে অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ে নেমে পড়েছে। দলের নেতার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় যেন দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক করার একটি উপলক্ষ হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হচ্ছে জনগনের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের জীবনযাত্রা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন যে কোন পরিস্থিতিকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে মোকাবেলা করা। কিন্তু চলমান অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, বিএনপি বা বিরোধি জোটের প্রতিবাদ কর্মসূচির আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি সতর্কতা এবং অতি তৎপরতায় সারাদেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যহত হচ্ছে। গত এ সপ্তাহে বিএনপি’র শহ¯্রাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশির নামে হয়রানির শিকার হচ্ছে লাখ লাখ পরিবার। আজকের দিনটিকে ঘিরে ঢাকা মেট্টোপলিটান পুলিশ যে সব সতর্কতা ও নির্দেশনা জারি করেছে তাকে এক প্রকার অঘোষিত কারফিউ বলে অভিহিত করা চলে। এ ধরনের অবস্থাকে শান্তি রক্ষার নামে জনগনের শান্তি হরণ ও নাগরিকদের অধিকার হরণ বলে অভিহিত করছেন বিশিষ্টজনেরা।
জননিরাপত্তা ও জনগনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। অতি সতর্কতা ও অতি তৎপরতার মধ্য দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়েনা। একটি মামলার রায়ের সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করে দেশব্যাপী ধরপাকড় চালানো, তল্লাশি চালানো, সভাসমাবেশ নিষিদ্ধ করা, এমনকি চারজনের বেশী লোকের একসাথে চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দু’দিন আগে থেকেই ঢাকামুখী যানবাহন নিয়ন্ত্রন করা হয়েছে, বিরোধি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দেয়ার পাশাপাশি রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। মামলা যে উদ্দেশ্যেই করা হোক, বিরোধিদলীয় নেতা আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন। মামলার অসারতা নিয়েও তাঁকে এবং তাঁর কৌশলীদেরকে যথেষ্ঠ আত্মবিশ্বাসী বলে প্রতিয়মান হয়েছে। তারা বেকসুর খালাস পাওয়ার আশা করছেন, অন্যদিকে দুদকের আইনজীবীরা মামলার সারবত্তা প্রমানে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবী করেছেন। যে কোন রাজনৈতিক মামলার পক্ষে-বিপক্ষে এটি একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া। তবে বিএনপি’র পক্ষ থেকে যেমন বিচারের রায় সরকারের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে, একইভাবে রায়কে সামনে রেখে বিএনপি কথিত আন্দোলন কর্মসূচিকেও রায়ের উপর প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা বলে অভিযোগ করেছেন সরকারী দলের কোন কোন নেতা। একটি মামলার প্রাথমিক রায়কে কেন্দ্র করে পুরো দেশে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, রাজধানী শহরকে কার্যত দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং নাগরিক সমাজের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত করার চলমান তৎপরতা অগ্রহণযোগ্য। বছরের শেষদিকে একটি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিকদলগুলোর অংশগ্রহণেএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করাই এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। খালেদা জিয়ার মামলায় আজকের রায় যা’ই হোক, একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সমঝোতা ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির সম্ভাবনা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সকলের দৃষ্টি রাখা জরুরী। মামলার রায়ের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে পুলিশকে সহায়তার নামে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নির্বাচনের পরিবেশ বিঘিœত করবে এমন নির্দেশনা বা রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে সরকার ও বিরোধিদলকে বিরত থাকতে হবে। আমরা সকল পক্ষের ধৈর্য সহনশীলতা কামনা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন