বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহিলা

নিরাপদ প্রসব ও শিশুর স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষায় কমিউনিটি ক্লিনিক

প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শাহনাজ পলি

ছোট্ট শিশু সোয়াইদকে তার মা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দোলনার মত ঝোলানো একটা ব্যাগে বসিয়ে রাখলো। দেড় বছরের শিশুটি দোলনায় বসে ৩ড়ে নেড়ে খেলছে। অন্য একজন পাশ্বে দাঁড়িয়ে কিছু নোট করছে। এ দৃশ্য গত ডিসেম্বর মাসের শেষে সরেজমিন মনোহরপুর কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে শিশুটির ওজন নিতে দেখা গেল। সুনামগঞ্জ সদরের কুরবান্নগর ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন (সিএইচসিপি) সফিনা বেগম। সদর হাসপাতাল থেকে ৩ মাসের ট্রেনিং নিয়ে ২০১১ সাল থেকে কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে সেবা করছেন তিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সমন্বয়ে গ্রামীণ পরিবেশে ৬ হাজার নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য, জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং পুষ্টি সম্পর্কে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গড়ে প্রতিদিন ৪০-৪৫ জন রোগী সেবা নিতে আসে। এই এলাকার শিশু এবং নারীদের সাধারণ চিকিৎসা, মাতৃস্বাস্থ্য এবং নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্যসেবা দেয়ায় সফিনা বেগমের কাজ। মনোহরপুর ইউনিয়নে গর্ভবতী মায়েদের ১০০টি আয়রন ট্যাবলেট সম্পূর্ণভাবে সেবন করতে এবং তাদের অন্তত ৪ বার নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। শিশুদের ইপিআই টিকাও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেয়া হয় বলে জানালেন স্বাস্থ্যকর্মী সফিনা।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে ৩০ লক্ষ আয়রন ট্যাবলেট এবং শিশুদের উচ্চতা এবং ওজন সাপার যন্ত্র সরবরাহ করেছে ইউনিসেফ। এ প্রক্রিয়ায় ৮২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিককে ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় জনগণের সাথে সম্পৃক্তকরণ এবং স্থানীয় জনগণের সম্পদের সংস্থান করার ক্ষেত্রে ইউনিসেফ সরকারকে সক্রিয় সহযোগিতা করে আসছে। এর ফলে মনোহরপুর ইউনিয়নের শিশুরা এখন অন্যান্য এলাকার শিশুদের চেয়ে উন্নতর সেবার আওতায় এসেছে। আর এই সব কিছুই সম্ভব হয়েছে এলাকার চেয়ারম্যান এবং পরিষদ সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।
মনোহরপুর এলাকায় অপুষ্টি শিশু এবং গর্ভবতী নারীর সংখ্যা বেশি বলে জানালেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. গৌতম রায়। তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবার মান উন্নয়নে গত এক বছরে মাতৃ মৃত্যু বা শিশু মৃত্যুর মত কোন ঘটনা ঘটেনি।
কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এটি প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ, সংক্রামক এবং অসংক্রামক রোগের পরামর্শ ও চিকিৎসা মানুষের দারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এক কথায় কমিউনিটি ক্লিনিক হচ্ছে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রবিন্দু। কমিউনিটি ক্লিনিক এর কারণেই দুর্গম এলাকার অবহেলিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি কমিউনিটি গ্রুপ ও তিনটি সহযোগী কমিউনিটি গ্রুপের সমন্বয়ে তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় যা জনগণের ক্ষমতায়ন ও স্থানীয় সম্পদ আহরণে সহায়তা করে।
সহস্রাব্দ উন্নায়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসে বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্যাকেজ’-এর মাধ্যমে সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের লক্ষে তৃণমূল পর্যায়ে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন