শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহিলা

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারীরাও

একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগকারীর গল্প

মোঃ মাহমুদুল হাসান | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লিঙ্গ সমতার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। বিশ্বব্যাপী নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের কাজের প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে পালিত হয় এই দিনটি।

১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা আর কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নামেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। পরে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন।
এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। পরে ১৯১৪ সাল থেকে বেশকয়েকটি দেশে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৭৫ সালে এসে ৮ মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। সেই থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য- “choose to challenge” এবং বাংলাদেশে এবছর নারী দিবসের শ্লোগান হিসেবে ”নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ” বাক্যটিকে নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রতিবছরই এই দিবসটিকে কেন্দ্র করে কোন না কোন নারীর সাফল্যের নেপথ্যে থাকা কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। তারই ধারাবাহিকতায় একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসা নারীর জীবনের চরাই উৎরাইয়ের বর্ণনা উপস্থাপন করছি।

ডাক নাম চাঁদনী। পুরো নাম ড. সানজিদা আহমেদ খান চাঁদনী। একজন সফল উদ্যোক্তা ও সামাজিক উন্নয়নে আত্মনিয়োগকারী পরিশ্রমী নারী। নামে গুণে গুণান্বিত এই নারী উদ্যোক্তার জীবন ছিল বরাবরই ব্যতিক্রম। অন্যান্য আটদশ জন নারীর মত সহজ ও স্বাভাবিক ছিলনা তাঁর জীবনযাত্রা। বাল্যবেলা থেকেই তিনি প্রতিবাদি ও সৃজনশীল মনভাবাপন্ন ছিলেন। বৈরি পরিবেশে থেকেও তাঁর সাফলতা অর্জনের পেছনের গল্পটা সবার অজানা। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। রাজধানীর বাড্ডা আলাতুন্নেছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, শহীদ বীর উত্তম লে: আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্যেও পারিবারিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সঠিকভাবে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে না পারায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়নি, পরবর্তিতে গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন তিনি। এছাড়াও ২০১৮ সালে বিএড সম্পন্ন করে এখন এলএলবি’তে অধ্যায়নরত রয়েছেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে মানব শিক্ষা রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, ভারত থেকে মানব শিক্ষা বারিধি বিষয়ে পিএইচডি করেন। যেটি তাঁর বাল্যবেলার প্রবল ইচ্ছের বর্হিঃপ্রকাশ। আর এই শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার মূল অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর বাবা শফিক আহমেদ খান ও মা ফেরদৌসি আহমেদ খান। ভাইশূন্য দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। নিজের দক্ষতা বিচক্ষন কর্মপন্থা, দূরদর্শি পরিকল্পনার মাধ্যমে পিতা-মাতার পুত্র শূণ্যতার অভাব পূর্ণরূপে ভুলিয়ে রেখেছেন।
ইতিমধ্যে চাঁদনী বাড্ডা গার্লস হাই স্কুল এন্ড টেকনিক্যাল কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষক হিসেবে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর মধ্যে অন্যতম ছিল একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা, মানুষকে বেকারত্বের গ্লানি থেকে মুক্তি দিয়ে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা ও সুবিধাবঞ্চিত অসহায়, দুস্থ জনতার পাশে দাড়ানো। সে লক্ষ্যে তিনি ছোট ছোট কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেকে জড়ানের মাধ্যমে আত্ম প্রকাশ করেন। যেমন ঢাকার ফার্মগেট এলাকার স্বনামধন্য ইন্সটিটিউট অব ফরেন ল্যাংগুয়েজ (আই.এফ.এল) এর হেড অব ডিরেক্টর এর দায়িত্ব পালন , আল-মানামা ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরিজমের এ্যাডভাইজর এবং বাড্ডা শিশু কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবেও সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলছেন। এছাড়াও বিশ্ব মানবাধিকার ভিশন (ডাব্লিউ এইচ আর ভি) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। অন্যদিকে ২০১৭ সালে বাবা শফিক আহমেদ খানের সাথে নিজস্ব ডেভলপার প্রতিষ্ঠান “আর্ট ডোমেইন প্রোপার্টিজ” গড়ে তোলেন। বর্তমানে তাঁর মাধ্যমে প্রয়া দেড় শতাধীক বেকার মানুষ কর্মসংস্থান লাভ করেছে। এপর্যন্ত বিশের অধিক গরিব অসহায় মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন করেন এই মহিয়সী নারী। সবমসয়ই হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাড়িয়ে আত্মতৃপ্তি পেতেন। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বেশ কয়েকটি সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং দুবাই এক্সপো ২০২০ পরিদর্শন করতে আগামী ১০ মার্চ এক সপ্তাহের জন্য দুবাই ছফরে যাচ্ছেন তিনি। উদ্দেশ্য বর্হিঃবিশ্বে কিভাবে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে তা সম্পর্কে ধারনা নেয়া এবং বাংলাদেশের নারীদের সে অনুযায়ী স্বনির্ভর করে গড়ে তুলে বৈষম্য দূরীকরণে মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
ব্যবসা, পড়াশোনা ও সাংসারিক দায়িত্বের পাশাপাশি অন্যদের ব্যবসায় সহযোগিতা করা যেন তাঁর অভ্যেসে পরিনত হয়েছে। করোনালকডাউনে শত শত ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাকে বিনা মূল্যে সহায়তা করে সাবলম্বি হওয়ার ব্যাপারে সর্বাত্বক সহযোগিতা করেন। নারীর ক্ষমতায়নে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া ড. সানজিদা আহমেদ খান চাঁদনী এখন বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সফল উদ্যোক্তা। বয়সে নবীণ হলেও তিনি দেশ ও সমাজের মানুষের কাছে অনুকরণীয় ও অনুসরনীয়। পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে ড. সানজিদা আহমেদ খান চাঁদনী মত নারীর খুবই অভাব। যেদিন এ অভাব পূর্ণতা লাভ করবে সেদিন থাকবে না নারী-পূরুষের মাঝে বৈষম্য, বিলুপ্ত হবে ধর্ষণ নামক ঘৃণিত ও জঘন্য কর্ম, উন্নত বিশ্বের নারীদের ন্যায় বাংলার নারীরাও সমান তালে এগিয়ে যাবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নে সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পথচলা হবে সুপ্রসন্ন। তাই আসুন প্রত্যেকটি পরিবারে এমন একজন ড. সানজিদা আহমেদ খান চাঁদনী তৈরির ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতার মাধ্যমে সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্ম নিয়োগ করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন