শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

বিএনপিকে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মনে প্রশান্তি থাকলে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঠান্ডা মাথায় নেয়া যায় এবং তা কার্যকর করতে সমস্যা হয় না। মনে অশান্তি ও অস্থিরতা কাজ করলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এ সময়টিতে যারা ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে মাথা ঠান্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়, তারা সাফল্যের মুখ দেখে। বিপদে ধৈর্য্য ধরার ক্ষেত্রে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুষ্পষ্টভাবে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছি। তিনি বলেছেন, আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ দাও (সূরা বাকারাহ, আয়াত-১৫৫, পারা-২, রুকু-১৯)। অর্থাৎ বিপদ-আপদ ধৈর্য সহকারে মোকাবেলা করে সঠিক সিদ্ধান্ত ও কর্মপন্থা স্থির করলে, সাফল্য অনিবার্য। এখানে আল্লাহর ঘোষণার কথা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, রাজনীতিতে বিশেষ করে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে এক চরম সংকট ও ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে হচ্ছে। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার মধ্য দিয়ে দলটির ওপর মহাবিপদ নেমে এসেছে। সহসা এ বিপদ দূর হবে, এমন মনে করার কারণ নেই। ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে সকল রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে, ঠান্ডা মাথায় সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দলটিকে বিপদে ফেলার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। চলমান এবং অনাগত বিপদ মোকাবেলায় বিএনপির হাইকমান্ডসহ দলের নেতাকর্মীরা যদি ধৈর্য সহকারে সঠিক ও পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়, তবে তাদের সাফল্য আসবেই। এক্ষেত্রে তাদের ধৈর্য ও স্থৈর্য্যরে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। প্রথমত দলের ঐক্য ধরে রেখে আইনী লড়াই এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার আন্দোলনও করতে হবে। দুটি কাজই অত্যন্ত কঠিন। এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ক্ষমতাসীন দল যে তাদের কোনঠাসা ও এলোমেলো করে দেয়ার জন্য ধারাবাহিক কূটচাল দেবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। তার তূণ থেকে একের পর এক তীর ছোঁড়া হবে। এক্ষেত্রে বিএনপির নেতাকর্মীদের একটাই উপায়, ধৈর্যসহকারে এই তীরের আঘাত থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করা। একদিকে তীরে বিদ্ধ হওয়া চলবে না, অন্যদিকে আঘাত পেয়ে আহত হওয়াও চলবে না। দৃঢ়চেতা হয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত উপায়ে তীরের আঘাত থেকে বেঁচে থাকার কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তীর ছোঁড়া হয়েছে দেখে ভড়কে গেলে বা অস্থির হয়ে পড়লে চলবে না।
দুই.
এটা এখন স্পষ্ট, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে জেলে রাখার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনার ফসল। বিগত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের করা ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা যেভাবেই হোক প্রত্যাহার করা হলেও বেগম খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। তার এই মামলা প্রত্যাহার না করার মধ্যেই ক্ষমতাসীন দলের সুদীর্ঘ পরিকল্পনা লুকায়িত ছিল। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে এ সরকারের সময় করা অন্য যেসব মামলা রয়েছে (৩৬টির মতো), সরকারও জানে এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে এবং এগুলোর বিচার প্রক্রিয়া যেমন দীর্ঘ হবে, তেমনি সাজা দেয়ার বিষয়টিও কঠিন হবে। যদি সাজা হয়ও, তবে তা জনগণ বুঝবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দুর্নীতির মামলাটি যদি শেষ করা যায় ও সাজা নিশ্চিত করা যায়, তবে বলতে পারবে এটি রাজনৈতিক মামলা নয় বরং দুর্নীতির দায়ে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। বাস্তবেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যে তা ফুটে উঠেছে। এখন তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করা। তবে ক্ষমতাসীন দল যতই বলুক না কেন, সাধারণ মানুষের মনে এ ধারণাই বেশি কাজ করছে যে, এ মামলার সাথে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসারও মিশেল রয়েছে। কারণ ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুই নেত্রীকে মাইনাস করার জন্য দুজনের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সাধারণ মানুষের কাছেও পরিষ্কার ছিল এসব মামলা করা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্য। এ অবস্থায় একজনের মামলা দ্রæত প্রত্যাহার করা হলেও আরেকজনের মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। এতেই সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে বেগম খালেদা জিয়াকে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের দায়ের করা মামলায় যে সাজা দেয়া হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তাছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার মামলাটি শেষের দিকে এসে এতই দ্রæত গতি লাভ করে যে, তাকে সপ্তাহে গড়ে তিন-চার দিন আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে, যা আইনজ্ঞদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের বছরে এসে এ মামলা দ্রæত শেষ করার নিগূঢ় অর্থ হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা এবং বিএনপিকে ছত্রভঙ্গ করা। এখন এটাও প্রতীয়মাণ হচ্ছে, আইনি লড়াই চালিয়ে এবং আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে খালেদা জিয়া সহসা জেলমুক্ত হবেন, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তার বিরুদ্ধে করা সব মামলাই একের পর এক উঠতে থাকবে। সেগুলো গতিও পাবে। ইতোমধ্যে ১৪টি মামলা বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, এসব মামলার একটির জামিন হলে আরেকটিতে তিনি আটকা পড়বেন। যদি জামিনে বের হয়েও আসেন, পরবর্তীতে এসব মামলার জামিন-অজামিনের বিষয়গুলো তার পিছু ছাড়বে না। এমনকি শর্তের বেড়াজালে পড়ে তার স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও সীমিত হয়ে পড়তে পারে। এর কারণ, সরকার যেহেতু একবার তাকে জেলে নিতে পেরেছে, পরবর্তীতেও তাকে জেলে নিতে কোনো দ্বিধা বোধ করবে না। উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দলীয় প্রধানের একচ্ছত্র আধিপত্য। দলের প্রাণ ভোমরা হিসেবে দলীয় প্রধানকেই বোঝায়। তাকে কেন্দ্র করেই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আবেগ-উচ্ছ¡াস কাজ করে। বিএনপি বলতে যেমন খালেদা জিয়াকে বোঝায়, তেমনি আওয়ামী লীগ বলতে শেখ হাসিনাকে বোঝায়। এর বাইরে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা চিন্তা করতে পারেন না। তাদের কারো একজনের অনুপস্থিতি দলের নেতাকর্মীদের হতাশ ও হতদ্যোম করে ফেলে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় এ চিত্র দেখা গেছে। কাজেই বিএনপির প্রধান নেত্রীর অনুপস্থিতি দলের নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই মেনে নেবে না, এটাই স্বাভাবিক। আবার তারা এমন এক রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে যে, না পারছে সইতে, না পারছে কইতে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ধৈর্য ধরে উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প নেই। যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক সময় কৌশল পরিবর্তন করে পিছিয়ে আসতে হয়। তার মানে এই নয়, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া। বাঘও শিকার ধরতে এক পা পিছিয়ে ঝাঁপ দেয়। এটাকে বলে সঠিকভাবে শিকার করার এক ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি। পাল্টা আক্রমণের জন্য পিছিয়ে আসার মাঝের এই সময়টিকেই ধৈর্য্য বলে। যদি বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে পিছিয়ে না এসে এবং মাথা গরম করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া হয়, তাতে ক্ষয়-ক্ষতি যেমন বেশি হয়, তেমনি পরাজয়েরও আশঙ্কা থাকে। বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের দিন ক্ষমতাসীন দল ভেবেছিল, বিএনপি মাথা গরম করে ব্যাপক ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াও শুরু করবে। এজন্য সরকার বেশ বড় ধরনের ফাঁদও পেতেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদেরও প্রস্তুত রেখেছিল। বিএনপি কোনো ধরনের সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখালেই একসঙ্গে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ত। বিএনপি তা না করাতে এই পাতা ফাঁদে ফেলার কৌশল ভেস্তে গেছে। বিএনপি যে এই কৌশলে পা দেয়নি, এটাই তার ধৈর্য। মনে রাখতে হবে, বেগম জিয়া কারাগারে থাকা মানে এই নয় যে, তিনি নেই। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন অবলোকন এবং তার প্রতি যে আবেগ তা বাঁচিয়ে রেখেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে চলতে হবে। খালেদা জিয়ার জেল জীবনের মধ্যেই অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে হতে হবে। তারা যদি এই মহাবিপদে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধৈর্য ধারণ করে কঠোর মনোবলের মাধ্যমে সঠিক কর্মপন্থা অবলম্বন করে, তবে বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে তাদের মাঝে ফিরে আসবেনই।
তিন.
বিএনপির ধৈর্যশীল ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি যে ক্ষমতাসীন দলের জন্য অসহনীয় ও পীড়াদায়ক হয়ে উঠেছে, তা তার আচরণ ও কথাবার্তায় প্রকাশিত হচ্ছে। বিএনপির এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি কতদিন সহ্য করবে, তাই এখন দেখার বিষয়। সরকার যদি অধৈর্য হয়ে বিভিন্ন অপকৌশলের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি পালন বাধাগ্রস্ত করে এবং মাঠে নামতে না দেয়, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ক্ষমতায় যারা থাকে, তারা বরাবরই সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে। স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক যে কোনো পরিস্থিতি দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠে। সাধারণত স্বৈরাচারি শাসন ব্যবস্থায় এমনটি দেখা যায়। তবে সরকার যদি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত না হয় এবং গণতন্ত্রের নামে কর্তত্ববাদী হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে জনগণের প্রতি তার তেমন কোনো দায় থাকে না এবং জনগণের হয়ে যেসব বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি কথা বলতে চায় তাদের মুখ বন্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। জনগণের ওপর তার এই কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য প্রথমেই রাষ্ট্রের প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসে। সুযোগ-সুবিধা পেয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তার সমর্থক হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে যে একটি কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার রয়েছে, তা ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা বলেছে। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এক কঠিন সময় পার করছে। বিশেষ করে বিএনপির ওপর দিয়ে ক্ষমতাসীন দল স্টিম রোলার চালিয়ে দিয়েছে। সরবে-নীরবে দলটির নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা দিয়ে পর্যুদস্ত করে চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা করা হয়েছে। এই মামলার বেড়াজালে আটকে এবং নতুন নতুন মামলায় তাদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ থেকে দলটির চেয়ারপারসনও নিস্তার পাননি। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ক্ষমতাসীন দল তার প্রধান প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে তার ক্ষমতাকে আরও নিরঙ্কুশ করতে চাচ্ছে। তার এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিএনপির নেতাকর্মীতো বটেই সাধারণ মানুষও বোঝে। বিএনপির শীর্ষ নেত্রীর জেল হওয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দল বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। যেন তার বুকের উপর থেকে এক বিশাল পাথর নেমে গেছে। পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে তার এই নির্ভার ও স্বস্তির খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মাণ হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল তার পথের কাঁটা বা বাধা দূর করে পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই করছে এবং করবে। যদি অদূর ভবিষ্যতে এমন দেখা যায়, বিএনপির অন্যান্য শীর্ষ নেতাকেও বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করে জেলে নেয়া হয়েছে, তবে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না। অর্থাৎ আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করে দিকভ্রান্ত করে দেয়ার সব ধরনের প্রচেষ্টা যে ক্ষমতাসীন দল চালাবে, তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যতই দিন যাবে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যে অভিমত প্রকাশ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকার যতই নিপীড়ক হোক না কেন, কখনো না কখনো তার ভুল হবেই। এই ভুল থেকেই বিরোধী দলের রাজনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে। একটি স্ফুলিঙ্গ থেকেই বিশাল দাবদাহ সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এমন অসংখ্য নজির পৃথিবীর ইতিহাসে রয়েছে। ’৮৯ সালে চীনের বেইজিংয়ে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার যে বিশাল গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছিল, তা অত্যন্ত ছোট্ট একটি বার্তার মাধ্যমে ছাত্ররা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে জনগণকে একতাবদ্ধ করার আহŸান করেছিল। এ আহŸানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ তিয়েনআনমেন স্কয়ারে সমবেত হয়েছিল। যদিও এ আন্দোলন সে সময়ের সরকার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে হত্যা ও নির্যাতন চালিয়ে দমন করেছিল। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী চীনের ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে। এতে চীন বেশ চাপে পড়ে। ফলস্বরূপ ছাত্রদের সাথে সংলাপে বসতে এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্ব বদলাতে বাধ্য হয়েছিল। চরম বিরূপ পরিস্থিতিতে চীন সরকারের প্রতি ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন ইতিহাস হয়ে আছে। কাজেই বিএনপির নেতাকর্মীদেরও সংকটকালে ঐক্যবদ্ধ থেকে ক্রান্তিকাল মোকাবেলা করতে হবে। সরকারের কৌশল থেকে এখন এটা স্পষ্ট যে, সরকারের অন্যতম লক্ষ্য জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করা। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। ক্ষমতাসীন দল ভাল করেই জানে, খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারলে, তাদের পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার পথ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া তাদের সামনে পর্বত হয়ে আছেন। বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ক্ষমতাসীন দলের এই কৌশল অনুধাবন করতে হবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করে জনসাধারণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। যদি সঠিক কর্মকৌশলের মাধ্যমে জনমত সৃষ্টি ও আন্দোলন করতে পারে, তবে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার বিষয়টি কঠিন হবে না। তাদের মনেপ্রাণে ধারণা করতে হবে, খালেদা জিয়াকে জেলে দেয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকহারে ক্ষোভ, অসন্তোষ ও সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি তার জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তার এই জনপ্রিয়তা দলেরও জনপ্রিয়তা। কাজেই তাকে ছাড়া বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ক্ষমতাসীন দল তাই চাইছে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। কারণ তারাই দলের মূল ভিত্তি। ভিত্তি দৃঢ় হলে যতই ঝড় বয়ে যাক মূল কাঠামো ঠিক থাকে।
চার.
সরকার যতই বলুক বেগম খালেদা জিয়ার মামলার ক্ষেত্রে তার কোনো হাত নেই, এ কথা একজন সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করে না। বরং এ ধারণাই ব্যাপকসংখ্যক মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল, নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে দূরে রাখতে মামলার ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। সাধারণ মানুষের এ ধারণাকে অটুট রাখতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিরলস কাজ করতে হবে, তাদের কাছে যেতে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এজন্য ধৈর্য ও সহনশীলতার বিকল্প নেই। হতোদ্যম হলে চলবে না। রাজনীতিতে উত্থান-পতন নতুন কিছু নয়। ভারতের কংগ্রেসের দিকে যদি তাকানো যায়, তবে দেখা যাবে, দলটি বিগত নির্বাচনে শোচনীয় পরায়জয় বরণ করেছে। এ বিপর্যয় কাটিয়ে দলটি এখন বিভিন্ন রাজ্যে ভালো ফলাফল করা শুরু করেছে। এর কারণ দলটির নেতাকর্মীরা নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন আদায় করে নিচ্ছে। সরকারের নানা ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে জনগণকে বোঝাচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীদেরও এ কাজটি করতে হবে। সরকারের অসংখ্য ব্যর্থতা এবং দুর্নীতির বিষয় ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে পরিকল্পিত উপায়ে তুলে ধরতে পারলে তাদের সফল হওয়ার পথ সুগম হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
সাব্বির ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:৪৩ এএম says : 0
খুব সুন্দর এবং দিক নির্দেশনামুলক একটি লেখা।
Total Reply(0)
Helal Masud ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:২২ পিএম says : 1
অনেক সুন্দর, দামি এবং যুক্তিবাদী পরামর্শ
Total Reply(0)
no name ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৯:২৫ পিএম says : 0
Apnara paren bote. One hand you are against corruption on the other hand you are trying to patronize corruption
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন