এহসান আব্দুল্লাহ : শেষ বিদায়ের সুর যেন বেজে উঠেছে, অমর একুশে গ্রন্থমেলার পর্দা নামছে আগামীকাল। মেলার এই সময়টাতে এসে খালি হাতে ফিরছেন না কেউই। মেলায় এসে ঘুরে ফিরে সময় নষ্ট করার যেন কোন মানে হয়না পাঠকদের কাছে। তাই সময় বাচাতে অনেক পাঠকই তৈরী কারা বইয়ের লিস্ট নিয়ে হাজির হচ্ছেন পছন্দের প্রকাশনীর স্টলে।
গতকালের বইমেলায় এমন চিত্রই ছিল সর্বত্র। বেশকয়েকটি প্রকাশনীর স্টলে ঢু মেরে দেখা যায় অধিকাংশ পাঠকই হাতের তালিকা ধরে বিক্রয়কর্মীদের কাছে পছন্দের বই খুজছেন। অনেক প্রকাশনীতেই গেল কয়েকদিনের বেচাকেনার ধাক্কায় শেষ হয়ে যায় অধিকাংশ বইয়ের সংস্করণ। নির্দিষ্ট প্রকাশনীতে পছন্দের বই না পেলে অন্য কোথাও পাওয়া যাবে কিনা কিংবা মেলার পর কিভাবে পেতে পারেন তা জানতে চাইছেন। অনেকে আবার মেলার পরে প্রকাশনীগুলো তাদের উল্লেখিত বইগুলোর পুনঃসংস্করণ কবে ছাপাবে সেটা জানতে চাইছেন।
শেষ সময়ে এসে মেলার বেচাকেনাও বেড়েছে ঢের বেশি। গতকালের মেলায় প্রায় প্রত্যেকেই খালি হাতে প্রবেশ করে দুহাত ভরে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে গেছেন মেলা প্রাঙ্গন থেকে। আর পাঠকদের এমন উচ্ছাস ও আগ্রহে তাল দিচ্ছিলেন বিক্রেতারাও। স্টলের সামনে কেউ এসে দাড়ানো মাত্রই বিক্রয়কর্মীরা হাতে তুলে দিচ্ছিলেন নুতন প্রকাশিত বইগুলো এবং সেই সাথে বর্ণনা করছিলেন বইয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিনা রহমান বলেন, এখন বই না কিনলে তো আর কেনার সুযোগ নেই। আবার অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছরের জন্য। আর আমার জন্য রাজশাহী থেকে এসে যে কোন সময় বই কেনার সুযোগও নেই ব্যস্ততার কারনে। তাই শেষ সময়ে এসে যতটুকু সম্ভব বই কেনার চেষ্টা করছি।
মেলায় গতকাল নতুন বই এসেছে ১১৭টি।
এবারের বইমেলায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিনের লেখা “বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ” শিরোনামে গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে- দি ইউনিভার্সেল একাডেমি । আধুনিক গণতন্ত্রের বিবর্তনে প্রাচ্য-প্রতীচ্যের হাজার বছরের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বির্বতন তুলে ধরা হয়েছে “বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ” প্রন্থটিতে। বইটি পাওয়া যাবে- দি ইউনিভার্সেল একাডেমির ৩৯৭-৩৯৭-৩৯৮-৩৯৯ নং স্টলে।
এছাড়াও মেলায় মুক্তাচিন্তা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ড. আনিস আহমেদের সায়ন্স ফিকশন কিসিকিসি সাড়া ফেলেছে কিশোর পাঠকদের কাছে। বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে মানুষের পৃৃথিবী পর্যবেক্ষণে আসা একদল ভীনগ্রহী প্রাণীর মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার গল্প এবং সমাজের অসৎ শ্রেণীর বিরুদ্ধে এক নীতিবান তরুণীর ভালবাসার শক্তিকে সেই প্রাণিদের করা সহযোগীতার বর্ণনা।
গতকাল বিকেল ৪:০০টায় মেলার মূল মঞ্চে ছিল বিজয় সরকার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহিদা খাতুন। প্রাবন্ধিক বলেন, কবিয়াল বিজয় সরকার শৈশব-কৈশোর থেকেই সংস্কৃতি অনুরাগী ছিলেন। বিজয় সরকার কবিগানের নিজস্ব একটি কাঠামো সৃষ্টি করেন, আবার কবিয়াল হয়েও বাংলা গান ও কবিতার ভুবনে স্বতন্ত্র জায়গা তৈরি করেছেন। বিভিন্ন ধর্ম ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে সমন্বয়, সম্প্রীতি, সহাবস্থান, সহমর্মিতা বিজয় সরকারের গানে উচ্চারিত হয়েছে। ভিন্ন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, সহানুভূতিশীল হওয়া, সম্মান প্রদর্শন করা, সর্বোপরি সব ধর্মের মর্মবাণী উপলব্ধি করা- সংগীতের মাধ্যমে এসব তিনি মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন