এ, কে, এম, ফজলুর রহমান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
২৬। ইরশাদ হয়েছে : মূসা বলল হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গকে পার্থিব জীবনে শোভা ও সম্পদ দান করেছ, যদ্বারা হে আমাদের প্রতিপালক! তারা মানুষকে তোমার পথ হতে ভ্রষ্ট করে...। (সূরা ইউনুস : আয়াত : ৮৮, রুকু-৯)।
২৭। ইরশাদ হয়েছে : তারা যখন বিশ্বাস করল, তখন আমি তাদের পার্থিব জীবনে হীনতাজনক শাস্তি হতে বিমুক্ত করলাম এবং কিছু কালের জন্য জীবন উপভোগ করতে দিলাম। (সূরা ইউনুস : আয়াত ৯৮, রুকু-১০)।
২৮। ইরশাদ হয়েছে : যদি কেউ পার্থিব জীবন ও উহার শোভা কামনা করে তবে দুনিয়াতে আমি তাদের কর্মের পূর্ণ ফল দান করি। (সূরা হুদ : আয়াত ১৫, রুকু-২)।
২৯। ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা তার জীবনোপকরণ বর্ধিত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন, কিন্তু তারা পার্থিব জীবনে উল্লিখিত, অথচ দুনিয়ার জীবন তো পরকালীন জীবনের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র। (সূরা রা’দ : আয়াত ২৬, রুকু-৩)। এই আয়াতে কারিমায় দুনিয়ার জীবন এবং পরকালীন জীবনের মূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রকৃতই দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং পরজীবন চিরস্থায়ী। আর লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, ওই আয়াতে ‘হায়াতুদ্্ দুন্্ইয়া’ শব্দদ্বয় দু’বার উল্লেখ করা হয়েছে।
৩০। ইরশাদ হচ্ছে : তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে আছে শাস্তি এবং আখেরাতের (পরলোকের) শাস্তি তো আরো কঠোর। (সূরা রা’দ : আয়াত ৩৪, রুকু-৫)। এই আয়াতে দুনিয়ার জীবন এবং আখেরাতের জীবনের কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
৩১। ইরশাদ হয়েছে : যারা দুনিয়ার জীবনকে পরকালীন জীবনের ওপর প্রাধান্য দেয়, মানুষকে আল্লাহর পথ হতে নিবৃত্ত করে এবং আল্লাহর পথ বক্র করতে চায় তারাই তো ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছে। (সূরা ইবরাহীম : আয়াত ৩, রুকু-১)। এই আয়াতে কারিমায় দুনিয়ার জীবন এবং পরকালীন জীবনের কথা সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। দুনিয়ার জীবনকেই কেবলমাত্র জীবন বলে আখ্যায়িত করা যায় না। কেননা, মানব জীবনের সূচনা হয়েছে নূরানী জীবনের মাধ্যমে। তারপর নূরানী-জীবনের উত্তরণ ঘটেছে রূহানী-জীবনে। আলমে আরওয়াহ্তে কতকাল অতিবাহিত হয়েছে তা দুনিয়ার জীবনে এসে সঠিকভাবে বলা যায় না। দুনিয়ার জীবনের পর শুরু হয় আখেরাতের জীবনের। যার প্রথম ধাপ হচ্ছে কবর বা বরযখের জীবন। হাশরের মাঠে উত্থানের পর শুরু হবে এর দ্বিতীয় ধাপ। উহার শেষ কোথায় তা মানুষের অজানা।
৩২। ইরশাদ হয়েছে : যারা শাশ্বত বাণীতে (লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) বিশ্বাসী তাদের দুনিয়ার জীবনে এবং পরজীবনে আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত রাখবেন...। (সূরা ইবরাহীম : আয়াত ২৭, রুকু-৪)। এই আয়াতেও ইহজীবন ও পরজীবনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
৩৩। ইরশাদ হয়েছে : মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে, তাকে আমি অবশ্যই আনন্দময় জীবন দান করব। (সূরা নাহল : আয়াত ৯৭, রুকু-১৩)। এই আয়াতে আনন্দময় জীবন বলতে বিশেষ করে পরকালীন জীবনের কথাই ব্যক্ত করা হয়েছে।
৩৪। ইরশাদ হয়েছে : তাহলে অবশ্যই তোমাকে ইহজীবনে দ্বিগুণ ও পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তি আশ্বাদন করাতাম। (সূরা বাণী-ই¯্রায়িল : আয়াত ৭৫, রুকু-৮)। এই আয়াতে দুনিয়ার জীবন এবং পরকালীন জীবনের শাস্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
৩৫। ইরশাদ হয়েছে : এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের (যারা আল্লাহর রেজামন্দি কামনায় সকাল সন্ধ্যায় আহ্বান জানায়) হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। (সূরা কাহ্্ক : আয়াত ২৮, রুকু-৪)।
৩৬। ইরশাদ হয়েছে : তাদের নিকট পার্থিব জীবনের উপমা পেশ কর : ইহা পানির ন্যায় যা আমি আকাশ হতে বর্ষণ করি, যা দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হয়, তারপর উহা বিশুদ্ধ হয়ে এমন চূর্ণবিচূর্ণ হয় যে, বাতাস একে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। (সূরা কাহ্্ফ : আয়াত ৪৫, রুকু-৬)।
৩৭। ইরশাদ হয়েছে : ধনেশ্চর্ণ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা মাত্র। (সূরা কাহ্্ক : আয়াত ৪৬, রুকু-৬)।
৩৮। ইরশাদ হয়েছে : এরাই তারা পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা প- হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে। (সূরা কাহ্্ক : আয়াত ১০৪, রুকু-১২)।
৩৯। ইরশাদ হয়েছে : (জাদুকরগণ ঈমান আনয়নের পর ফেরাউনকে লক্ষ্য করে বললো) সুতরাং তুমি তাই কর যা তুমি করতে চাও, তুমি তো কেবল এই পার্থিব জীবনের ওপর কর্তৃত্ব করতে পার। (সূরা ত্বাহা : আয়াত ৭২, রুকু-৩)।
৪০। ইরশাদ হয়েছে : মূসা বলল, (হে সামিরী) দূর হও, তোমার জন্য তোমার জীবদ্দশায় ইহাই রইল যে, তুমি বলবে আমি অস্পৃষ্ট এবং তোমার জন্য রইল এক নির্দিষ্টকাল, তোমার বেলায় যার ব্যতিক্রম হবে না। (সূরা ত্বাহা : আয়াত ৯৭, রুকু-৫)।
৪১। ইরশাদ হয়েছে : তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় উহার প্রতি কখনো প্রসারিত করো না, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি। (সূরা ত্বাহা : আয়াত ১৩১, রুকু-৮)।
৪২। ইরশাদ হয়েছে : তার সম্প্রদায়ের (আদ সম্প্রদায়ের) প্রধানগণ যারা কুফুরি করেছিল ও আখিরাতের সাক্ষাৎকারকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদের আমি দিয়েছিলাম পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগসম্ভার, তারা বলেছিল, এত তোমাদের মতো একজন মানুষই, তোমরা যা আহার কর সে তো তাই আহার করে এবং তোমরা যা পান কর সেও তাই পান করে। (সূরা মুমিনুন : আয়াত ৩৩, রুকু-৩)।
৪৩। ইরশাদ হয়েছে : তোমাদের দাসীগণকে সততা রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদের ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করো না। (সূরা নূর : আয়াত ৩৩, রুকু-৪)।
৪৪। ইরশাদ হয়েছে : এবং তারা (ভ্রান্ত-উপাস্যগণ) নিজেদের অপকার অথবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না এবং জীবন, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের ওপরও কোনো ক্ষমতা রাখে না। (সূরা ফুরকান : আয়াত-৩, রুকু-১)।
৪৫। ইরশাদ হয়েছে : আর তোমাদের যা কিছু দেয়া হয়েছে তা তো পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা এবং যা আল্লাহর নিকট আছে, তা উত্তম এবং স্থায়ী। (সূরা কাসাস : আয়াত ৬০, রুকু-৬)।
৪৬। ইরশাদ হয়েছে : যাকে আমি উত্তম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যা সে পাবে, সে কি ওই ব্যক্তির সমান হতে পারে? যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগসম্ভার দিয়েছি, যাকে পরে কিয়ামতের দিন হাজির করা হবে? (সূরা কাসাস : আয়াত ৬১, রুকু-৭)।
৪৭। ইরশাদ হয়েছে : যারা পার্থিব জীবন কামনা করত, তারা বলল, আহা! কারুণকে দেয়া হয়েছে আমাদের যদি তা দেয়া হতো! (সূরা কাসাস : আয়াত ৭৯, রুকু-৮)।
৪৮। ইরশাদ হয়েছে : ইবরাহীম বলল, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে মূর্তিগুলোকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছ, পার্থিব জীবনে তোমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বের খাতিরে, পরে কিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে। (সূরা আন্্কাবুত : আয়াত ২৫, রুকু-৩)।
৪৯। ইরশাদ হয়েছে : এই দুনিয়ার জীবন তো ক্রীড়া কৌতুক ছাড়া কিছুই নয়। পারলৌকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত! (সূরা আনকাবুত : আয়াত ৬৪, রুকু-৭)। এই আয়াতে কারিমায় দুনিয়ার জীবন এবং পারলৌকিক জীবনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। আর স্পষ্টত এ কথাও বলে দেয়া হয়েছে যে, পারলৌকিক জীবনই হচ্ছে প্রকৃত জীবন, আসল জীবন। দুনিয়ার জীবনের ক্রীড়া কৌতুক, ভোগসম্ভার, মোহ-আকর্ষণ পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর কোনোই প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। তিনি দুনিয়ার জীবনের পথপরিক্রমার পর পারলৌকিক জীবনের প্রথম ধাপ কবরদেশে, আলমে বরযখে জীবিত অবস্থায়ই আছেন এবং হাশরের মাঠে উত্থান পর্যন্ত এ অবস্থায়ই থাকবেন। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না।
৫০। ইরশাদ হয়েছে : তারা পার্থিব জীবনের জাহের বা বাহ্যদিক সম্বন্ধে অবগত আর আখেরাত সম্পর্কে তারা প্রকৃতই গাফিল। (সূরা রূম : আয়াত ৭, রুকু-১)
৫১। ইরশাদ হয়েছে : সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদের কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চক যেন তোমাদের কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে। (সূরা লুকমান : আয়াত ৩৩, রুকু-৪)।
৫২। ইরশাদ হয়েছে : হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের বল, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও উহার ভূষণ কামনা কর, তবে এসো, আমি তোমাদের ভোগ-সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদেরকে বিদায় দেই। (সূরা আহযাব : আয়াত ২৮, রুকু-৪)।
৫৩। ইরশাদ হয়েছে : হে মানুষ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চক (শয়তান) যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের প্রবঞ্চিত না করে। (সূরা ফাতির : আয়াত ৫, রুকু-১)। (অসমাপ্ত)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন