প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশেষ করে সৌর শক্তিসহ অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানীর সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে বিশ্ব উদ্যোগ জোরদারের আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করছে। দিল্লির প্রেসিডেন্ট ভবন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক সোলার এলায়েন্স (আইএসএ) এর প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে গতকাল ভাষণদানকালে আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের সম্ভাবনাগুলো প্রায়ই উন্নয়নের লক্ষ্য দ্বারা চাপা পড়ে যায়। তবুও আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পরিবেশ রক্ষার কথা ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে অনেক দেশের মত বাংলাদেশও বাস্তবিকভাবে বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ এর প্রভাব মোকাবেলায় সর্বোচ্চ অবদান রাখতে চেষ্টা করছে। আবদুল হামিদ বলেন, যদিও গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ক্ষেত্রে আমাদেও অবদান মাত্র ০ দশমিক ১ শতাংশ, কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ বাংলাদেশের ওপর হুমকী ব্যাপক। বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কাঙ্খিত নবায়নযোগ্য জ্বালানী উৎপাদনের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ হ্রাস করার পদক্ষেপ নিয়েছি। এসময় বাংলাদেশের সব সময় বিশ্ব উদ্যোগে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানীর পাশাপাশি সৌর শক্তির সকল ক্ষেত্রগুলো গতিশীল করতে গবেষণা, উন্নয়ন ও স্থানান্তরের নতুন দ্বার উন্মোচনের মাধ্যমে সক্ষমতা তৈরির জন্য আইএসএ-এর পক্ষ থেকে সব সদস্য রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করার আহŸান জানান। তিনি বলেন, সবার জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই আধুনিক জ্বালানী নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সর্বদা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
নবায়নযোগ্য জ্বালানী খুবই তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে সার্বিক উন্নয়নের জন্য সহজলভ্য, নির্ভরযোগ্য, টেকসই এবং আধুনিক জ্বালানী সকলের জন্য নিশ্চিতে করতে হবে। প্রেসিডেন্ট আগামী দিনগুলোতে আশানুরূপ সুফল পেতে সুষ্ঠ সমন্বয়, প্রতিশ্রæতিশীল নীতি এবং অধিক মাত্রায় অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রায় পাঁচ লাখ বসতবাড়িতে সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে এবং এতে দু’কোটি লোক সুফল লাভ করছে। সরকার জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করতে ৫শ’ মেগাওয়াটের একটি সৌরশক্তি ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে রান্না করার ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে কার্বন নির্গমন হ্রাসের পাশাপাশি জ্বালানী সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে সৌর বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ নীতি নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে উন্নীত করতে হবে বলে প্রেসিডেন্ট জানান।
নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সোলার সামিটে ১শ’ ২১টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২৪টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী ও প্রতিনিধি যোগ দেয়। সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ফ্রান্সের প্যারিসে ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সৌর শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত ও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল সোলার এলায়েন্স (আইএসএ) জোট গঠন করে। ১শ’ ২১ সদস্যের এই জোটটি প্রথম চুক্তিভিত্তিক আন্তর্জাতিক এবং আন্তঃসরকারি সংস্থা, যার সদরদপ্তর ভারতে এবং এর সচিবালয় হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁও জেলায় অবস্থিত। জীবাশ্ম জ্বালানীর ওপর চাপ কমাতে এবং সৌর শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলাঁদ ইন্টারন্যাশনাল সোলার এলায়েন্স (আইএসএ) গঠন করেন। আইএসএ সৌরশক্তি সমৃদ্ধ দেশগুলোর একটি জোট যা থেকে তারা তাদের বিশেষ জ্বালানী চাহিদা মেটায় এবং সর্বসম্মতিক্রমে ঘাটতিগুলো চিহ্নিতকরণে একটি জোট গঠনে সহায়তা করবে। সূত্র : বাসস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন