শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মশা ও ইঁদুরের উপদ্রব

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

| প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

-২৪ ঘন্টা যাত্রী থাকায় মশা মারা স্প্রে করা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ এটা আইকাও এর নিয়মের অন্তরায় -বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ
-বিমানবন্দরের রানওয়েসহ আশপাশের মশার প্রজনন স্থান নালা নর্দমা খাল ও জলাশয়ে মশা মারার ঔষধ বা স্প্রে দেয়া হচ্ছে না মাসের পর মাস জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা
স্টাফ রিপোর্টার : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন ইদুঁর বিড়াল আর মশা-মাছির আবস্থলে পরিণত হয়েছে। দিনে রাতে ঝাঁকে ঝাঁকে মশার উপদ্রব। মশার কামুড়ে যাত্রীরা অতিষ্ঠ। শুধু মশাই নয় আছে বড় বড় ইদুঁর বিড়ালের দৌড়াদৌড়ি। এতে করে শিশু ও মহিলা যাত্রীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম শাহজালাল বিমানবন্দর। সম্প্রতি মশার জ্বালায় শুধু ফ্লাইটেই বাতিল হয়নি ভিআইপি ও সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামাগার, কাস্টমস হল ,কনকর্সহল ইমিগ্রেশনসহ বিমানবন্দরের ভিতরে কোথাও শান্তিতে দাঁড়াতেও পারছেন না যাত্রীরা। মাশা নিধনের জন্য নেই কোন বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। বিমানবন্দরের রানওয়েসহ আশপাশে মশার প্রজনন স্থান নালা নর্দমা খাল ও জলাশয়ে মশা মারার ঔষধ বা স্প্রে দেয়া হচ্ছে না মাসের পর মাস ধরে। এছাড়া ২৪ ঘন্টা যাত্রী থাকায় প্রয়োজনী স্প্রেও করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আইকাও এর বিধান অনুযায়ী যাত্রীদের উপস্থিতেতে কোন ধরনে রাসায়নিক স্প্রে করার বিধান নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা । তবে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা নিয়ে যৌথভাবে মশক নিধনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে ।
সরেজমিনে বিমানবন্দরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নোংরা ময়লা আবর্জনাময় ও ঘিঞ্জি পরিবেশে চারদিকে মশার উপদ্রব। শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহারকারী আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ একাধিক যাত্রী জানান, বিমানবন্দরের ভেতরে ভিআইপি ওয়েটিং রুমসহ সর্বত্রই মশার উৎপাত। বিমানে ওঠার আগে বিশ্রামের স্থানে বসতে গিয়ে পোহাতে হয় মশার কামড়ের জ্বালা-যন্ত্রণা। বোর্ডিং পাস কাউন্টার, ইমিগ্রেশন, বিশ্রামাগার, টয়লেটসহ সর্বত্রই মশার উপদ্রব। যেসব যাত্রী শেষরাতের দিকে বন্দরে অবতরণ করেন, তাদের অবস্থা হয়ে যায় শোচনীয়। ভোর পর্যন্ত বিমানবন্দরে বসে অপেক্ষা করার সময় মশার কামড়ে ভীষণ ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। বাধ্য হয়ে মশা-মাছির উৎপাত সহ্য করছেন বন্দরে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিমানবন্দর টার্মিনাল এলাকায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন এমন একাধিক ব্যক্তি নাম না প্রকাশের শর্তে গত রাতে ইনকিলাবকে বলেন, মশার কারণে বসা যায় না। ভিআইপি, কনকর্স হল এলাকাসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মশার উপদ্রব নেই। মশার কারণে দেশী-বিদেশী যাত্রী ও বিমানবন্দরে আসা যাত্রীর স্বজনেরা খুবই ক্ষুব্ধ।
একাধিক সুত্র জানায়, সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) আন্তর্জাতিক রুলস অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মানের প্রতিটি বিমানবন্দরে মশা-মাছি নিধনে আলাদা ইউনিট থাকার কথা থাকলেও শাহজালাল বিমানবন্দরে তা নেই। মশার যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পেতে ১৯৮১ একর বিস্তৃত বিশাল এই এলাকায় বিমানবন্দরের ওয়েলফেয়ার শাখা মশক নিধনের কাজ করছে ধার করা লোকবল দিয়ে। ক্লিনিং সেকশন থেকে আনা ৪ জনকে দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। শুধু শাহজালাল বিমানবন্দরই নয়, দেশের কোনো বিমানবন্দরেই মশা-মাছি নিধনে আইকাও রুলস মানা হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনোটিরই নেই মশা নিধনের জন্য পৃথক ইউনিট।
সিভিল এভিয়েশনের জন সংযোগ কমকর্তা এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, সিভিল এভিয়েশনের উদাসীনতা বা গাফলতি করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মশক নিধনের জন্য সিটি করপোরেশনের সাথে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত মশার উৎপাত বন্ধের লক্ষ্রে আমরা কাজ করছি।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডেপুটি ডাইরেক্টর মোশাররফ হোসেন জানান, শুধু সন্ধ্যাবেলায় কিছু সময়ের জন্য পাইলট প্রকল্প হিসেবে ধূপ জ্বালানো হয়। মশা তাড়াতে শুধু ধূপ জ্বালানোই নয়, আধুনিক পদ্ধতির ইউএলবি স্প্রে, মসকুইটো টেপ, এয়ারকার্টার ব্যবহার করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ মশক নিধনে যৌথভাবে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কী ধরনের মেডিসিন ও অ্যারোসল স্প্রেকরা হচ্ছে- জানতে চাইলে বিমানবন্দরের উপ পরিচালক মোশারফ হোসেনের বলেন, রানওয়ে এলাকায় আমরা ‘লারবি সাইড’ নামের ওষুধ ফগিং করছি। আর ভেতরে ও যাত্রী টার্মিনাল এলাকায় অ্যারোসল স্প্রে করা হচ্ছে। আগে প্রতিদিন এক বেলা ওষুধ দেয়া হতো। এখন বিমানবন্দরের ভেতরে বাইরে দুইবার করে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। তারপরও মশার উৎপাত কমছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে,বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ শাজালালে দুটি টার্মিনাল, রানওয়েসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় মশা তাড়াতে ৫০টি মাটির হাঁড়ি বসিয়েছে যেগুলোতে ধূপ জ্বালানো হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় হাঁড়িগুলোতে নারকেলের ছোবড়া দিয়ে ধূপ জ্বালিয়ে ধোঁয়া সৃষ্টি করে মশা নিধনের চেষ্টা চলছে। তবে এতে মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই তো মেলেইনি উল্টো ধূপের ধোঁয়ায় গোটা কনকর্স হল ধোঁয়াময় হয়ে উঠছে। ধূপ ব্যবহার করে মশা তাড়াতে গিয়ে ধূপের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধে অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে বিমানবন্দর। এদিকে বিমানবন্দরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ধূপ থেরাপিতে কাজ না হলে মশা নিধনে নিমপাতা, নিশিন্দা, হলুদ, পাতিলেবু, কর্পূরসহ বেশ কিছু ভেষজ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।
গত ২২ জানুয়ারি সকালে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দোলনচাঁপায় ইঁদুরের কামড়ে এক নারী অতিথি আহত হওয়ার ঘটনায় হুলুস্থূল বেধে যায়। পায়ের ক্ষতস্থানে ভ্যাকসিন পর্যন্ত নিতে হয়েছে তাকে। গত ২৩ ফেব্রæয়ারি রাতে মশার উৎপাতের কারণে আলফা-২ বে এরিয়া থেকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ ১৯৭ ফ্লাইটটি ছাড়তে নির্দিষ্ট সময় থেকে দুই ঘণ্টা বিলম্ব হয়। বিমানের ভেতরে যাত্রীরা মশার উৎপাতে বসে থাকতে পারছিলেন না। তাই উড়োজাহাজটি রানওয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরও ফিরে আসতে বাধ্য হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা কেবিন ক্রুরা ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিধনের পর ফের ফ্লাইটটি উড্ডয়ন করে। এ ঘটনার পর মশা তাড়াতে কয়েক দফায় বৈঠক করে সিভিল এভিয়েশন ও শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরামর্শ চাওয়া হয় ডিএনসিসির কাছে। এর পর রানওয়ে ও টার্মিনালগুলোর জলাশয় ও ঝোপঝাড় ছেঁটে ফেলার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ।
স¤প্রতি বিমানবন্দর রানওয়ের পূর্ব দিকের (নিকুঞ্জ) এলাকায় সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেল সেখানকার এলাকাবাসী জানান, রানওয়ের পূর্ব পাশের জঙ্গল পরিষ্কার না করায় এখানে মশার উপদ্রব। এক মুহূর্তও দাঁড়ানো যায় না। তবে বিমানবন্দরের সেবায় নিয়োজিত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনালের ডেপুটি ডাইরেক্টর মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা রানওয়ে এলাকার পাশে গড়ে ওঠা যেসব জঙ্গল ছিল তার বেশির ভাগই পরিষ্কার করে ফেলেছি। বর্তমানে তার জানা মতে, বিমানবন্দরে যাত্রীসেবায় কোনো ধরনের ত্রুটি নেই।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং-৭৩৭ আকাশে ওড়ার জন্য রানওয়ে এলাকায় চলে যায়। তার আগেই ওই এয়ারক্রাফটের ভেতরে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঢুকে পড়ে। যাত্রীদের অভিযোগে কেবিন ক্রু বিষয়টি পাইলটকে অবহিত করেন। পরে পাইলট ওই ফ্লাইটটি উড্ডয়ন না করে ফিরিয়ে আনেন। সেখানে পরিচ্ছন্নকর্মীরা মশক নিধনের পর প্রায় দুই ঘণ্টা পর মালয়েশিয়ার উদ্দেশে উড়োজাহাজটি ঢাকা ত্যাগ করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Abdul Kader ১৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:৩০ পিএম says : 0
এই আবার কেমন ডিজিটাল দেশ সামন্য মশা মারতে পারেনা যারা তাদের আবার বড় বড় কথা।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন