শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আরো বাড়াতে হবে

আবুল কাসেম হায়দার | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 রফতানি পণ্যের তালিকায় এখনও শীর্ষে অবস্থান করছে তৈরি পোশাক। দেশের মোট রফতানির ৮১ শতাংশ এখনও তৈরি পোশাক শিল্প খাত দখল করে রাখতে সক্ষম হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এই খাত মোট রফতানির ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে পাট ও পাটজাত পণ্য ২.৭৬ শতাংশ, কৃষিজাত পণ্য ১.৫৯ শতাংশ এবং হিমায়িত খাদ্য ১.৫১ শতাংশ।

দেশে প্রধান প্রধান আমদানি পণ্যের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে তুলা, সুতা ও সুতিকাপড় ১৫ শতাংশ, শিল্পের যন্ত্রপাতি ১২.৬ শতাংশ, জ্বালানি ও সমজাতীয় পণ্য ৮.৭ শতাংশ, ইস্পাত ও লৌহজাতীয় পণ্য ৫.২ শতাংশ এবং ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র ৫.১ শতাংশ। আমদানিকারক দেশ হিসাবে এখনও শীর্ষে রয়েছে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। পরবর্তী অবস্থানে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও হংকং ইত্যাদি। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে আমদানি চিত্র দেখলে পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ চীন থেকে আমদানি করে ১০১৯ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি করা হয় ৬১৫ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্যবাণিজ্য দ্রæত হারে বাড়ছে। এ বৃদ্ধির গতি দুই তরফেই অর্থাৎ চীন থেকে বাংলাদেশ যেমন পণ্য আমদানি বাড়াচ্ছে, তেমনি চীনে বাংলাদেশি পণ্য রফতানি বাড়ছে। বাংলাদেশের অন্য দুই বড় বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত থেকে পণ্য আমদানি বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশের রফতানি আয় কমে যাচ্ছে এ দুটি দেশে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৪ হাজার ৮২১ কোটি ডলারের পণ্য। তার বিপরীতে রফতানি করেছে ৩ হাজার ৪৮৫ কোটি ডলারের পণ্য। পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশীদার চীন। বাণিজ্যের দিক দিয়ে এর পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। পাঁচ বছরে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বেড়েছে ৬৪ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১৫ শতাংশ ও ভারতের সঙ্গে ২৮ শতাংশ। অবশ্য বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের বড় বাজার হিসেবে উঠে আসছে জার্মানি ও জাপান। জার্মানি এখন দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানি বাজার। অন্যদিকে জাপান শত কোটি ডলারের বাজারে পরিণত হয়েছে।
চীন ও ভারত থেকে আমদানি করলে কম দামে পাওয়া যায়। দেশ দুটির সাথে বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানি বাড়বে, এটা স্বাভাবিক প্রবণতা হওয়া উচিত। তবে দেখা যাচ্ছে, আমদানি বেশি বাড়ছে, কিন্তু রফতানি বাড়ছে না। চীন ও ভারতের বাজার ধরতে বাংলাদেশের পণ্যের সংখ্যা ও সরবরাহ সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য দরকার বিদেশি বিনিয়োগ, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো ও অবকাঠামো ঘাটতি দূর করা। এ ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের বিষয়টি বিবেচনার পরামর্শ থাকছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রফতানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
চীন ও ভারত থেকে পণ্য আমদানি বেশি হওয়ার কারণ সহজপ্রাপ্যতা, কম দামে পণ্য পাওয়া যাওয়া ও সহজ যোগাযোগ। বিশেষ করে চীনে পণ্য বেশি পাওয়া যায়। চীনের বাজার ভারতের চেয়ে উদার।
বুঝাই যায়, চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য প্রতি বছর বাড়বে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে আমাদের বাণিজ্য কয়েক গুণ বৃদ্ধি করার দরকার। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন চীনের সহযোগিতা নিয়ে আমাদের গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের কাজ শুরু করা। গভীর সমুদ্র বন্দর দিয়ে ক্ষুদ্র সিঙ্গাপুর আজ ধনী দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের সেই সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। চীন ছাড়া অন্য কোন দেশের গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে এগিয়ে আসার সামর্থ্য নেই, আগ্রহও নেই। তাই সরকারকে দ্রæত সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে।
সরকার বহু মেগা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বর্তমান সরকারের একটি চমৎকার ও সাহসী উদ্যোগ। চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে যত বেশি ভালো হবে ততো বেশি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে বর্তমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য চীনের সঙ্গে আমাদের গভীর সম্পর্কে প্রয়োজন রয়েছে। একমাত্র চীনই পারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে। তাই সরকারের উচিত হবে চীনের সঙ্গে বৃহৎ বাণিজ্য বৃদ্ধি করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়া।
লেখক: সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
rakib ২৮ মার্চ, ২০১৮, ৫:৪৮ এএম says : 0
100% RIGHT !! varoter shathe beshi kudum giri kore, china ke shotru baniese ai shorkar, tar e result ROHINGGA SHOMOSHA !! ami to bolbo china r wskani sara barma ato rohingga ke bangladesh e thele debar shahosh peto na !! wllekh kora jete pare varoter shathe security deal korar por por e rohingga der thele pathano shuru korese barma !! tasara chinar 24 billion $ er investment o thomke dariese
Total Reply(0)
Nannu chowhan ১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:৪৮ পিএম says : 0
Very good advice to the authority of the Bangladesh goverment
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন