রয়টারস : সউদি আরব ইয়েমেনে বিমান হামলা বন্ধ না করলে দেশটিতে আরো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে বলে সোমবার হুমকি দিয়েছে হুতি মুভমেন্ট। আগের রাতে সউদী রাজধানী রিয়াদে প্রথমবারের মত ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ক্ষয়ক্ষতি সাধনের পর এ হুমকি দেয়া হয়।
সউদী সেনাবাহিনী বলেছে, তারা রোববার মধ্যরাতের কিছু আগে রিয়াদে ৩টি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভ‚পাতিত করেছে। তারা জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ধ্বংসাবশেষ একটি বাড়ির উপর পতিত হয়ে একজন মিসরীয় নিহত ও ২ জন মিসরীয় আহত হয়েছেন।
সউদী নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল তুর্কি আল মালিকি বলেন, সউদী বিমান প্রতিরক্ষা বিভাগ দক্ষিণাঞ্চলীয় নজরান, জিজান ও খামিস মুশায়েতের উপর নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করেছে।
একজন শীর্ষ হুতি নেতা এ সউদী আরব ও তার আরব মিত্র জোটের ইয়েমেন যুদ্ধ শুরুর তৃতীয় বার্ষিকীর প্রাক্কালের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রশংসা করেন। হুতি রাজনৈতিক পরিষদের প্রধান সালেহ আল সামাদ রাজধানী সানায় হাজার হাজার সমর্থকের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা আমাদের সামরিক সক্ষমতার এই অগ্রগতির প্রশংসা করি।
তিনি বলেন, তারা যদি শান্তি চায় তাহলে তার আগে বিমান হামলা বন্ধ করতে হবে, বেই আমরা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করব। তিনি বলেন, আপনারা হামলা অব্যাহত রাখলে সকল উপায়ে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার আমাদের আছে। হুতিরা রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের উত্তর অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
বিস্ফোরণ : যে বাড়ির উপর বিধ্বস্ত ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পতিত হয়ে এক মিসরীয় নিহত হন বাড়িতেই বাস করেন খাত্তাব জামাল। ২৭ বছর বয়স্ক এ যুবক টেলিফোনে রয়টারসকে বলেন, প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দে তিনি ও বাড়ির আরো ১৫ জন অধিবাসী জেগে ওঠেন। আমরা বুঝতে পারি যে আবদুল মুত্তালিব যে ঘরে ছিলেন তার উপর কিছু পড়েছে। তার সাথে ঐ ঘরে আরো ৩ জন ছিলেন। বিস্ফোরণের সময় সবাই ঘুমিয়েছিলেন। এরপর সবাই বেরিয়ে এলেও তিনি আসেননি।
আমরা তাকে খেঁজাখুজি করি, কিন্তু তিনি ভিতরে ছিলেন। আমরা ভিতরে ঢুকে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করি, কিন্তু সফল হইনি। ভিতরে ছিল ভীষণ ধুলা ও শ^াস বন্ধ হয়ে আসার মত অবস্থা। কয়েক মিনিট পর সিভিল ডিফেন্স আসে ও মৃত অবস্থায় তাকে বের করে।
গত তিন বছরে সউদী নেতৃত¦ধীন জোট ইয়েমেনে হাজার হাজার বার বিমান হামলা চালিয়েছে। এ সব হামলায় ধ্বংস হয়েছে হাসপাতাল, স্কুল, বিপণি কেন্দ্র ও নিহত হয়েছে শত শত বেসামরিক নাগরিক। রিয়াদকে এগিয়ে নিয়েছে জয়ের দিকে।
সউদী আরব বলেছে, তাদের দক্ষিণ সীমান্তে হুতি মর্টার ও স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শত শত সৈন্য ও বেসামরিক নিহত হয়েছে।
হুতিরা গত বছরেও রিয়াদের দিকে রকেট নিক্ষেপ করেছিল। কিন্তু কোনো ক্ষতি করার আগেই সেগুলো ধ্বংস করা হয়। সউদী জোট তার জবাবে অবরোধ আরোপ করে ইয়েমেনের বিমান বন্দর ও বন্দরগুলো বন্ধ করে দেয়। এর ফেেল দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। পরে অবরোধ আংশিক প্রত্যাহার করা হয়।
পশ্চিমা দেশগুলো সউদী আরব ও তার উপসাগরীয় মিত্রদের বেসামরিক লোকদের জীবন রক্ষা এবং দ্রæত যুদ্ধাবসানের আহবান জানায়। তবে একই সাথে তারা সীমান্ত পেরিয়ে হামলা থেকে আত্মরক্ষা ও গুরুত¦পূর্ণ বাণিজ্যপথের উপর ইরানের প্রভাব বিস্তােেরর চেষ্টা সীমিত রাখার সউদী আরবের অবস্থানকেও সমর্থন করে।
সউদী সামরিক বাহিনী তাদের জঙ্গিবিমান উড্ডয়ন অব্যাহত রাখতে পশ্চিমা অস্ত্র কোম্পানিগুলোর সেবা চুক্তির উপর নির্ভরশীল।
সউদী আরব ২০১৪ সালে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে হুতিদের ক্ষমতা দখলকে তার প্রধান শত্রæ ইরান কর্তৃক তাকে ঘিরে ফেলার আঞ্চলিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখে। জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা জানুয়ারিতে নিরাপত্তা পরিষদে পেশকৃত রিপোর্টে বলেন, তারা যে সব হুতি ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম পরীক্ষা করেছেন সেগুলোর সবই ইরানে তৈরি।
কূটনীতিক ও ইয়েমেনি রাজনৈতিক কর্মকর্তারা এ মাসে বলেছেন যে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কয়েক বছর ধরে চলা সংলাপ ব্যর্থ হওয়ার পর হুতি ও সউদি আরব গোপন শান্তি আলোচনা শুরু করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন