রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কৃষিতে বিপর্যয়

ভরাট হয়ে যাচ্ছে পদ্মা

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নদীর দেশ বাংলাদেশে প্রতিবছর নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদীসহ শ শ নদী মরে যাচ্ছে, অস্তিত্ব হচ্ছে বিলিন। প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে দেশের জলবায়ুতে । পদ্মা এখন শুধু ইতিহাসের পাতায় লেখা একটি নদীর নাম। এটা কি নদী ? বিশ্বাস করা যায় না। পদ্মার সেই খরস্রোত নেই কেন ? এমন সব প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে এ কালের শিশু, কিশোর, ছাত্র ছাত্রীসহ আগন্তককে। বিস্তৃত ধু ধু বালু চর আর পানির ক্ষীণ বিল কিংবা লেকের মতো পদ্মার ঐতিহ্য অস্তিত্ব আজ বিপন্ন হয়েছে। ফলে কৃষির উপরে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়েছে গঙ্গা- পদ্মা নদীর ভারতের অংশে। ১৯৬৮-১৯৬৯ সালে ভারত ফরাক্কা ব্যারেজটি একতরফাভাবে নির্মাণ করে। কিন্ত ভারত কৌশলগত ভাবে ব্যারেজটি তখনই চালু করে নি। তখন পাকিস্থানে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথানের ১৯৭০ সালের জেনারেল ইয়াহিয়া সামরিক শাসন জারি এবং সবশেষে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের কাল। তারপরেও ভারত অপেক্ষা করে এবং অবশেষে ১৯৭৫ ইং সালের ২১ এপ্রিল ভারত ফারাক্কা চালু করার পর থেকেই তা মরণদশা শুরু হয়েছে । নদী আছে পানি নেই, বালু আছে কিন্তু কোথায় যেন কোন মাটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে পদ্মার কোলে জেগে উঠা চরে সবুজ ফসল ফলানো সম্ভাব হচ্ছেনা। প্রতি বছর বালু জমতে জমতে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পদ্মার ভয়াবহ রুপ দিনে দিনে হারিয়ে ফেলেছে। বিগত বছরগুলোতে এ নদীর ক্ষীণ স্রোতধারা থাকলেও এ বার তাও নেই । একটা বিলে পরিনত হয়েছে। এ অবস্থা হতে থাকলে কয়েক বছর পর নৌকার পরিবর্তে গরুর গাড়ী কিংবা সাইকেলে নদী পার হওয়া বলে সচেতন মহলের ধারনা । ফারাক্কা ব্যরেজের সব কয়টি গেট বন্ধ করে নদী শাসন করে মেরে ফেলা হয়েছে অসংখ্য নদ নদীকে। জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে পরিবেশ জীবন জীবিকায় নেমে এসেছে প্রচন্ড ধস। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ধীরে ধীরে মরু ভূমিতে পরিনত হচ্ছে । গ্রীস্ম মৌসুমে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নীছে নেমে যাওযায় উত্তরাঞ্চচলের বেশীর ভাগ নলকূপে পানি উঠা বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট । উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবনে অভিশাপ বয়ে এনেছে এই ফারাক্কা ব্যারেজ। এসব এলাকার মানুষ যাকে মরন ফাঁদ বলে জানে। এ ব্যারেজ চালু হওয়ার সময় বলা হয়েছিল এটি উভয় রাষ্ট্রের কল্যাণের প্রতীক। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভরতের বিমাতাসুলভ আচারণের কারণে এ ব্যারেজ এ দেশের মানুষের জন্য অকল্যাণ। একতরফা পানি প্রত্যাহার করে ভারত তাদের বন্দর, কৃষি, সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখলেও এদেশের কৃষি, নৌ যোগাযোগ, পরিবেশ, জীবন জীবিকাকে ঠেলে দিয়েছে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে। বিভিন্ন সময়ে পদ্মার পানি বন্টন নিয়ে অনেক আলোচনা মাফজোঁক আর পর্যবেক্ষণ হয়েছে। চুক্তি হয়েছে, চুক্তি নিয়ে সংসদে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে কিন্ত বাংলাদেশের ভাগ্যে কখনই চুক্তি মোতাবেক পানি জুটেনি। তবে পানি এসেছে পত্রিকা, অন লাইন পত্রিকা, সংসদে, টেলিভিশন, রেডিও, টেলিফোনে। এর ফলে শুধু পদ্মা নয় অভিন্ন ৫৪টি নদ নদীর পানি ভারত একতরফা প্রত্যাহার করে চলেছে। ফলে এপারের নদ নদীগুলো মরে যাচ্ছে । পদ্মা নদী মরে যাওয়ার সাথে সাথে শাখা নদী বড়াল, মরাবড়াল, নারোদ, মুছাখান, ইছামতি, চিকনাই, নাগর, ধলাই, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, হিসলা, কাজলা, চিত্রা, সাগোরখালি, চন্দনা, কপোতাক্ষ মরে যাচ্ছে, কালিগঙ্গা, বেলাবত এসব নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে কিছু দিনের জন্য এসব নদীতে পানি থাকলেও প্রায় সারা বছর থাকে পানি শূন্য । তাছাড়া এসব নদী মরে যাওয়ার সাথে সাথে দুপার্শ্ব অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে। এখন এসব নদীর নাম^ বইয়ের পাতায় কিংবা মানচিত্রে স্থান পেয়েছে । বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশর কোটি কোটি মানুষ বন্যা, খরা, জলচ্ছাস কবলে পতিত হয়, সীমাহীন দূর্ভোগ পহাতে হয়, দুঃখের সীমা থাকে না । অকালে ঝড়ে য়ায় লাখ লাখ মানুষ, গরু ছাগল, হাঁস মুরগীর প্রাণ। জলবায়ুর উপর দেখা দেয় বিরুপ প্রভাব। এর অন্যতম প্রধান কারণ মরন বাঁধ ফারাক্কা । মৃত.মৌলানা আবদুল হামিদ খাঁন ভাসানী ফারক্ক ব্যারেজের বিরুদ্ধে ব্যারেজমূখি ফারাক্কা লং মার্চ করেছিলেন, ব্যারেজটির মারাত্বক পরিনতির কথা বিবেচনা করে। বাংলাদেশ ভাটির দেশ হয়ে এবং তুলনামূলকভাবে ভারতের চেয়ে অনেক ক্ষুদ্র দেশ হওয়ার কারণে কখনই তাদের অভিযোগ স্পষ্ট করে বলতে পারেনি । ফারাক্কা ব্যারেজ উজানে পানি প্রত্যাহারের প্রকল্প নয়। এটি একটি শত সহস্র বছর প্রবাহমান আন্তজাতিক নদীর গতিপথের সম্পূর্ণ পরিবর্তন যা আন্তজাতিক আইন কানুনের পরিপন্থী । গঙ্গা-পদ্মা অভিন্ন নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে, এ কথাটি আমরা স্পষ্ট করে বলতে পারিনা কেন? আমাদের বলা উচিৎ নয় কি ?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন