দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে সপ্তাহের ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে মধ্য মাঘে হাড় কাঁপানোর শীতের বদলে বসন্তের আবহ বিরাজ করছে। তবে মাঝারী কুয়াশার দাপট এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি(শুক্রবার) বরিশালে তাপমাত্রার পারদ মৌসুমের সর্বনিম্ন, প্রায় ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে গেলেও বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারী) সকালে তা ১৫.৫ ডিগ্রীতে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা স্বাভাবিকের প্রায় ৪ ডিগ্রী ওপরে। এমনকি পটুয়াখালীতে এদিন সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৬.৪ এবং খেপুপাড়াতে ১৬.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যা স্বাভবাবিকের প্রায় ৫ ডিগ্রী বেশী। আবহাওয়া বিভাগ থেকে রাতের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি সহ দিনে তা অপরিবর্তিত থাকার কথাও বলা হয়েছে।
পৌষের শুরু থেকে দক্ষিনাঞ্চল যুড়ে হাঁড় কাঁপান শীত মাঘের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্তই বহাল থাকার পরে ক্রমে তাপমাত্রার পারদ অস্বাভাবিকভাবে ওপরে উঠছে। ইতোমধ্যে বরিশালে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ৩১ ডিগ্রী ছুতে চলেছে। যা স্বাভাবিকের প্রায় ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশী।
চলতি শীত মৌসুমের শুরু থেকে কণকণে ঠান্ডার সাথে উত্তর-পশ্চিমের হিমেল হাওয়ায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে। ইতোমধ্যে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সরকারী হাসপাতালগুলোতেই ৬ হাজারের অধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। যার প্রায় ৮০ ভাগই শিশু ও বয়োবৃদ্ধ। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলার সরকারী হাসপাতালের শিশু বিভাগের মেঝেতেও রোগীর ঠাই মিলছে না। শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সপ্তাহের ব্যাবধানে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত অন্তত ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ভোলাতও মৃত্যু হয়েছে আরো একজনের।
এমনকি অব্যাহত শৈত্য প্রবাহে এবার দক্ষিণাঞ্চলে বোরো সহ শীতকালীর সবজি আবাদ ও উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবার ৩ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদে বীজতলা তৈরীর লক্ষ্য অতিক্রম করেচে। কিন্তু পৌষের শুরু থেকে তাপমাত্রা অব্যাহত ভাবে স্বাভাবিকের নিচে থাকার পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় ‘কোল্ড ইনজুরী’ নিয়ে শংকিত কৃষিবীদগনও। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় বোরো ধান থেকে প্রায় ১৭ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। পাশাপাশি তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নামার সাথে অব্যাহত ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলে শীতকলীন সবজির উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক সবজির গুনগত মানও নষ্ট হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজির আবাদের মাধ্যমে উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টন। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি নতুন করে আর কোন বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরীর কবলে না পরলেও ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ বীজতলা সহ সবজির গুনগতমান পুনরুদ্ধারের কোন সম্ভবনা নেই বলেই মনে করছেন কৃষিবীদগন।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ থেকে শুক্রবার সাকালের পরবর্তি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর সহ সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি আবহাওয়ার আরো কিছুটা অস্বাভাবিক আচরন প্রত্যক্ষ্য করতে হতে পারে বলেও মনে করছেন আবহাওয়া পর্যবেক্ষকগন।
এমনকি এবারের টানা শৈত্যপ্রবাহ গম উৎপাদনে যথেষ্ঠ ইতিবাচক ফল দেবে বলে কৃষিবীদগন আশা করলেও সপ্তাহের ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের বেশ কিছুটা ওপরে উঠে যাওয়ায় এ রবি ফসল-এর উৎপাদন ব্যহত হবার আশংকাও প্রবল হচ্ছে। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে শীত প্রধান দেশের এ ফসল আবাদের মাধ্যমে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষিযোদ্ধাগন এখন মাঠে রয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন