শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

সরকারি চাকরি না পেয়ে ঢাবি ছাত্রের আত্মহত্যা!

ঢাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:৪৭ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবন থেকে লাফ দিয়ে তানভীর রহমান (৩০) নামের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার রাত আটটা ৩৮ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এমবিএ ভবনের নবমতলা থেকে লাফ দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। তানভীর রহমানের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলায়। বাবার নাম ফসিউর রহমান। বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন।

তানভীর রহমান একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সান্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্সের (২০১৪-২০১৫ সেশন) শিক্ষার্থী ছিলেন বলে জানা গেছে।

নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তানভীর তিন দিন আগে একটা কোম্পানিতে যোগদান করেন। সরকারি চাকরি না পাওয়ায় তার মধ্যে হতাশা ছিল। এ থেকেই আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

আত্মহত্যার পর তানভীরের ব্যাগ থেকে ঘুমের ঔষুধও পাওয়া গেছে। চাকরিতে যোগ দেয়ার পর তিনি রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় খালার বাসায় এসে উঠেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গের সামনে তানভীরের খালা পরিচয় দেয়া ওই নারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নতুন চাকরি পেয়ে চার দিন আগে তানভীর আমার বাসায় আসে। প্রত্যেক দিন ভোরে বের হয়ে রাতে বাসায় ফিরত। দু’দিন আগে সে আমাকে বলে- খালা, আমি বেসরকারি চাকরি চাইনি, আমি সরকারি চাকরির জীবন চেয়েছি। চাকরির বয়সও প্রায় শেষ। এখন কি করব?’

তিনি বলেন, ‘এ সময় আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি- তোর রিজিক আল্লাহ যেখানে রেখেছেন, সেখানেই হবে। এ নিয়ে এত চিন্তা করিস না।’

ওই নারী জানান, শনিবার সকাল সাতটার দিকে অফিসের উদ্দেশে তানভীর বাসা থেকে বের হয়। রাতে তারা তানভীরের মৃত্যুর খবর পান।

হাসপাতালেই তানভীরের সেজ মামা আলী হায়দার পিন্টু বলেন, ‘সে আমার একমাত্র ভাগ্নে ছিল। প্রায়ই বলতো, মামা সবখানে এত ভাল পরীক্ষা দিচ্ছি। কিন্তু, কী কারণে যেন চাকরি পাচ্ছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি চাকরি না পেয়ে তানভীর হতাশ ছিল। আমরা তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। বলেছি, তোর আব্বুর বাড়ি আছে, ঢাকাতেও বাড়ি আছে। এত চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু, কোনো বুঝেই আমাদের শেষরক্ষা হলো না।’
নিহতের স্বজনেরা জানান, তানভীররা তিন ভাই-বোন। বড় বোন বিবাহিত। ছোট বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে আছে। পাশেই একটি ফুলের টব।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, রাত আটটা ৩৭ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের দিকে ছেলেটি ভবন থেকে লাফ দিয়েছে।

এ সময় কোনো ক্লাস ছিল কিনা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাউন্টিং বিভাগের এক শিক্ষক জানান, ঘটনার সময় সান্ধ্যকালীন কোনো ক্লাস ছিল না। যেখান থেকে লাফ দিয়েছে, সেখানেও কোনো ক্লাসরুম নেই।

একই ভবনের নিচতলায় এফবিএসের ফুড কোর্ট। তার কর্মচারী হাবিব ঘটনা সম্পর্কে জানান, তিনি ভেতরে ছিলেন। হারুন নামের আরেক কর্মচারীই তাকে জানান- কাউকে সে উপর থেকে পড়তে দেখেছেন।

তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা ঘটনাস্থলে এসে দেখি শার্ট-প্যান্ট পরা এক যুবকের নাক-মুখ ও কান দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। দ্রুত স্যারদের ডেকে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’

আত্মহত্যার পর নবমতলা থেকে তানভীর রহমানের একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। সেখানে ১০টির এক পাতা ঘুমের ঔষধ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৫টি ব্যবহৃত হয়েছে।

ঘুমের ওষুধটির (নাম অপ্রকাশিত) বিষয়ে আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক হাবিবা আক্তার সুইটি বলেন, ‘দুশ্চিন্তার কারণে কারও ঘুম না এলে আমরা এই ধরনের ওষুধ দিয়ে থাকি।’

তানভীরের ব্যাগে আরেকটি প্রেসক্রিপশন পাওয়া গেছে। যাতে লেখা, খাবারের পরে এক গ্লাস পানি ও একটি এসএমসি সেলাইন এবং ৫ ফোটা জাফরান প্রতিদিন দু’বার খেতে হবে; নিউট্যাক ৪০টি, প্রতিদিন দু’বার করে খালি পেটে খাবেন।

এছাড়া ব্যাগে তানভীরের আইডি কার্ড, বডি স্প্রে, দিয়াশলাই, চশমার বাক্স, মানিব্যাগ, কলম, টুপি ও খাতা পাওয়া যায়।

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাগের সবগুলো পণ্য আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।’

তিনি জানান, লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা আছে। প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে একটি অপমৃত্যু মামলা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একে এম গোলাম রাব্বানি বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন