আর একটি মাত্র জয়। তারপরই শিরোপা উল্লাসে মাতার অপেক্ষায় আবাহনী। সেই প্লাটফর্মটা গতকাল শেরে বাংলা স্টেডিয়ামেই তৈরি করে রেখেছে মাশরাফি-নাসিরদের দল। মিরপুরে আবাহনী করা ২৪১ রানের জবাবে খেলাঘরে ইনিংস থেমেছে মাত্র ১১৪ রানে। আবাহনী জিতেছে ১২৭ রানের বিশাল ব্যবধানে। ৩৮ উইকেট নিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন মাশরাফি মুর্তজা।
শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়, পরে টেনে এন্ডারদের হাল ধরা। মাঝারি সংগ্রহ নিয়ে আবাহনী লিমিটেড পরে বল হাতে দেখালো দাপট। খেলাঘরকে গুড়িয়ে এক মৌসুম পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে তারা। শেষ ম্যাচে নাটকীয় কিছু না হলে ট্রফি উঠছে মাশরাফিদের হাতেই। সকালে টস জিতে আবাহনী ব্যাট করতে পাঠিয়ে দারুণ বিপাকে ফেলেছিল খেলাঘরের বোলাররা। বিশেষ করে পেসার আব্দুল হালিমের বলে ধস নামে আবাহনীর ইনিংসে। ১৫৬ রানেই ৮ উইকেট হারায় তারা। ৫ ওভার বল করে মাত্র ১০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে নেন হালিম।
কিন্তু এরপরই পালটে যায় ম্যাচের ছবি। ব্যাখ্যাহীন কারণে দলের সেরা বোলার হালিম আর বল করতেই আসেননি। দুই স্পিনার আনজুম আহমেদ আর সাদিকুর রহমান টানা বল করতে থাকেন। আলগা হওয়া চাপে জুটি গড়ে তুলেন আবাহনীর টেল এন্ডাররা। তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাসকিন আহমেদের সঙ্গে নবম উইকেটে গড়ে তুলেন ৫৬ রানের জুটি। ২৬ রান করে ফেরেন তাসকিন। দশম উইকেটে সন্দীপ রায়কে নিয়ে ৩৬ রানের আরেক জুটিতে দলকে আড়াইশর কাছে নিয়ে ফেরেন ৫০ রান করা মিরাজ।
২৪২ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুতেই সাদিকুর রহমানকে হারায় খেলাঘর। দ্বিতীয় উইকেটে রবিউল ইসলাম রবি আর মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন দেখাচ্ছিলেন আশা। তবে এই দুজনের আউটের পর খেলাঘরের ইনিংস যেন তাসের ঘর। তাদের সবচেয়ে ভুগিয়েছেন মাশরাফি। ৮ ওভার বল করে ৩২ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
এদিকে, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে জয়ের ভিত গড়ে দিলেন মোহাম্মদ শহীদ। বাকিটা সহজেই সারলেন ব্যাটসম্যানরা। গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্সকে উড়িয়ে দিল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। সুপার সিক্সের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে ৮ উইকেটে জিতেছে রূপগঞ্জ। ১৫৩ রানের লক্ষ্য ১৬৩ বল হাতে রেখে পেরিয়ে গেছে নাঈম ইসলামের দল।
এছাড়া, বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে এক জয় দিয়ে শেখ জামাল ধানমÐি ক্লাবের শিরোপার আশা বাঁচিয়ে রাখলেন তানবীর হায়দার। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে প্রাইম দোলেশ্বরকে হারিয়েছে নুরুল হাসানের দল। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার ম্যাচে দশম উইকেট জুটির দারুণ প্রতিরোধ ভেঙে ১০ রানের জয় তুলে নেয় শেখ জামাল। ১৮৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১৭৩ রানে গুটিয়ে যায় দোলেশ্বরের ইনিংস।
এই রাউন্ড শেষে ১৫ ম্যাচের ১১টিই জিতে ২২ পয়েন্ট আবাহনীর। দুইয়ে থাকা লিজেন্ড অব রূপগঞ্জের পয়েন্ট ২০। শেষ ম্যাচে শিরোপা উলট পালট করতে আবাহনীকে বিশাল ব্যবধানে হারাতে হবে রূপগঞ্জকে। শিরোপা দৌড়ে এখনও টিকে থাকা আরেক প্রতিপক্ষ শেখ জামালের পয়েন্টও ২০।
আবাহনী-খেলাঘর
আবাহনী : ৪৬.৩ ওভারে ২৪১ (এনামুল ২৭, নাজমুল ৫৪, মিঠুন ১৮, নাসির ১৫, সানজামুল ২৩, মিরাজ ৫০, তাসকিন ২৬; ইরফান ১/৩৩, হালিম ৪/১০, আনজুম ২/৫২, সাদিকুর ২/৪৬)।
খেলাঘর : ২৭.৩ ওভারে ১১৪ (রবি ২০, মাহিদুল ২৭, সাব্বির ৩, আনজুম ২৪, মাসুম ২৩*; মাশরাফি ৩/৩২, মিরাজ ১/১০, সানজামুল ০/৩৪, তাসকিন ২/২৫, নাসির ২/৮, সন্দীপ ২/৫)।
ফল : আবাহনী ১২৭ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মেহেদী হাসান মিরাজ (আবাহনী)।
শেখ জামাল-দোলেশ্বর
শেখ জামাল : ৩৮ ওভারে ১৮৩ (চাঁদ ২৭, পিনাক ২৪, তানবীর ৪৩*, নুরুল ২০, জিয়া ৩৯; রেজা ২/২৪, শাকিল ১/৩২, আরাফাত সানি ১/২৯, শরিফউল্লাহ ২/৫২, নাসুম ১/৩৫, জাকারিয়া ৩/১০)।
প্রাইম দোলেশ্বর : ৪৮.২ ওভারে ১৭৩ (মাহমুদ ৩৫, মার্শাল ২৯, আরাফাত সানি ৩৫*, শাকিল ৩১; নাজমুল ২/৩৭, আবু জায়েদ ১/২২, রবিউল ১/৩৬, ইলিয়াস সানি ১/১৮, তানবীর ৪/৩১)।
ফল : শেখ জামাল ১০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : তানবীর হায়দার (শেখ জামাল)।
গাজী গ্রুপ-রূপগঞ্জ
গাজী গ্রুপ : ৪৫.৪ ওভারে ১৫২ (মেহেদি ২১, জহুরুল ৩১, জাকের ৩০, আসিফ ১৭, নাঈম ২৩; শহীদ ৪/২৬, শরীফ ১/৪৫, মোশাররফ ১/২৮, রসুল ২/২৭, আসিফ ২/১৭)।
রূপগঞ্জ : ২২.৫ ওভারে ১৫৩/২ (নাঈম ৪৫, অভিষেক ৫৭*, মুশফিক ৩০*; আবু হায়দার ১/২৯, আবু নাসের ০/২৪, মেহেদি ০/২৭, নাঈম ০/২৯, টিপু ১/২২, আসিফ ০/১৫)।
ফল : রূপগঞ্জ ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মোহাম্মদ শহীদ (রূপগঞ্জ)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন