শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা

অদক্ষ চালকের বেপরোয়া আচরণে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র বিদেশী ডিগ্রী অর্জন ও অভাবের সংসারের হাল ধরার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। গত ৪ এপ্রিল সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়েকের ইলিয়টগঞ্জের গোমতা এলাকায় বেপরোয়া একটি বাস তাকে বহনকারী রিকশাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সোহেল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শঙ্করপুর এলাকায় বসেছিলেন তানভির। হঠাৎ একটি প্রাইভেটকার এসে তাকে সজোরে আঘাত করে। তানভির বলেন, প্রথম মনে হয়েছিল তার ডান হাতে লেগেছে গাড়ীর ধাক্কা। এরপর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফেরে তখন জানতে পারেন তিনি পঙ্গু হাতপাতালে। চিকিৎসকরা তার জীবন বাঁচাতে ডান পাঁ হাঁটুর ওপর পর্যন্ত কেটে ফেলেছেন। সেই থেকে তিনি পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তানভিরের মতো আরো অনেকেই হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। এরা সবাই সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার। অদক্ষ চালকের বেপোরোয়া গাড়ী চালানো, স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালীপনা, জনসচেতনতার অভাব এবং সর্বোপরি দায়ী চালকের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির বিধান না থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ সারাদেশে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিদিনই যন্ত্রদানবের হত্যার শিকার হয়ে দেশের বহু জ্ঞানী, গুণী, বুদ্ধিজীবী, নিষ্পাপ শিশু থেকে বৃদ্ধ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী প্রাণ হারাচ্ছেন। চিরদিনের মত পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে অনেককেই। রাজধানীর একমাত্র জাতীয় অর্থপৈডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে প্রতিনিয়ত রোগীদের বেশিরভাগই সড়ক দুর্ঘটনায় স্বীকার ব্যক্তিরা ভর্তি হচ্ছেন।
মোটরযান আইনের আওতায় কিছু সঙ্কেতিক চিহৃ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে দেখা গেলেও এসব সঙ্কেতের কোনো অর্থ বোঝে না সড়ক ব্যবহারকারী অদক্ষ চালকরা। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইন লঙ্ঘনকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। আইন অমান্যকারী চালকদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকে না বলেও দাবি করেছেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে সৃষ্ট ছোট-বড় দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া গেছে অনেক কারণ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সহকারী দিয়ে যানবাহন চালানো, দুটি যানবাহনের মধ্যবর্তী দূরত্ব বিপদসীমার মধ্যে, অপরিপক্ক চালক, চালকের বেপরোয়া গতি, অভিযুক্ত চালকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান না থাকা, চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহার, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, যত্রতত্র ওভারটেক, পথচারী পারাপারে অব্যবস্থাপনা, সড়ক দিয়ে গবাদি পশু পারাপার, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, লক্কড়-ঝক্কর যানবাহন চলাচল, খানাখন্দ সড়ক, অনুমোদনহীন যানবাহন, নিষিদ্ধ যানবাহন অবাধে চলাচল, মহাসড়কে রিকশা-ঠেলাগাড়ি চলাচল, সড়ক ঘিরে স্থায়ী-অস্থায়ী বাজার গড়ে ওঠা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক। কমবেশি আহতের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ার পেছনে লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন এবং অনভিজ্ঞ চালক প্রধান কারণ হলেও এব্যাপারে সাড়া জাগানো কোনো উদ্যোগ নেই হাইওয়ে পুলিশের। অভিজ্ঞজনদের মতে, অনুমোদন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ ও অপেশাদার চালক দ্বারা গাড়ি চালানো, ত্রæটিপূর্ণ সড়ক ব্যবস্থা, ট্রাফিক বিভাগের অদূরদর্শিতা এবং সংশি¬ষ্ট বিভাগের দুর্নীতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। নিরাপদ সড়কের জন্য গণসচেতনতা বাড়ানো স্বাধীনতার পরে এখনও কোনো বিশেষ প্রকল্প চালু হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেই টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তা রোধে দীর্ঘ মেয়াদি কোনো স্থায়ী পরিকল্পনা ও প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে না। যা হচ্ছে তা গতানুগতিক। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের সাথে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চলছে দেদারছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বাস, মিনিবাস মালিক সমিতি, ট্রাক সমিতি, পিকআপ সমিতি, মাইক্রোবাস সমিতিসহ বিভিন্ন যানবাহনের সমিতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতাধররা। যে কারণে বিআরটিএ বা ট্রাফিক বিভাগ ইচ্ছে থাকলেও ব্যবস্থা নিতে না পারায় তাদের সাথে দফা রফা করে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে। এতে করে সড়ক আর নিরাপদ থাকছে না। বিভিন্ন সংস্থা, এনজিও ও সুশীল সমাজের কর্তা ব্যক্তিরা সভা-সেমিনারে বিভিন্ন কর্মপন্থা ও সুপারিশমালা প্রদান করলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ হচ্ছে না। আর সড়ক দুর্ঘটনাও কমছে না। অনুমোদন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে বিআরটিএ ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ একে অপরের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত তাদের কাছে আসা মোট ৪০ শতাংশ গাড়ির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাকি ৬০ শতাংশ গাড়ির অনুমোদন দেয়া হয়নি। তবে বিআরটিএ’র দেয়া পরিসংখ্যানে লাইসেন্স ও ফিটনেস অনুমোদনপ্রাপ্ত গাড়ির সংখ্যায় এ হিসাব দেখানো হলেও বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন। বেসরকারি হিসাব মতে এর সংখ্যা আরও বেশি। আর এ বৃহৎসংখ্যক অনুমোদনহীন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল করার কারণে দিন দিন আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে দুর্ঘটনা। অদক্ষ চালকের কারণেও ঘটছে অপূরণীয় দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কুমিল্লার একজন কর্মকর্তা জানান, আমাদের কাছে গাড়ি আসলে আমরা গাড়ি ও তার চালকের সঠিক মান যাচাই-বাছাই করে তবেই গাড়িকে চলাচলের অনুমতি দিয়ে থাকি। অনুমোদন ছাড়া অসংখ্য গাড়ি রয়েছে যেগুলো শনাক্ত করার দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের। ত্রæটিপূর্ণ গাড়ির জন্য সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লে সে দায়ভার আমাদের নয়।
এব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, সরু রাস্তা গাড়ি বেশি এছাড়াও হাইওয়ে পুলিশের জনবল সংকটের কারণে সঠিকভাবে সেবা দেয়া একটু কঠিন। তারপরও আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যানজট নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন