শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহিলা

কর্মসংস্থান প্রতিবন্ধীদের অধিকার

প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শাহনাজ বেগম

মানবসভ্যতা যখন প্রতি মুহূর্তে উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সমাজ বিবর্তনে বদলেছে অপসংস্কৃতির কাঠামো, ঠিক এমন সময়েও দেখা যায় সভ্য সমাজে ভূ-লুণ্ঠিত হচ্ছে মানবতা। দেখতে পায় মানুষে মানুষে কত বিভেদ-মত পার্থক্য। একবিংশ শতাব্দিতেও মানুষের মাঝে কত বিস্তর ব্যবধান বিরাজমান তা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দু’টি ফুটফুটে তরুণী সীমা ও নুভানাকে দেখে জানা গেল। সমাজের নানা প্রতিকুলতা ভেদ করে কিভাবে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাবে, সেই আকাক্সক্ষার কথা জানালো দৃষ্টিহীন সীমা ইকবাল ও নুভানা নাঈমা হক। সম্প্রতি লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পড়ে এসেছে ২৬ বছর বয়সী জন্মান্ধ সীমা। ৩ বোনের মধ্যে সীমা ছোট। বাবা মায়ের অতি আদরের সন্তান সীমা। অন্ধ হয়েও অনেকদূর পৌঁছেছে বলে নিজেকে অসহায় মনে না করে ভাগ্যবতীই মনে করে। আর এসবের পেছনে মায়ের অবদানের কথাও অকাতরে স্মরণ করে। বনানীর ‘ইনস্টিটিউট অব হযরত মোহাম্মদ (সা.)’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্ক্রিন রিডার সফটওয়ার ‘জএউস’ এর ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সেখানে ব্লাইন্ডদের স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় কোন প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সফটওয়ার না থাকায় চাকরি করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সীমা। সীমার জানা মতে, বাংলাদেশে অনেক অন্ধ ছেলে আইনজীবী থাকলেও কোন ব্যারিস্টার নেই। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির দরখাস্ত করলে যোগ্যতা সত্ত্বেও অন্ধত্বের কারণে সীমাকে বাদ দেয়া হয়। এর জন্য আক্ষেপ করে সীমা বলে দেশের আইন অনেক ভালো কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে তা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। সীমার বন্ধু নুভানাও একজন অন্ধ। প্রতিভাময়ী নুভানার দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও আছে সুরেলা কণ্ঠ। সঙ্গিতের ওপর ডিগ্রি নিয়ে এখন সে একজন ভালো কণ্ঠশিল্পী। ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর নুভানা শান্ত মারিয়র ইউনিভার্সিটি থেকে বি মিউজ ও এম মিউজ কোর্স সম্পন্ন করেছে। দুজনেই তাদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে মেধার বিকাশ ঘটিয়েছে। দুজনই অপেক্ষার প্রহর গুনছে, তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কোন সংস্থানে কাজ করার সুযোগ পাবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যদি পাশবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কেউ এগিয়ে আসে তবেই তাদের প্রতিভার মুল্যায়ন হবে।
সীমা বা নুভানার মতো বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ নারী কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী। অথচ প্রতিবন্ধী নারীর যোগ্যতা অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদ থেকে বঞ্চিত। রাজনৈতিক অধিকার চর্চায় অংশগ্রহণ করছে এমন নারীর সংখ্যা শতকরা ১ জনও নেই। প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় শতকরা ১ জনেরও কম। তার মধ্যে খুব কম প্রতিবন্ধী মেয়েই কর্মসংস্থানের সাথে জড়িত। আবার শতকরা ৯৬ জন প্রতিবন্ধী নারীরা মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার। সম্প্রতি নারীর প্রতি ইতিবাচক বৈষম্য প্রদান করে তাদের রাজনৈতিক অধিকার যেমনভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে ঠিক সেভাবেই প্রতিবন্ধী নারীদের ভোটাধিকার ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয় প্রতিবন্ধী সংগঠনের পক্ষ থেকে। আর্ন্তজাতিক নারী দিবস-২০১৬ উপলক্ষে গত ১২ মার্চ, ২০১৬ ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হল এ “প্রতিবন্ধী নারীর রাজনৈতিক অধিকার ও অংশগ্রহণ” শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে প্রতিবন্ধীরা তাদের প্রত্যাশার কথা জানান। প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বা প্রয়োজনের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা নেই। একজন প্রতিবন্ধী ছেলে অন্য একজনের কাঁধে ভর করে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে, যা নারী প্রতিবন্ধীর পক্ষে সম্ভব নয়। খুব কম সংখ্যক প্রতিবন্ধী নারী পাবলিক স্থাপনা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।
প্রতিবন্ধীদের প্রস্তাবনা বিষয়ক ডিসিএফ পেপার উপাস্থাপনা করেন ভিপসের সাধারণ সম্পাদক নাজমা আরা বেগম পপি। যেমন, প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সংরক্ষিত দুটি আসন পূরণ এবং ওই আসনে নারী সংসদদের প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়নের জন্য দায়িত্ব প্রদান করা এবং প্রতিবন্ধী নাগরিকদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সকল কমিটি ও সকল স্তরে কোটা সংরক্ষণ করা। এই প্রথমবারের মতো প্রতিবন্ধী নারীদের নেতৃত্বে পরিচালিত সাতটি সংগঠন একত্রিত হয়ে প্রতিবন্ধী নারীদের সমাজের মূল ধারায় অংশগ্রহণের জন্য একসাথে কাজ শুরু করেছে। প্রতিবন্ধী নারীদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই সাতটি সংগঠন- উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডাব্লিউডিডিএফ), অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ভিস্যুয়েলি ইম্পেয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস), ডিজঅ্যাবেলড চাইল্ড ফাউন্ডেশন (ডিসিএফ), ডিজঅ্যাবেলড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (ডিডাব্লিউএস), প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ (এনসিডিডাব্লিউ), এবং টার্নিং পয়েন্ট ফাউন্ডেশন।
নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী নারীদের স্থানীয় সরকারের সকল স্তরে অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে কোটা সংরক্ষণর প্রত্যাশা করেন। পাশাপাশি তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য একীভূত নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু করা, যেমন- ভোট কেন্দ্রে প্রবেশগম্যতা, প্রসারিত ভোটদান কক্ষ, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা বা প্রয়োজনে পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করা। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রচারিত সচেতনতামূলক প্রচারণা ও নির্দেশনা শ্রবণ ও বাক, দৃষ্টি এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর উপযোগী (অডিও, ভিডিও, ব্রেইল ও ইশারা ভাষা) হতে হবে। একই সাথে ইলেক্ট্রিক ভোটিং মেশিন পদ্ধতিতে টকিং, অডিও ও হেড ফোনের মাধ্যমে পরিচালনার সুযোগ রাখার আহ্বান প্রতিবন্ধীদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ ইব্রাহিম ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ৭:০৯ পিএম says : 0
প্রতিবন্দি দের জন্য প্রর্তেক ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন এ একটি ( ১) মারদাসা,স্কুল,কারিগারি শিক্ষা তৈরী করা। কারন আমি একজন দৃষ্টিহীন বালক। আমার ও শিক্ষার প্রযজন আছে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন