রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিএনপিকে বাইরে রাখার ছক : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নির্বাচন কমিশনের তরফে অক্টোবরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে অক্টোবরের কবে নাগাদ এই তফসিল ঘোষণা করা হবে, জানানো হয়নি। নির্বাচন কমিশন আলাপ-আলোচনা করে তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবে। গত ১০ জানুয়ারি সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর অনুমান সঙ্গত যে, ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। অক্টোবরে তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে, বোধকরি এই নিরিখেই। অবশ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বরে অথবা জানুয়ারিতে হবে। নির্বাচন কমিশন সেভাবেই প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের ইচ্ছা বা পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে কিছু করবে এমনটি মনে করার কারণ দেখা যাচ্ছে না।
যেদিন অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা জানান দেয়া হয়েছে, সেদিনই নির্বাচন কমিশন ২৫টি সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করেছে। সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনার নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগকে সমর্থন করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তার বক্তব্য ছিল, সংসদীয় আসনের সীমানা যেভাবে আছে সেভাবেই রাখা হোক। অন্যদিকে বিএনপির বক্তব্য ছিল, ২০০৮ সালের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা যেভাবে ছিল সেভাবে নির্ধারণ করা হোক। যা হোক, নির্বাচন কমিশন ৪০টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে মার্চে ৩০০ আসনের খসড়া প্রকাশ করে। শুনানি শেষে ওই ৪০টি আসনের মধ্যে ২৫টিতে পরিবর্তন আনে। ২৫টি আসনের মধ্যে ২৩টির প্রস্তাবক ছিল নির্বাচন কমিশন। বাকী দুটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে স্থানীয় দাবির প্রেক্ষিতে। লক্ষ্য করার বিষয়, সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগে ক্ষমতাসীন দলের অসন্তুষ্টি থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন তাকে সন্তুষ্ট করেই ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করেছে। প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের ১৭টি আসনের সীমানায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এতে ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, মনে হচ্ছে, ক্ষমতাসীনরা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ হলো। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে সময়ের একটা ধারণা পাওয়া গেলো। নির্বাচন কবে হতে পারে সে সম্পর্কেও একটা আন্দাজ তৈরি হলো। বলা বাহুল্য, সংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হতে হবে। সে মতে, ২৯ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। এই হিসাবে নির্বাচনের খুব বেশি দিন বাকী নেই। এ সময়ে নির্বাচনের জোর হাওয়া সৃষ্টি হওয়ার কথা। সেরকম কোনো কিছুই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রচারণায় নেই। অন্যান্য দলের তো কথাই নেই। আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত মিত্র জাতীয় পার্টি মাঝে-মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কথা বললেও প্রচারণা বলতে যা বুঝায়, তার কোনো প্রমাণ নেই।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটা বিশাল ব্যাপার। এর প্রচার-প্রচারণায় রাজনৈতিক দলগুলো যত আগে থেকে সম্ভব তৎপর হয়ে ওঠে। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল ছাড়া কেউই মাঠে নেই। বিএনপি দেশের বড় দুটি দলের একটি এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ। যখন মাঠে তৎপর থাকার কথা তখন দলটি কার্যত ঘরবন্দি হয়ে আছে। সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল এমনকি মানববন্ধন পর্যন্ত করতে পারছেনা। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা তো আরো পরের কথা। তার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীও পুলিশের বাধার পন্ড হয়ে যাচ্ছে। মামলা-মোকাদমা-গ্রেফতার তো পুরানো খবর। সরকার তার পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচনের পথে এগিয়ে গেলেও বিএনপিসহ অন্যান্য দল এ থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা জাতীয় রূপ নিলেও, বাস্তবে তার কোনো আয়োজন ও প্রকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, সেটা পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অথবা নির্বাচনের আগে তিনি মুক্তি পারবেন কিনা, বলা মুশকিল। বিএনপির নেতারা লাগাতারই বলে আসছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। নির্বাচন নয়, তার আগে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তিই তাদের প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা। সরকারও, মনে হচ্ছে, তাকে বাইরে রেখে এমনকি বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচনের ছক সাজিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন অত্যন্ত নাজুক। তার চিকিৎসা নিয়ে চলছে নানারকম টালবাহানা। জামিন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি চিকিৎসা নিয়েও চলছে সময়ক্ষেপন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, যে ধরনের মামলায় তিনি কারাগারে, সে ধরনের মামলায় জামিন স্বাভাবিক ব্যাপার। তারা সিআরপিসির ৪৯৭ ধারা উল্লেখ করে বলেছেন, এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি একজন আসামীর্ শারীরীকভাবে অক্ষম হন অথবা তিনি যদি বয়সে প্রবীণ হন, অথবা তিনি যদি মহিলা হন কিংবা শিশু হন সেক্ষেত্রে তাকে জামিন দিতে হবে। এমনকি তার বিরুদ্ধে যদি ৩০২ ধারায় মামলা থাকে তাহলেও জামিন দিতে হবে। ৩০২ ধারার মামলা হচ্ছে খুনের মামলা। খালেদা জিয়া শুধু তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী নন, দেশের অন্যতম বৃহত দলের ও সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক জোটের প্রধান। সর্বোপরি তিনি একজন মহিলা এবং তার বয়স ৭৩ বছর। এসব বিবেচনায় তার জামিন অনেক আগেই হওয়ার কথা। কিন্তু হয়নি। এখন তার শারীরীক অবস্থার এতই অবনতি হয়েছে যে, যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা না হলে তিনি পঙ্গু ও অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। তার চিকিৎসার ব্যাপারে এক ধরনের নাটক ইতোপূর্বে হয়েছে। তাতে কোনো দল পাওয়া যায়নি। অনেক আগে থেকেই তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বেসরকারী কোনো বড় হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার কথা বলেছেন। কারা কর্তৃপক্ষও শেষ পর্যন্ত অনুরূপ অভিমত দিয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত চিকিৎসার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বলা যায়, চিকিৎসার অভাবে তিনি দিনে দিনে অক্ষম ও অথর্ব হয়ে পড়তে পারেন। এ অবস্থা কোনো মতেই মেনে নেয়া যায় না।
ক্ষমতাসীনরা মাইনাস খালেদা জিয়া কিংবা মাইনাস বিএনপি নির্বাচন করতে চাইলে, সঙ্গতকারণেই ধারনা করা যায়, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবেনা। সেক্ষেত্রে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো ‘আমাদের আর মামুদের’ সম্মেলনে একটি নির্বাচনের প্রহসন অনুষ্ঠিত হবে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কথাবার্তা থেকে মনে হয়, তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত, এমনকি আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকতে চান। এই উচ্চাভিলাস পূরণের লক্ষ্য নিয়েই তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি প্রধান পথের কাঁটা। খালেদা জিয়া কারাগারে, এটা তাদের জন্য একটা স্বস্তির ব্যাপার বটে। দলীয় চেয়ারপারসন কারাগারে থাকায় বিএনপি বড় ধরনের একটি চাপের মধ্যে পড়েছে। তার ওপর আরও চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, বিএনপিকে দ্বিধাবিভক্ত করে দুর্বল করার পাশাপাশি খÐিত একটি অংশকে প্ররোচনা ও সুবিধা দিয়ে নির্বাচনে শামিল করানোর অভিসন্ধি ক্ষমতাসীনদের বরাবরই রয়েছে, যদিও এখন পর্যন্ত এ অভিসন্ধি সফল হয়নি। নির্বাচন আরো ঘনিয়ে এলে সেরকম কোনো সুযোগ আসলেও আসতে পারে, এমন ভাবনা ক্ষমতাসীনদের থাকতে পারে। তাছাড়া দলটিকে চাপে ফেলার অংশ হিসাবে সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টাও লক্ষ্য করা গেছে। অন্যায্য ও অপ্রয়োজনীয় বির্তক সৃষ্টি করা হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত হালে পানি পায়নি। কেউ কেউ এমন কথা বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা খালেদা জিয়াকে কার্যত মাইনাস করে ফেলেছেন। তারা তারেক রহমানকেউ মাইনাস করতে চান। এ দু’জন মাইনাস হলে দল বিশৃংখল ও হতাশ, হতোদ্দম হয়ে পড়তে পারে। সেক্ষত্রে দলকে মাইনাস করাও সহজ হয়ে যেতে পারে।
যাই কিছুই করা কিংবা বলা হোক না কেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে সে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। অন্যান্য দল অংশ নিলেও হবে না। কারণ, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার একমাত্র সক্ষম প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি। দু’দলের জনসমর্থন প্রায় সমান সমান। অন্তত ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে এই দুটি দল। এদের যে কোনো একটি দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তবে সে নির্বাচন যথার্থ অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হবে না। তা হবে একতরফা নির্বাচন, যার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে এমন প্রশ্নই বিদ্যামান আছে। এরকম প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন ফের অনুষ্ঠিত হোক তা দেশের মানুষ যেমন চায়না তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায়না। জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ গণতান্ত্রিক দেশগুলো বরাবরই বলে আসছে, তারা বাংলাদেশে এমন একটি নির্বাচন দেখতে চায়, যা হবে অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য। চীন, যে কিনা কোনো দেশের রাজনীতি সম্পর্কে সাধারণত কোনো কথা বলে না, সেও ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনযোগ্য একটি নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। ভারত গত নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ নিয়ে রীতিমত প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ করেছিল অসম্ভব নির্বাচন সম্ভব করে তুলেছিল। এবার সেই ভারতও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইছে। যদিও ক্ষমতাসীন দলের প্রতি তার একান্ত অনুরাগ ও পক্ষপাতিত্ব রয়েছে, তার পরও একতরফা নির্বাচন সে চাইছে না।
এই প্রেক্ষাপটে কাঙ্খিত অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা আবশ্যক। নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকী থাকলেও সে পরিবেশ প্রতিষ্ঠার কোনো আয়োজন ও আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যুগপৎভাবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনের পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম অবাধে পরিচালনা করার সুযোগ দেয়া অপরিহার্য পূর্বশর্ত। অথচ বিএনপিসহ বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলই সে সুযোগ পাচ্ছে না। আইনশৃংখলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের উগ্রবাদী লোকজন বিরোধী দলের জন্য কোনো স্পেসই দিচ্ছে না। বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা যদি নির্ভয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে না পারেন, শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল ও প্রচার-প্রচারণা চালাতে ব্যর্থ হন, বাধাগ্রস্ত হন তাহলে নির্বাচনের পরিবেশ কীভাবে তৈরি হবে? দেখা যাচ্ছে, সরকার ও ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে কোনো ভূমিকা তো রাখছেইনা, উল্টো পরিবেশকে ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য যে ভূমিকা নিতে পারতো, সে ভূমিকাও রাখছে না। সব দলের সমান সুযোগ তৈরি করে দেয়া নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন বলছে, তফসিল ঘোষণার আগে সে এ ব্যাপারে কিছুই করতে পারবে না। প্রশ্ন হলো, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যে নির্বাচন কমিশন সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারবে, তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে? নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে যেভাবে নিজেকে দৃশ্যমান করে তুলেছে তাতে এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে, তার পক্ষে সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভবপর হবে। তার অবস্থান অনেক আগেই সরকারের দিকে হেলে পড়েছে। আগের কথা বাদ গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। এই দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৫ মে। এখন চলছে প্রচার-প্রচারণা। দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা বেপরোয়াভাবে নির্বাচনের আচরণবিধি লংঘন করছে, পুলিশ বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রচারণার বাধা দিচ্ছে, এমন কি নেতাকর্র্মীদের ঢালাওভাবে গ্রেফতার করছে। নির্বাচন কমিশন এর প্রতিকারে কোনো ভূমিকা বা পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। নির্বাচন কমিশন কার্যত একটি অসমান মাঠ তৈরি করে দিয়েছে। অসমান মাঠে উপযুক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা হতে পারে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন কী করবে তা করতে পারবে, সেটা এ থেকে আন্দাজ করা মোটেই কঠিন নয়।
নির্বাচনের যথোপযুক্ত কেন, কোনো পরিবেশই এখন নেই। এ অবস্থায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো কেন নির্বাচনে যাবে সেটা একটি বড় প্রশ্ন। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে সব দলের সঙ্গে সরকারের সংলাপ অনুষ্ঠানের যে দাবি বিভিন্ন মহল থেকে করা হচ্ছে, সরকারের সে দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। বিএনপি অনেক দিন ধরে আলোচনার তাকিদ, দিয়ে আসছে। এ তাকিদের জবাবে সরকারের তরফে পূর্বাপর বলা বলা হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। নির্বাচনের প্রশ্নে বিএনপির সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি আছে। এসব দাবির মধ্যে প্রধান দাবি হলো, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তারা আর একটি বড় দাবি হলো, নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে নিতে হবে। এ দুটি দাবির প্রশ্নে কোনো কথাই শুনতে চায় না সরকার। এ দাবি দু’টির আনাদায়ে বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাতেও সরকারের কোনো বিকার নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা একবাক্যে বলে আসছেন, বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এবং সংসদ বহাল থাকবে। সংবিধানের বাইরে তারা যাবেন না। অতি সম্প্রতিও বলা হয়েছে, কোনো দলের নির্বাচনে আসা না আসা তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার। একথার সরল অর্থ দাঁড়ায়, নির্বাচন সংবিধান মোতাবেকই হবে, কেউ আসলে আসবে, না আসলে, না। পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের এ অবস্থান কোনো দায়িত্বশীল অবস্থান নয়। একটি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণীয় ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করা যে সরকারেরও দায়িত্ব সেটা সরকার একেবারেই আমলে নিতে চাইছে না। নির্বাচন কমিশন তো অনেক আগেই বলে দিয়েছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ বা আলোচনার আয়োজন করা তার এখতিয়ারের বাইরে। আইনগত দিক দিয়ে এটা হয়তো সত্য; কিন্তু একথাও তো সত্য, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তির্পূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ও উপযুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের ওপর নৈতিক চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের আছে। নির্বাচন কমিশন সে সুযোগ বা ভূমিকা রাখতেও যেন অনীহ।
এ অবস্থায়, নির্বাচনের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত ও বিচলিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন কোনো মানুষই চাইতে পারে না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সংকটের উদ্ভব হয়েছে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন ও আইনের শাসনের যে করুণ হাল হয়েছে, তার অবসান ঘটাতে হলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতেই হবে। বিএনপির তরফে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে একতরফা কোনো নির্বাচন করার চেষ্টা হলে বিএনপি তা প্রতিহত করবে। এর মানে, নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে সংঘাত-হানাহানি ফের দেখা দিতে পারে। একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে এবং সংঘাত-হানাহানির আশঙ্কা অপনোদনে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব ও ভূমিকা রাখা কেবল অত্যাবশ্যক নয়, জরুরিও বটে। বিএনপিসহ অন্যান্য দলেরও সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এক্ষেত্রে যথার্থ দূরদর্শিতার পরিচয় দেবেন বলে দেশের মানুষ আশা করে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
মারুফ ৫ মে, ২০১৮, ৩:১৬ এএম says : 0
বিএনপি মাঠে সক্রিয় হতে না পারলে এটাই হবে
Total Reply(0)
গনতন্ত্র ৫ মে, ২০১৮, ৪:৪৫ এএম says : 0
জনগন বলছেন, “ নীরব কান্না – ২০১৮ “ ৭১ এর অন্যায় বিরুধী, বীর সাহসী গনতন্ত্রের র্দুদিনে কোথায় তোমরা আজ দিনের দুপুরে বাংলার আকাশে কাল বৈশাখীর ঘন কালো সাঁঝ ৷ শাসন নামের শোষন হচ্ছে চাদাবাজি আর ব্যাংক লুটপাট, অনেক সেতু হেলে গেছে রডের বদলে বাঁশ আর কাঠ ৷ মুখ বন্ধে ডিজিটাল আইন রাস্তায় নামলেই দৌড়ায় পুলিশ, দুশমন দমন কর্মকর্তা আছে কইরা দিবো নালিশ ৷ ডিবি পুলিশ উঠাইয়া নিবো ফিরবে হয়ে লাশ, আদালতে তুললে রিমান্ড হবে পাশ থানায় নিয়ে পিঠে ভাংবে বাঁশ ৷ ৫ই মে আর ৫ই জানুয়ারী জনতার নিরবতায় ঐতিহাসিক বারাবারি, গুম, খুন, ধর্ষনের মহামারি মাদকের শিকার প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি ? র্দুনিতীর বন্যায় ভাসছে দেশ পানি শূন্য সব নদী, র্দুঘটনায় মৃত্যুর মিশিল সবাই ব্যস্ত পাইতে স্বপ্নের গদি ৷ তারা করলে দোষ নাই সত্য বললে আমি অপরাধী, আসামীরা আজ আনন্দ মত্ত সাজা কাটে বাদী ৷ কথায় কথায় মিথ্যেচার গীবত দিয়ে দিন আরম্ভ করি, আমদানী বুদ্ধি প্রয়োগ করে দেশ বানাচ্ছে তলাবিহীন ঝুড়ি ৷
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন