সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বজ্রপাত কেন হয়

মোহাম্মদ আবু নোমান | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বজ্রপাতের কারণ কি, ছোটবেলায় এই প্রশ্নের আমরা উত্তর পেয়েছি এভাবে: মেঘে মেঘে সংঘর্ষের ফলে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাত নিয়ে নানা ধরনের ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, এটা সম্পূর্ণই প্রাকৃতিক ব্যাপারে। যেখানে মানুষের কোন হাত নেই। বজ্রপাত ও ভ‚মিকম্পের কোন পূর্বাভাস বিজ্ঞান আজও দিতে পারেনি। তবে আবহওয়াবিদরা বলেন, বেশি গাছপালা থাকলে বজ্র গাছের মধ্যে পড়লে জানমালে ক্ষতি কম হয়। বিষয়টি যে পরিবেশ বিপর্যয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতোমধ্যে বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মোবাইলফোন টাওয়ারের আদলে টাওয়ার নির্মাণ ও সারাদেশে ১০ লাখ তালগাছ লাগানোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। একইসঙ্গে সামাজিক সচেতনতা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে অগ্রাধিকার পাচ্ছে তালগাছ রোপণ। নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণের চেয়ে তালগাছ রোপণের ওপরই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
বজ্রপাতের প্রচÐ গর্জন এবং আলোর ঝলকানি মহান আল্লাহতাআলার মহাশক্তির বহিঃপ্রকাশ ও মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ সতর্কবাণী। তিনি চাইলে এ বজ্রপাতের মাধ্যমে তার অবাধ্যও সীমালংঘনকারী বান্দাদের শাস্তি প্রদান করতে পারেন। যদিও আল্লাহ তাআলা সব সময় তার বান্দাদের প্রতি শাস্তিদানের মতো কঠোর আচরণ করেন না। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য রাহমান, রাহিম, গাফুর ও গাফ্ফার।
বজ্রপাতের কারণ কি, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারেন না কেউ। মেঘ কিভাবে চার্জিত হয়, তাছাড়া বাতাসও বিদ্যুৎ অপরিবাহী, এসব নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে নানা মতভেদ রয়েছে। তাদের মতে, সাধারণত উত্তপ্ত ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বজ্রপাত বেশি হয়। উত্তপ্ত বায়ু যখন দ্রæতগতিতে ঠাÐা হয়, তখন বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়। এই বজ্রমেঘের ভেতরে বাতাসের দ্রæতগতির আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এর ফলে বাতাসের জলীয়বাষ্প একই সময়ে বৃষ্টিকণা, শিশিরবিন্দু ও তুষার কণায় পরিণত হয়। বৃষ্টিকণা ও তুষার কণার পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলে তুষারের ইলেকট্রন চার্জ ধাক্কা খায়। ফলে স্থির বৈদ্যুতিক চার্জের সৃষ্টি হয়। এই চার্জ সঞ্চিত হয়ে তীব্র শব্দের বজ্রপাত সৃষ্টি করে। যখন বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ উচ্চ তাপমাত্রা সৃষ্টি করে, তখনই তীব্র শব্দের সৃষ্টি হয়। বাতাসের মধ্য দিয়ে দ্রæত প্রবাহিত বজ্রবিদ্যুৎ প্রায় ৩০ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা উৎপন্ন করে। ফলে বায়ুর দ্রæত প্রসারণ হয় ও তীব্র শব্দের সৃষ্টি হয়। এভাবে বাতাসে ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ যতই দ্রæততর হয়, বজ্রপাত তত বেশি মাত্রায় হয়ে থাকে। পজিটিভ ও নেগেটিভ মেঘ থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনকালে বজ্রের সৃষ্টি হয়, তখন মেঘের ভেতরে থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন গ্যাসের স¤প্রসারণ ঘটে। এতে প্রচুর ঝলকানি দিয়ে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে বজ্র। তখন এর সামনে মানুষ বা পশুপাখি যা-ই পড়ে, তার মৃত্যু হয়।
এসব মূলত বজ্রপাতের বাহ্যিক কারণ। তবে এর মূল কারণ কী তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, বজ্রপাত আল্লাহ তাআলার শক্তির নিদর্শনগুলোর একটি, যা তিনি তার প্রিয় বান্দাদের সাবধান করার জন্য রেখেছেন। তিনি চাইলেই যে কাউকে এর মাধ্যমে যেকোনো সময় শাস্তি দিতে পারেন। যদিও সব ক্ষেত্রে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা এমনটি করেন না। আল্লাহ তাআলা নিজেই পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘বজ্র তারই তাসবিহ ও হামদ জ্ঞাপন করে এবং তার ভয়ে ফেরেশতাগণও (তাসবিহরত রয়েছে)। তিনিই গর্জমান বিজলি পাঠান, তারপর যার ওপর ইচ্ছা একে বিপদরূপে পতিত করেন। আর তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) অবস্থা এই যে তারা আল্লাহ সম্পর্কেই তর্কবিতর্ক করছে, অথচ তার শক্তি অতি প্রচÐ’ (সুরা রা’দ-১৩)।
আল্লাহপাক জ্ঞান ও শক্তির দিক থেকে পূর্ণতার অধিকারী। নির্বোধ শ্রবণশক্তির অধিকারীরা এ মেঘের মধ্যে শুধুই গর্জনই শুনতে পায়, কিন্তু বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন সজাগ শ্রবণশক্তির অধিকারী ব্যক্তিরা মেঘের গর্জনের মধ্যে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার নির্দশন দেখতে পান। আল্লাহর শক্তিমত্তা ও অপার কৌশল দেখে মেঘমালাকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে থাকা ফেরেশতাসহ অন্যান্য সব ফেরেশতাও তার ভয়ে তাসবিহ পাঠ করে। মানুষের কাজকর্মই বজ্রপাতের মূল কারণ। খোদাদ্রোহিতা, জিনা, ব্যভিচার, পরকীয়া, অন্যায়-অত্যাচার দুনিয়ায় যত বাড়বে, ততই দুনিয়ার বুকে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ বাড়বে। মুষ্টিময় ধর্মদ্রোহী অতি আধুনিক হতে গিয়ে আল্লাহ ও রাসূল (সা.)কে নিয়ে, ধর্মকে নিয়ে কটাক্ষ করে থাকে। উপরোক্ত আয়াতের শেষাংশে (আর তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) অবস্থা এই যে তারা আল্লাহর সম্পর্কেই তর্কবিতর্ক করছে, অথচ তার শক্তি অতি প্রচÐ)। আর বর্তমানে যারা আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ধর্মকে নিয়ে যারা কটাক্ষ করে এ ধরনের ব্যক্তিদের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রবল পরাক্রমশালী প্রভু বলেছেন, যদি আমার বান্দারা আমার বিধান মেনে চলত, তবে আমি তাদের রাতের বেলায় বৃষ্টি দিতাম, সকালবেলায় সূর্য দিতাম এবং কখনো তাদের বজ্রপাতের আওয়াজ শুনাতাম না। অন্যত্র এসেছে, রাসুল (সা.) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথাবার্তা ছেড়ে দিতেন এবং এ আয়াত পাঠ করতেন- ‘সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রাদদু বিহামদিহি ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খি-ফাতিহি’। অর্থাৎ আমি সেই সত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যার পবিত্র ঘোষণা করছে মেঘের গর্জন তার প্রশংসার সাথে। আর ফেরেশতাকুল প্রশংসা করে ভয়ের সাথে। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রিয় নবী (সা.) তার উম্মতদের বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। রাসুল (সা.) যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আ-ফিনা কবলা জালিকা’। অন্যত্র এসেছে, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না।
প্রাকৃতিক কারণে বজ্রপাত হবেই। তবে এতে প্রাণহানি কমানোর সুযোগ আছে। পরিবেশ রক্ষাসহ বৃষ্টি ও হালকা বিদ্যুৎ চমকানো অবস্থায় মানুষকে সচেতন হওয়া উচিত। এ সময় ঘরে অবস্থান করা। অতিজরুরি প্রয়োজনে রবারের জুতা পরে বাইরে যাওয়া। উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার, ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা। এ সময় নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকা। বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা বা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে না থাকা। ধানক্ষেতে বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়া। বজ্রপাতের আশঙ্কা হলে যত দ্রæত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেওয়া। এছাড়াও বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দিলে টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা। বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ না রাখা। বজ্রপাত চলাকালে বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় না থাকা। জানালা বন্ধ রাখা এবং ঘরের ভিতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকা। বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার না করে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করা। শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখা। সমুদ্র বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করা। প্রতিটি ভবনে বজ্রপাত নিরোধক দÐ স্থাপন নিশ্চিত করা। বজ্রপাতের সময় মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সুইচ বন্ধ রাখা এবং বজ্রপাতের আভাস পেলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা ইত্যাদি

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মোহাম্মদ তৈয়ব ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
মাশাল্লা, নোমান ভাই ভালো লিখেছে, আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
Total Reply(0)
মোহাম্মদ তৈয়ব ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
মাশাল্লা, নোমান ভাই ভালো লিখেছে, আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
Total Reply(0)
মোহাম্মদ তৈয়ব ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
মাশাল্লা, নোমান ভাই ভালো লিখেছে, আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
Total Reply(0)
মোহাম্মদ তৈয়ব ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
মাশাল্লা, নোমান ভাই ভালো লিখেছে, আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
Total Reply(0)
মোহাম্মদ তৈয়ব ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
মাশাল্লা, নোমান ভাই ভালো লিখেছে, আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন