বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন বলেই আজকে আমরা মহাকাশের গর্বিত অংশীদার

৩৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

।। ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ।। | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

১৭ মে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নিজ দেশে ফিরে আসার দিন। আজ থেকে ৩৭ বছর আগে ১৯৮১ সালের এই দিনেই তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন একটি স্বপ্নের বাংলাদেশের নির্মাতা হওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে। শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন বলেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে বিশ্বদরবারে।
বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে ফিরে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেদিন শোককে শক্তিতে পরিণত করতে পেরেছিলেন বলেই, আজ মাটিতে মেট্রোরেল, সমুদ্রে সাবমেরিন ক্যাবল এবং স্যাটেলাইন মহাকাশের অংশীদার। আজ থেকে সাতত্রিশ বছর আগের কথা। দিনটি ছিল রবিবার। কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল। প্রচø ঝড়-বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়াও গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখো মানুষের মিছিল। সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে অধিকার বঞ্চিত মুক্তিপাগল জনতা ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে তার রক্তের উত্তরাধিকার গণতন্ত্রের মানসকন্যা রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য সেদিন কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত জনসমুদ্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে এসেছিলেন তিনি। সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ফলে দেশে গণজাগরণের ঢেউ জাগে, গুণগত পরিবর্তন সূচিত হয় আন্দোলনের-রাজনীতির, গণসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পায় সংগঠনের। দেশবাসী পায় নতুন আলোর দিশা। আলো হাতে আঁধারের কাøারি হয়ে বঙ্গবন্ধুবিহীন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় ফিরে এসেছিলেন বলেই স্বল্পন্নোয়ন দেশ থেকে আজকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং মহাকাশের গর্বিত অংশীদার আজকের বাংলাদেশ। সবকিছুই সম্ভব হয়েছেন সেদিন দেশের মাটিতে পা রেখেই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সাহসী উচ্চারণ ‘.....আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতির দূরে থেকে আমি ঘর-সংসার করছিলাম। কিন্তু সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি আমার জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাঁদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’
সেদিনই তিনি স্বাধীনতাকামী মানুষকে দেন তাঁর অমোঘ দিক নির্দেশনাÑ ‘শোককে শক্তিতে পরিণত করুন।’ শেখ হাসিনা সেদিন জনগণকে দেয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে ৩৭ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জনগণের ভাগ্যবদলে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। সেদিন লাখ লাখ জনতার সামনে বঙ্গবন্ধুকন্যা যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে সক্ষম হয়েছেন। তার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। স্বল্পন্নোয়ন দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ। পাঁচ কোটি লোক নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উন্নীত হয়েছে। আমরা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। অচিরেই মধ্যম আয়ের দেশ হবো। দারিদ্র্য বিমোচনে আপনার সাফল্যকে বিশ্বব্যাংক মডেল হিসেবে সারা বিশ্বে উপস্থাপন করেছে। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে এক কোটি ২০ লক্ষ মানুষকে স্বাবলম্বী করেছেন। আপনার যুগান্তকারী ঘোষণা, ‘একটি লোকও গৃহহীন থাকবে না’ মানবিক বাংলাদেশের প্রতিধ্বনি। আপনার চিন্তা প্রসূত গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ঘরে ঘরে বিদ্যুত্, কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার ক্লিনিক, ডিজিটাল বাংলাদেশ, বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, ‘মায়ের হাসি’ নামে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান ও ২৫ লক্ষ মাকে মোবাইল ফোন প্রদান, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ফান্ড গঠন, কৃষকদের জন্য কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান, দশ টাকায় কৃষকের ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, দুস্থ ভাতা প্রদানে উপকারভোগী বাংলাদেশের মানুষ। দশ টাকায় কৃষকের ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, দুস্থ ভাতা প্রদানে উপকারভোগী বাংলাদেশের মানুষ। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করছে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হয়েছে।
গণতন্ত্রের সংগ্রামে তার লড়াকু সংগ্রামমুখর জীবন এতটাই উদ্ভাসিত হয়ে উঠল যে, মানুষ তার দিকে ¯্রােতের মতো ছুটেই গেল না, ভালোবেসে তাকে কখনো গণতন্ত্রের মানসকন্যা, কখনো বা জননেত্রী বলে দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে উচ্চাসনে অভিষিক্ত করলেন। আপসহীন, দেশপ্রেম, গণতন্ত্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও রক্তের উত্তরাধিকারিত্ব নিয়ে গণমানুষের সংগ্রামে একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ডিঙাতে লাগলেন। গোটা বিশ্ব অভিভ‚ত হয়ে দেখল একজন সংগ্রামী নেত্রীর রাজনৈতিক সাফল্যের উত্থান। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর স্নেহসান্নিধ্য পাইনি তারা তার যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার স্নেহসান্নিধ্যে ধন্য হলাম। আমরা তার স্নেহচ্ছায়ায় কাছে থেকে দেখলাম দুঃখী বাংলার মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ও আস্থা এবং দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট। তার সাহসী সংগ্রামের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছি তিনি কীভাবে একের পর এক প্রাণনাশের আঘাত, হামলা, নির্যাতনের মুখে অমিত সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্বই দিলেন না, আমাদের বুকের ভিতরে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আগুনও জ্বালিয়ে দিলেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের বাঁকে বাঁকে কত ষড়যন্ত্রের জাল ফেলা হয়েছে! তিনি ছিন্ন করেই অশুভশক্তির বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণের বাতি জ্বালিয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে বৈরী ¯্রােতের বিরুদ্ধে তার সংগ্রামকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতির দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ নামের ঐতিহ্যবাহী দলটিকে ব্যালট বিপ্লবে ক্ষমতায় এনে প্রচলিত আইনে সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছেন। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কোনো রাজনৈতিক বচন নয়, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সেই সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুণগত একটি পরিবর্তন আসে। দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বড় দৃষ্টান্তও সেই সময় ঘটেছে। পার্বত্য এলাকাজুড়ে নানাবিধ কারণে একটি বিশৃঙ্খল ও অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করত, ওই এলাকা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন জনপদে পরিণত হয়। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ করে সে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন। ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যান্ডেট ছিল তারুণ্যের একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। ইতোমধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে ২০২৩ সালের আগেই উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই রূপকল্প বাস্তবায়ন রাজনৈতিক কোনো কথার ফুলঝুরি নয়; আজ তা প্রমাণিত সত্য। আজকে আমরা স্যাটেলাইন মহাকাশের অংশীদার। ডিজিটালের সুফল ভোগ করছে দেশের জনগণ। হাতের মুঠোয় এখন সবকিছু। দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি টাকারও বেশি। আমাদের এই স্বপ্ন, বিশ্বাস এবং এতটুকু যে অর্জন তা কেবল শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছেন বলেই সম্ভব হয়েছে।
রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা এমন একজন নেত্রী যিনি নিজের ছেলে প্রযুক্তিবিদ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ সজীব ও মেয়ে অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে যেমন ভালভাবেস, তেমিন কর্মীদের ভালোবাসেন নিজ সন্তনের মতোই। মায়ের স্নেহ-মমত্ববোধ থেকে সন্তানদের বঞ্চিত করে তা কর্মীদের নির্দ্বিধায় দেন। অসহায় বিপন্ন মানুষের কাছে ব্যাকুল চিত্তে তিনি ছুটে যান মানবিক হƒদয় নিয়ে, মায়ের ভ‚মিকায় পাশে দাঁড়ান। তার মতো স্নেহশীল মা, কর্মীবান্ধব সভানেত্রী, প্রাজ্ঞ দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেত্রী যেভাবে দেশ ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিরন্তর পথ চলছেন, দেশের স্বার্থে যেভাবে আপসহীন দৃঢ়তা দেখিয়ে এসেছেন তা ইতিহাসে তাকে অমরত্ব দেবে। আজ তার এই দেশে ফেরার শুভ দিনে মহান আল্লাহর কাছে তার সুস্থ, কর্মঠ ও দীর্ঘজীবন প্রত্যাশা করি। এই দেশ ও মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে এই মহান নেত্রীর ভাগ্যের সঙ্গে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের মনের দোয়া কবুল করুন। শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আবদুল হান্নান ১৭ মে, ২০১৮, ১২:৫৭ পিএম says : 9
এইসব ........... মার্কা, বিরক্তিকর লেখা ইনকিলাব কেন ছাপে - তাই বুঝলামনা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন