মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

‘সন্ত্রাসীরা মুষ্টিমেয়, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হউন’

সৈয়দ মাহাবুব আহামদ রাঙামাটি থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ৯:১০ পিএম

‘কোনো শক্তিই রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারে না। রাষ্ট্র এমন একটি শক্তি যে শক্তি চাইলে যে কোনো শক্তিকে যে কোনো সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে রাষ্ট্র কোনো নিবর্তনমুলক কর্মকান্ড গ্রহণের আগে বিভিন্ন আঙ্গিকে চিন্তা-ভাবনা করে এবং তার অধিভূক্ত নাগরিকদের সুবিধা অসুবিধার কথা মাথায় রেখে ক্ষেত্র বিশেষে ছাড় দেয় বলেই অনেক সময় সন্ত্রাসীরা ছাড় পেয়ে যায়। তবে মনে রাখতে হবে এই ছাড় সাময়িক। সমঝোতা মুলক পন্থায় কোনো সমস্যা সমাধান না হলে রাষ্ট্র তখন কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য হয়। আর রাষ্ট্র যখন কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন সকল শক্তিই তার কাছে পদনত হতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশের জঙ্গী তৎপরতা নির্মূল করে রাষ্ট্র সে প্রমাণই দিয়েছে’। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যে বেপরোয়া আচরন করছে তার প্রতি ইঙ্গিত রেখে এমন মন্তব্যই করেছে রাঙামাটির সামরিক বেসামরিক প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ। তাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ‌বান জানিয়ে বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ যত সহ্য সহ্য করবে সন্ত্রাসীরা তাদের উপর ততই চেপে বসবে’।
গত বুধবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসন আয়োজিত হেডম্যান কার্বারীদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এমন বক্তব্য দেন কর্মকর্তাগণ। বুধবার রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, সেনাবাহিনী রাঙামাটি রিজিয়নের অধিনায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুক পিএসসি। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর কবির, রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল রিদওয়ানুল ইসলাম, রাঙামাটি জেলা হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা ও জেলা পরিষদ সদস্য অংসুই প্রু চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে রাখেন, এনএসআই ডিডি সানোয়ার হোসেন, হেডম্যান-কার্বারী এসোসিয়েশন রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক কেরল চাকমা, রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী প্রমুখ। সভায় জেলার ১০ উপজেলার সকল মৌজা প্রধান হেডম্যান ও গ্রাম প্রধান তথা কারবারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মতামত প্রদানকালে তারা এলাকার ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা, হেডম্যান কার্বরীদের বেতন-ভাতা ও হেডম্যান অফিস করার বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন এবং বাঘাইছড়ির একটি মৌজায় স্লুইসগেট নির্মাণের প্রস্তাব দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটি ৩০৫ পদাতিক বিগ্রেডের অধিনায়ক গোলাম ফারুক বলেন, সন্ত্রাসীদের বাড়াবাড়ি এবং চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে পেশিশক্তি প্রদর্শন ও অস্ত্রবাজির কারণে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। একই কারণে সাধারণ মানুষ এই চুক্তি প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না। তিনি বলেন, চুক্তি করে অস্ত্র সমর্পণের পর অধিকার আদায়ের নামে আর কারো অস্ত্রবাজি করা বা অস্ত্রের ভয় দেখানো সুযোগ নেই। চুক্তির কোনো পক্ষ যদি অস্ত্র প্রদর্শন করে তবে তা চুক্তির শর্ত ভঙ্গেরই সামিল। পার্বত্য অঞ্চলে যারা অব্যাহতভাবে অস্ত্রবাজি করছে তারা কারা? আপনারা প্রকাশ করুন, কারা আপনাদের শান্তি ভঙ্গ করছে তাদের ধরিয়ে দিন, অস্ত্রধারীরা প্রায় সকল এলাকায় বিরাজমান। যেখানে সেখানে তারা অস্ত্র হাতে মানুষকে অত্যাচার করছে, চাঁদাবাজি করছে। এদের প্রতিহত করতে না পারলে পাহাড় পিছিয়েই থাকবে, উন্নয়ন ব্যাহত হবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা সুদুর পরাহত হয়ে পড়বে।
ব্রিগেডিয়ার বলেন, শান্তি চুক্তির আগে যারা জুমল্যান্ড এর স্বপ্ন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যখন সোচ্চার হয়েছে তখন তারা কোন ঠাসা হয়ে পড়েছিল। এক পর্যায়ে তারা বাধ্য হয়ে নিজেরাই অস্ত্র বিবরতির ঘোষণা দেয়। একপাক্ষিক এই অস্ত্র বিরতি পাঁচ বছর চলার পর সরকার চুক্তি করেছে। সে সময় চুক্তি করার কারণে তারা বেঁচে গিয়েছিল, অস্ত্র সমর্পণ করে চুক্তি না করলে তারা তখনই নিশ্চহ্ন হয়ে যেতো। রাষ্ট্রের মধ্যে জুমল্যান্ড গঠনের ধারণা একটি ভ্রান্ত ধারণা, কারণ কোনো রাষ্ট্রই কোনো কিছুর বিনিময়ে রাষ্ট্রের কোনো অংশ কারো হাতে কখনই ছেড়ে দিবে না। সুতরাং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
রিজিয়ন কমান্ডার আরো বলেন, গত ৩ ও ৪মে’১৮ইং নানিয়ারচর হত্যাকান্ডে ঘটনায় মামলা হয়েছে। সকলকে বলতে চাই, যারা সাধারণ মানুষ, তারা কখনো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না। আপনারা নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে চলাফেরা করুন, স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করুন। পালিয়ে বেড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। কারণ প্রশাসন সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি করবে না। তবে যারা পালানোর তারা পালাবেই। কারণ সন্ত্রাসীদের কোন ছাড় নেই। তারা জানে, তারা কি করছে।
জেলাপ্রশাসক হেডম্যান সমস্যা আন্তরিকতার সাথে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসীদের ভয় পাবেন না। তারা মুষ্টিমেয় কয়েকজন মাত্র। রাষ্ট্র চাইলে যে কোনো সময় এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে। আপনারা সচেতন হোন এবং প্রশাসনকে সহযোগীতা করুন। সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মী হয়ে না থেকে তাদের প্রতিরোধ করুন। জনগণ সোচ্চার হলে সন্ত্রাসীরা বাড়তে পারবে না।
পুলিশ সুপার বলেন, আপনারা যতক্ষণ সন্ত্রাসীদের সহ্য করতে থাকবেন তারা ততই চেপে বসবে। সারাদেশের দিকে তাকিয়ে দেখুন বিদেশী মদদপুষ্ট জঙ্গীদের বিরুদ্ধেও যখন যনগণ সোচ্চার হয়েছে তখন তারা আর সুবিধা করতে পারেনি। আপনার অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে আসুন, যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহায়তা নিন। তাহলে আজ যেমন স্বাক্ষীর অভাবে মামলা হয় না এই সংষ্কৃতি দুর হবে।
বক্তরা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে মুক্ত চিন্তা, মুক্ত গণতন্ত্রের আলোকে নিজেরা রাজনীতি করবে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু তার সাথে সাথে সকলকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামাজিক ভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন