শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বন্দুকযুদ্ধে আট জেলায় ৯ জন নিহত

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সারাদেশে পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৯ জন নিহত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার ভোর পর্যন্ত এসব বন্দুকযুদ্ধে এর মধ্যে কুষ্টিয়াতে দুইজন এবং জামালপুর, ফেনী, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, লালমনিহাট ও কুমিল্লায় একজন করে নিহত হয়েছে।
গত ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে চলছে মাদক বিরোধী অভিযান। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে দেশজুড়ে নিহতের সংখ্যা ৪৪ জন, যার মধ্যে গত চার দিনে নিহত হয়েছে ৩২ জন।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, নিহত সবার বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা ছিল এবং তারা মাদক ব্যবসায়ী। আর প্রত্যেকেই নিহত হয়েছে বন্দুকযুদ্ধে। আইন-শ্ঙ্খৃলা বাহিনী নিজেদের জীবন বাঁচাতেই গুলি চালিয়েছেন বলেও তারা জানান। ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের ভয়াল ছোবলে আক্রান্ত আমাদের তরু প্রজন্ম। দেশব্যাপী মাদকের এমন মহামারি অবস্থা দূর করতে এবং মাদক নির্মূলে জোর অভিযান পরিচালনা করছে সরকার।
পুলিশ ও র‌্যাব বলছে, নিহতরা হলেন- রংপুর সদর উপজেলার শাহিন মিয়া (৩০), কুমিল্লা সদর উপজেলার নুরুল ইসলাম ইসহাক ওরফে ইসা (৪০), কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ফটিক ওরফে গাফফার (৩৭), একই জেলার ভেড়ামারা উপজেলার লিটন শেখ (৪০), ফেনীর শহরতলী এলাকার মো. ফারুক (৩৫), গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার রাজু মিয়া, লালমনিরহাট সদর উপজেলার এশার আলী (৩৫) ও জামালপুরের শহরতলী এলাকায় নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) সংবাদাদাতা জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে র্শীষ মাদক ব্যবসায়ীক লিটন শেখ (৪৫) নিহত হয়েছে। পুলিশের দাবি এ ঘটনায় তাদর ১ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১টি এলজি অস্ত্র,৩ রাউন্ড গুলি ও মাদকদ্রব্য ৫শ পিচ ইয়াবা, ২ গ্রাম হিরোইন উদ্ধার করেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলার হাওয়াখালী মাঠের মধ্যে ইটভাটার কাছে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ভেড়ামারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, তার বিরুদ্ধে ভেড়ামারা থানার ৪টি মাদক মামলার রয়েছে। নিহত লিটন (৪৫) ভেড়ামারা উপজেলার নওদাপাড়া এলাকার মৃত গোলবার শেখ এর পুত্র।
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, পুলিশের ভাষ্যমতে, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় এলঙ্গিপাড়া গ্রামের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী গফ্ফার ওরফে ফটিক নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন এবং একটি শাটারগান উদ্ধার করেছে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম মেহেদী হাসান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় লাহিনীপাড়া এলাকা দিয়ে এবং হাউখালী ইটভাটার পাশ দিয়ে দুটি বড় মাদকের চালান আসছে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে অবস্থান নিলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যান। নিহত গফফার ওরফে ফটিক কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এলঙ্গিপাড়ার রফিকুলের ছেলে।
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, ফেনীতে র‌্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে মোঃ ফারুক(৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে শহরের দাউদপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাব ২২ হাজার পিস ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটার গান,৫ রাউন্ড কার্তুজ উদ্বার করে। নিহত ফারুক চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাকার অলি আহাম্মদের ছেলে। র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক শাফায়েত জামিল ফাহিম জানান, সে অনেক বড় মাদক সম্রাট। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অনেক মামলা রয়েছে। এর আগে ফেনীর লেমুয়া এলাকায় মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (৪৯) নামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত অপর এক মাদক ব্যবসায়ী র‌্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। এ পর্যন্ত ফেনীতে ৫ দিনে ৪ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।
লালমনিরহাট থেকে মোঃ আইয়ুব আলী বসুনীয় জানান, লালমনিরহাটে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আন্তঃজেলা মাদক বিক্রেতা এশার আলী (৩৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে সদর থানার দুই পুলিশ সদস্য। গতকাল বুধবার ভোরে সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ধরলার চরাঞ্চলে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানান, ঘটনাস্থল থেকে ২০কেজি গাঁজা, ৫০ বোতল ফেনসিডিল, গুলির খোসা ও ছয়টি রামদা জব্দ করা হয়েছে। লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক জানান, বুধবার ভোরে ধরলা চরাঞ্চলে মাদকবিরোধী অভিযান গেলে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এশার আলী নিহত হন। তার নামে দুই জেলায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
রংপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে রংপুর মহানগরীর হাজিরহাট এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে শাহিন মিয়া (৩০) নামে তালিকাভুক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) সাইফুর রহমান সাইফ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নগরীর হাজিরহাট ব্রীজ এলাকায় তালিকা ভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী শাহিন মিয়া ও তার লোকজন মাদক বেচাকেনা করছিলন। এসময় পুলিশের একটি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছালে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে শাহীন মারা যান এবং অন্যরা পালিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রাজু মিয়া নামে অপর এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে গাইবান্ধার র‌্যাব-১৩ এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নিহত রাজু পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের রাইগ্রামের মৃত আব্দুল জোব্বারের ছেলে। র‌্যাব জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার ভোরে উপজেলার বিশ্রামগাছি গ্রামে মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় রাজু। এ সময় র‌্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই রাজু নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি ও গাঁজা জব্দ করা হয়েছে। রাজুর বিরুদ্ধে পলাশবাড়ী থানায় মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও র‌্যাব জানিয়েছে।
আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভাতারমারী ফার্ম নামক স্থানে গতকাল বুধবার ভোর ৪টার দিকে পুলিশের সঙ্গে অপর এক বন্দুকযুদ্ধে আলতাফুর নামে একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি সে একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।
কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন জানান, পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ইসহাক ওরফে ইছা নামে এক মাদক ব্যবসায়ি নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের সামারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। নিহত ইসহাক আদর্শ সদর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী গাজীপুর গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে। পুলিশ জানায়, এসময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে ২৬ রাউন্ড পাল্টা গুলি চালায়। উভয়পক্ষের গোলাগুলির সময় মাদক ব্যবসায়ী ইসহাকের সহযোগিদের গুলিতেই সে গুরুতর আহত হয়। পরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় পৃথক ৩টি মামলা হয়েছে।
আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, জামালপুরে মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের গুলিতে ১৬ মামলার এক আসামি নিহত হয়েছে। জামালপুর সদর থানার ওসি নাছিমুল ইসলাম বলছেন, মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে পৌর শহরের ছনকান্দা মাদ্রাসা ঘাটে পুলিশের সঙ্গে মাদক চোরাকারবারিদের গোলাগুলির মধ্যে ওই ব্যক্তি নিহত হয়। নিহত মোশারফ হোসেন বিদ্যুৎ (৪৮) জামালপুর পৌরসভার বগাবাইদ এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তার স্ত্রী শিল্পীর নামে রয়েছে মাদকের আটটি মামলা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, এক হাজার ইয়াবা এবং ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন