মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতের সংখ্যা শত ছাড়াল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অভিযান শুরুর পর এ নিয়ে গত ১৫ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৩ জন। নিহতরা সবাই মাদক কেনা-বেচায় জড়িত বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে তাদের বক্তব্য ও ঘটনার বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা পড়ার কথা জানানো হলেও এখন গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের খবর দিয়ে বলা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গোলাগুলিতে মারা পড়ছে তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তারা মাদকের বিরুদ্ধে অলআউট যুদ্ধে নেমেছেন, নির্মূল না হওয়া পযন্ত অভিযান চলবে। সারাদেশে গত সোমবার দিবাগত রাত ও গতকাল মঙ্গলবার ভোরে বন্দুকযুদ্ধে ১৩জন নিহত হয়েছে। কুষ্টিয়া, যশোর ও কুমিল্লার মুরাদনগরে ছয়, রাজধানী ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ, বরগুনা ও ময়মনসিংহে একজন করে নিহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়, পহেলা রোজা থেকে ১০ রোজা পর্যন্ত মাদক বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯০২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে সাত হাজার ২৬টি। প্রায় সাড়ে ৪১ কোটি টাকার ১৭ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। দুই হাজার ২৮৬ কেজি গাঁজা, দেশি মদ ৫৫ হাজার লিটার, ২৩ কেজি হেরোইন, ১৬ হাজার ফেনসিডিল ও বিদেশি বিয়ারের ক্যান এক হাজার ২১০টি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ খানের আশিয়ান সিটি মাঠে সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় সুমন ওরফে খুকু সুমন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। ঢকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার নূরুল আলম বলেন, সুমন ওই এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা এবং তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনের চারটি মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি ককটেল এবং এক হাজার ইয়াবা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জনি মিয়া (৩০) নামে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা সদরের খালাজোড়া এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত জনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার খাইয়ার এলাকার ফিরোজ মিয়ার ছেলে। তারা আখাউড়া উপজেলার রেলওয়ে কলোনী সংলগ্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো। পুলিশের দাবি, মাদক ব্যবসায়ী ও ডাকাতদের দু’পক্ষের গোলাগুলিতে জনি নিহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মাদক ও ডাকাতিসহ নানা অভিযোগে আটটি মামলা রয়েছে।
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শেহালা মাঠে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ দুই মাদক ব্যবসায়ী মুকাদ্দেস আলী (৪২) ও ফজলুর রহমান ওরফে টাইটেল (৪৮) নিহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করেছে। দৌলতপুর থানার ওসি (তদন্ত) আজগর আলী জানান, একদল মাদক ব্যবসায়ী দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শেহালা মাঠে মাদক ক্রয় বিক্রয় করছে এমন গোপন সংবাদ পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের টহল দল সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুইজন মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে দৌলতপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুলিবিদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীদের মৃত ঘোষনা করেন। নিহতরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে মুকাদ্দেস আলী ও প্রাগপুর বাজারের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে ফজলুর রহমান ওরফে টাইটেল।
যশোর ব্যুরো জানায়, যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকায় সোমবার মধ্যরাতে গোলাগুলিতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী। নিহরা হচ্ছেন আতর আলী ও মানিক। তাদের বাড়ি চাঁচড়া রায়পাড়া ও ষষ্টিতলাপাড়ায়। মধ্যরাতে মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে ওই দুইজন নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুটি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলির খোসা এবং ইয়াবা উদ্ধার করে।
কলারোয়া (সাতক্ষীরা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কলারোয়া উপজেলার উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পাকুড়িয়া গ্রামের সুরত আলীর পুত্র আনিছুর রহমান (৪০) এর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কলারোয়া থানার ওসি জানান, গত সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ২ টায় খবর আসে কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের চিতলা মাঠে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দুই দল মাদক চোরাচালানীর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে। এসময় একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে গোলাগুলি নিয়ন্ত্রণে ৩ রাউÐ ফাকা গুলি বর্ষণ করে। এতে গোলাগুলি থেমে যাওয়ার পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, ২ রাউÐ গুলি ও ৭০ পিস ইয়াবা সহ গুলিবিদ্ধ আনিছুর রহমানকে উদ্ধার করে। পরে কলারোয়া হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। আনিছুরের বিরুদ্ধে ১০ টি মাদকের মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। স্থানীয়রা জানায়, গত সোমবার সকাল ৯ টায় প্রকাশ্য দিবালোকে কতিপয় সাদা পোষাকধারী ব্যক্তি কলারোয়া থানার পুলিশ পরিচয়ে ঘরে বিছানায় শুইয়ে থাকা অবস্থায় আনিছুরকে ধরে নিয়ে যায়। নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম জানায়, তৎক্ষণাত তিনি খোর্দ্দ পুলিশ ফাড়ি ও কলারোয়া থানায় গেলে তার স্বামীকে আটক করা হয়নি বলে জানানো হয়। ফলে দ্রæত তিনি প্রথমে কলারোয়া এবং পরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। পরে কলারোয়া থানায় জিডি করতে গেলে কতৃব্যরত ডিউটি অফিসার তা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানায়। তবে কলারোয়া থানার ওসি নিহত আনিছুরের স্ত্রী নাজমা বেগমের বক্তব্য সম্পর্কে জ্ঞাত নয় জানেনা বলে জানান।
স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শেহালা মাঠে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দু’জন নিহত হয়েছে। তারা হলো, মুকাদ্দেস আলী (৪২) ও ফজলুর রহমান ওরফে টাইটেল (৪৮)। নিহত দুইজনই মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশ জানিয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শেহালা মাঠে এ ঘটনা ঘটে। দৌলতপুর থানার ওসি (তদন্ত) আজগর আলী জানান, একদল মাদক ব্যবসায়ী দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শেহালা মাঠে মাদক ক্রয়-বিক্রয় করছে- এমন গোপন সংবাদ পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের টহল দল রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে দু’জন মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে দৌলতপুর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় পুলিশের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে হারুন (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ি নিহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর রাতে উপজেলার শীতলপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত হারুন হরিপুর উপজেলার শীতলপুর এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে বলে জানা যায়। পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে উপজেলার শীতলপুর এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় হারুনসহ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এসময় পুলিশ মাদক ব্যবসায়িদের লক্ষ্য করে পাল্টাগুলি চালায়। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি গুলি বর্ষনের ফলে হারুন ঘটনাস্থলে নিহত হয়।
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহের ভালুকায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো: মিজান (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ২ টার দিকে উপজেলার পাড়াগাঁও চটনপাড়া সামাদ ফকির বাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মিজান উপজেলার দক্ষিণ কাঁচিনা এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। পুলিশের দাবি, নিহত এ মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও ডাকাতিসহ ৮ থেকে ৯ টি মামলা রয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মো: আশিকুর রহমান আরো জানান, এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গ্রাম হেরোইন, তিনটি গুলির খোসা, ১টি রামদা ও ১টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার বেতাগীতে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ফিরোজ মৃধা নামে এক মামলা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোররাতে কাজিরাবাদ ইউনিয়নের কুমড়াখালি এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। বেতাগী থানার ওসি মামুনুর রশিদ জানান, ফিরোজের বিরুদ্ধে নয়টি মাদক মামলা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন