মাহমুদুল হক আনসারী
পহেলা বৈশাখ ১৪২৩ বাংলা নববর্ষকে স্বাগতম। বৈশাখ মানে বাঙালির ঘরে ঘরে আনন্দ, উৎসব, লাল, সবুজ, নতুন জামাকাপড়ের গন্ধ, বৈশাখ মানে নতুন খাতা, বৈশাখ মানে বিগত দিনের মলিনতা দূর করে নতুনকে স্বাগতম জানায়, ঘরে ঘরে আনন্দ-উৎসব, অফিস-দোকান-রেস্তোরাঁ-হোটেলে আনন্দের উৎসব, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ, যুবক-যবুতীর আনন্দ-ভালোবাসার উৎসব। অতীতকে ভুলে নতুনকে বরণ করা, বাজারে নতুন বৈশাখকে বরণ করার নানা আয়োজন চলছে। সামাজিক ব্যবসায়িক পেশাজীবী, শিশু-কিশোর, নানা সংগঠন অধীর আগ্রহে নববর্ষকে বরণ করতে সাজসাজ রব। বাঙালির ঘরে ঘরে নতুন নতুন পোশাকের আনাগোনা। কী মজার আনন্দ, শিশু, মহিলা, যুবক-যুবতী সবার চাই লাল-সবুজ রঙের নতুন কাপড়। মার্কেট-দোকান এখন সবখানেই লাল-সবুজের জামাকাপড়ের বিকিকিনি চলছে। ছেলে, ছেলের মা, মেয়ে, মেয়ের দাদি, নানী সবাই চায় নতুন বর্ষকে বরণ করতে। নতুন জামাকাপড়, বাঙালির নববর্ষ মানে মহাআনন্দ আর খুশি, সব গোত্র ভেদাভেদ নেই। আনন্দের উৎসবে মেতে ওঠে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত। বৈশাখ পালনে ধর্মীয় কোনো বাধা দেখা যায় না। ঘরে ঘরে, পাড়া-মহল্লায় সর্বত্রই পালিত হয় এ উৎসব। উৎসবে বাংলার গ্রামগঞ্জের, ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা আয়োজন দেখা যায়। বিভিন্ন পেশার আদর্শের মানুষের সমাগম। সবাই সম্মিলিতভাবে পালন করে বাঙালির নববর্ষ। মেলায় মেলায় নানা ধরনের হস্তশিল্প। গ্রামের চেহারা এ হস্তশিল্পে দেখা যায়। হাতের তৈরি নানা শিল্প দেখতে পাওয়া যায় মেলাগুলোতে। বেচাবিক্রিও ভালোভাবে হয়। নানা আয়োজনে পালিত এ উৎসব বাংলার ঘরে ঘরে, শহরে নগরে পালিত হয়। প্রতিটি স্কুল-কলেজের মাঠ, গ্রামের উন্মুক্ত স্থানে আনন্দের উৎসব মাসব্যাপী চলতে থাকবে। চলবে উৎসবকে ঘিরে নানা ধরনের হস্তশিল্পের বিপুল সমারোহ। ব্যাপকভাবে বেচাবিক্রিও হয়। গ্রামের জনপদে নানা ধরনের আয়োজনের মধ্যে দেখা যায় বলি খেলা, হা-ডু-ডু খেলা, বিস্কুট খেলা, নৌকা বাইচ, ঘুড়ি উড়ানো। নানা ধরনের গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খেলা। মজা করে গ্রামের এ খেলাধুলা উপভোগ করে নানা বয়স ও পেশার মানুষ। নানা ধরনের সংগঠন নানাভাবে এ বর্ষ পালনে নানা রঙের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। পাড়া-মহল্লায়, অফিস, ঘরবাড়ি, দোকানÑ সর্বত্রই সাজসাজ রব। সবাই এ বর্ষকেই বরণ করতে নতুনভাবে সাজিয়ে থাকে। ভালোবাসার অধীর আগ্রহে আন্তরিকতা নিয়ে বর্ষবরণ হয় বাঙালির প্রতিটি জনপদে। আনন্দে-খুশিতে নেচে গেয়ে মুখরিত থাকে প্রতিটি জনপদ। নানা আয়োজনে পালিত হয় বর্ষবরণ। খুশিতে বিভোর থাকে সব বয়সের মানুষ। বৈশাখে আমার হিসাবের খাতায় হালনাগাদ, বৈশাখে আমার ঘরে ঘরে মিষ্টি মুখের আনন্দ। বৈশাখ মাস এলেই জব্বারের বলি খেলা, হস্তশিল্পের সমারোহ ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা ধরনের কারুশিল্প দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের শিল্প-সাহিত্য এগিয়ে চলুক। সাহিত্য-সংস্কৃতি গ্রামের কথা ব্যাপকভাবে উঠে আসুক, সমৃদ্ধি অর্জন করুক। নতুন প্রজন্মকে তাই আমাদের শেখানো উচিত। আমাদের সংস্কৃতির নামে ভিন দেশি সংস্কৃতি লালন না করাই ভালো। নিজস্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমাদের জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। এ দেশের মানুষ ধর্মে-কর্মে, আচার-আচরণে ভদ্র ও মার্জিত। কাপড়-চোপড় পরিধানে মার্জিত ও শালীনতাপূর্ণ। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি পালনে-লালনে-মাননে আমরা সক্রিয় থাকায় আমাদের আপ্যায়ন, অতিথিপরায়ণ কেউ যেন কেড়ে নিতে না পারে। নারী-পুরুষ সবার চলনে-বলনে মার্জিত হওয়া আমাদের দাবি। কাপড়-চোপড়ে মার্জিত, শালীনতা বাঙালি জনগণের ঐতিহ্যগত রুচি। এ রুচিকে যে কোনো মূল্যে ধরে রাখা চাই। ভিন দেশি আচার-অনুষ্ঠানে আমাদের প্রজন্ম যেন হারিয়ে না যায় তা দেখার-বোঝার দায়িত্ব সচেতন শ্রদ্ধেয় অভিভাবক মহলের আছে। আমার সংস্কৃতি, আমার শিক্ষা, আচার-ব্যবহার অনুষ্ঠান কোনদিকে যাচ্ছে তা আমাকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে। ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি বাঙালির ঐতিহ্যবিরোধী কোনো অনুষ্ঠানকে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি হিসেবে চালিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। নতুন প্রজন্মকে আমাদের সব দিবসের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞানদান করা অভিভাবক, স্কুল-কলেজের সম্মানিত শিক্ষকম-লীর দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। আমাদের সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, কৃষ্টি-কালচার থেকে আমরা দূরে যেতে পারি না। আনন্দে-উৎসবে আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে উৎসাহিত করতে হবে। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে সব ধরনের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে আমাদের বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য সংস্কৃতি প্রতিফলিত হোক আজকের দিনে সেটাই প্রত্যাশা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন