উত্তর : বড়দের মতো ছোটদেরও থাকে কচি কচি স্বপ্ন-আশা। থাকে মন ভরা ভালোবাসা আর বুক ভরা আনন্দ-উচ্ছাস। কিন্তু তারা এগুলো সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারে না। আর তাই তাদের এ প্রকাশভঙ্গির রূপ হয় অবুঝ মনের অবুঝ হাসি আর আনন্দটাই। যখন সন্তান আরেকটু বড় হয় তখন সে বুঝে কে মা আর কে বাবা। সাত বছর বা তার চেয়ে একটু বাড়লে বা বুঝতে সক্ষম হলে সে তখন ভালো-খারাপ জিনিসও মোটামুটি অনুমান করতে পারে। এ জন্য বড়দের দেখে দেখে ছোটরা অনেক সময় বড়দের কৃত কাজ নিজেরা করতে চেষ্টা করে।
বড়রা যা করে তাকেই ভালো হিসেবে ধরে নেয়। বড়রা নামাজ পড়লে সেটাকে আদায় করতে (উঠা বসার মাধ্যমে) চেষ্টা করে। এমনকি মসজিদেও নিয়ে যেতে বায়না ধরে। তদ্রুপ রমজান এলে রোজা রাখার ক্ষেত্রেও তারা উৎসাহী হয়ে ওঠে। শত বারণেও তাদের সে আবেগ রোখা যায় না। পিতা মাতার আদরের এ ধণ-রত্মরা এমনটি করলে একদিকে যেমন অভিভাবকদের আনন্দ শিহরণ খেলে যায় অন্য দিকে বাবা মা তাদের শরীর স্বাস্থ্য নিয়েও নিয়মিত চিন্তায় পড়ে যান। আল্লাহর বিধানের একটি কোমল হৃদয় উৎসাহী হলে সেটা বাবা মায়ের গর্বের বিষয়, আর এখানে শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকাই কল্যাণ। এমন তো নয় সে বৃষ্টিতে ভিজে জর নিয়ে আসবে বা ময়লা-আবর্জনার স্তুপে গিয়ে অসুস্থতার শিকার হবে। বরং সে যে ছোট্ট আবেগ ব্যবহার করছে তা তাকে করতে দেয়া ভালো। এক সময় তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হলে আর রোজার প্রতি কোনো অবহেলা সৃষ্টি হবে না। এ জন্য প্রত্যেক সন্তানের জীবনের শুরুর দিককে ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার এবং উৎসাহ-উদ্দিপনা দিয়ে বেষ্টন করে রাখা বাঞ্ছনীয়। কারণ আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার।
দুঃখের বিষয় আজ আমাদের সমাজের এক দিকে তাকালে দেখা যায়, অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে সন্তানই মাহে রমজান এলে রোজার প্রতি চরমভাবে গাফেল হয়ে যায়। বলতে দ্বিধা নেই যে, এরাই এক সময় জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে রোজার দিনে বাজার বা রাস্তায় অবস্থিত রেস্টুরেন্টগুলোতে লাল পর্দার অভ্যন্তরকে ভরপুর রাখে। পিতা মাতা যদি রোজা রাখে তারা কেন রাখতে পারলো না! সেহরীর সময় যে সন্তান ঘরে থাকে, বাবা মায়ের উচিত তাকে ঘুম থেকে আদর এবং যত্মের সাথে সেহরীর জন্য জাগানো। আর ছেলে-সন্তান আগে জাগলে বাবা মাকে ঘুম থেকে জাগানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখা। এতে পিতা মাতা ও ছেলে সন্তানের মধ্যে এক অদৃশ্য মোহাব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। সন্তান কষ্ট পাবে এমন ভেবে যদি কোনো পিতা মাতা নিজ সন্তানকে রোজা রাখাতে অভ্যস্থ না হয় তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে তাদের উপর এই সুযোগ প্রদানটাই একসময় চরম অবিচার হিসেবে সাব্যস্ত হবে। কারণ এই ঘুম এবং এই অলসতার জন্য খোদার বিধান থেকে বিমুখ থাকার কারণে বাবা মা-ই প্রথমে দায়ী থাকবে।
এজন্য আমাদের মতো আমাদের ছেলে-সন্তানও যেন মাহে রমজানের বরকত থেকে মাহরুম না হয়। সমাজের ঘরে ঘরে অবস্থিত অনাগত দিনের প্রতিটি শিশুরা হয়ে উঠুক আগামী দিনের মুক্তি ও কল্যাণের দিশারী হিসেবে। একজন মা অথবা বাবার খোদাভীতি ছড়িয়ে যাক গৃহের প্রতিটি হৃদয়ে। সর্বপরি মানব সভ্যতার ছোট অঙ্গন থেকে বৃহৎ অঙ্গন সিয়ামের শিক্ষায় আল্লাহর দিকে মনোনিবেস করুক। এই প্রত্যাশা করি।
উত্তর দিচ্ছেন : মিযানুর রহমান জামীল
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন