দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী পরিদর্শনে এসে মায়া বলেছেন, বন্যা দুর্গত মৌলভীবাজার সহ বৃহত্তর সিলেটের যে সব জায়গায় পানি বন্দি মানুষ কষ্টে আছেন তাদের জানমাল রক্ষা করা এটি হলো আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। যতো দিন পর্যন্ত বন্যার্তদের দু:খ দুর্দশা ও কষ্ট লাঘব হবে না ততদিন পর্যন্ত এ ত্রাণ দেয়া অব্যাহত থাকবে। আমাদের ত্রাণের কোন অভাব নাই। এলাকার মানুষের যে চাহিদা তার চেয়ে বেশী ত্রাণ দিতে সক্ষম হবো।
সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজার সার্কিট হাউসে প্রশাসনসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে বৈঠক শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেছেন। পরে মন্ত্রী বন্যা দুর্গত এলাকা শহরের বড়হাট ও রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকা পরিদর্শন করেন এবং দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
ভারতের উত্তর ত্রিপুরায় উল্লেখ যোগ্য বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে মনু নদীর বারইকোণাতে প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গন দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পৌর এলাকা ও সদর উপজেলার মোস্তফাপুর এবং কনকপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরের বড়হাট এলাকায় আটকাপড়া মানুষদের সেনাবাহিনী সহ স্থানীয় জনগন উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাতের বেলা আকস্মিক এই ভাঙ্গনের ফলে নিজ ঘরে আটকা পরে অনেকে। পানি ঢুকে ঘরের মূল্যবান মালামাল ডুবে নষ্ট হয়েছে। অনেকেই বাড়ির দোতালায় আশ্রয় নিয়েছেন আবার অনেককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে আনা হয়েছে। গতকাল রাতে শহরতলীর মোস্তাফাপুর এলাকায় পানির তোড়ে সোবহান নামের একজন মারা গেছে। এ পর্যন্ত জেলায় পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে ৮ জন মারা গেছে।
যারা বন্যা কবলিত এলাকার দোতালা বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন তারা বিদ্যুৎ , বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকটে পড়েছেন। আবার আটকা পড়া অনেকের আত্মীয়স্বজন উদ্ধার করে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান।
সোমবার দুপুরে শহরের বড়হাট এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে গেলে দেখা যায় বাঁধের উপর ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার পলিথিন দিয়ে তৈরি করা চাউনির মধ্যে রাত্রিযাপন করছেন। আবার অনেকেই খোলা আকাশের নীচে রাত্রিযাপন করছেন। বাঁধে আশ্রয় নেয়া শেলী বেগম, জেবিন আক্তার, বাদশা মিয়া, রহমত আলী জানান ঈদের আগের রাত থেকে তাদের ঘুম নেই কখন বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যায় এই আতঙ্কে। বাঁধ ভাঙ্গার পর আসবাবপত্র ফেলে কোন রকম নিজের প্রান নিয়ে তারা বাঁধে আশ্রয় নেন।
দিকে সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামর কোনা এলাকায় কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে হামর কুনা, ব্রাম্মনগাঁও এবং দাউদপুর এরাকার বাড়ি ঘর ও রাস্তা ঘাট তলিয়ে যায়।
গত কয়েক দিনের অব্যাহত বন্যায় মনু, কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থানে ২৫ টি ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে বন্যা দেখা দেয়।
মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাটে মনুনদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনও বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুরে মনু নদীর পানি ও কমলগেঞ্জ ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে জানান, জেলার একটি পৌরসভা ও ৪টি উপজেলায় সেনাবাহিনী কাজ করছে। এ পর্যন্ত ৬০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নগদ ১০ লক্ষ টাকা বন্যা আক্রান্ত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। আরো বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলা, উদ্ধারকাজ ও অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিস কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও সার্বিক তদারকিতে রয়েছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও মৌলভীবাজার পৌরসভা। জেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে এ পর্যন্ত ৭জন মারা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, আজ সকাল ১০টায় মনু নদীর পানি মৌলভীবাজার শহরের কাছে চাঁদনীঘাট পয়েন্টে ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু রেলওয়ে ব্রীজের কাছে বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ও কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদী বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন