রাস্তায় গাড়ি চলাচলের শব্দ, রোদ-বৃষ্টি, ধুলাবালির মধ্যেও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খোলা আকাশের নিচে রাতদিন অবস্থান ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারিরা। এমপিওভুক্তির দাবিতে রোববার পর্যন্ত টানা ৭ দিন অনশনসহ ২২ দিন ধরে অবস্থান করছেন তারা। দিনের পর দিন অনশনের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শতাধিক শিক্ষক।
খুলনা থেকে আসা মাদ্রাসা শিক্ষক আসগর আলি ইনকিলাবকে বলেন, “আজ ১৭ বছর ধরে বিনাবেতনে শিক্ষা দিয়ে আসছি। আমার বয়স হয়েছে, অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এই শরীর নিয়ে খোলা আাকাশের নিচে এখানে অবস্থান করছি। দিনে ধুলাবালি আর রাতে গাড়ির শব্দে একটুও ঘুমাতেও পারি না।’’
আন্দোলনরত শিক্ষদের আনেকের ছাত্ররা আজ বড় অফিসার হিসেবে কর্মরত আছে। বিনা বেতনে চাকরি করে তারা আজ রাস্তার ফকিরের মতো জীবনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। রাজশাহী থেকে আসা রাসেদুজ্জামান নামে এক শিক্ষক ইনকিলাবকে বলেন, ‘‘আমি ১৮ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করে আসছি। আজ আমার ছাত্ররা একজন এমবিবিএস ডাক্টার, একজন র্যাবের কর্মকর্তা। অথচ আমরা আজকে ফুটপাতের ফকিরের মতো জীবন যাপন করছি।” আমরা প্রাধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি কতদিন আর এভাবে বিনা বেতনে চাকরি করবো? অন্তত আমাদের সম্মানটুকু দিয়ে আমাদেরকে রক্ষা করেন।”
দিনের পর দিন খোলা আকাশের নিচে আন্দোলন করতে গিয়ে শিক্ষকরা গুরুতর আসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন। তিনি বলেন, “রোববার সপ্তম দিনের মতো অনশনসহ টানা ২২দিন ধরে অবস্থানে ১৫৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ২৬ জনের শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।”
ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, “এখানে আমরা যারা আন্দোলন করছি অধিকাংশই মাস্টার্স পাশ। অন্তত ডিগ্রি পাশের নিচে কেউ নেই। এক একজন ১৫-২০ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করে আসছেন। এভাবে না খেয়ে আর কতদিন চাকরি করবো? আমাদের প্রতি কি সরকারের এতটুকুও দয়া হয় না!”
উল্লেখ্য, এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন। টানা ওই অবস্থান ও অনশনের একপর্যায়ে ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে আশ্বাস দেন। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলেননি। তারপর থেকেই এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন