রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

জাটকা আহরণ পরিবহন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা শেষ

বাড়ছে ইলিশ উৎপাদন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ইলিশ


দেশে চলতি অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন সোয়া পাঁচ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। ২০১৬-১৭ বছরে জাতীয় এ মাছের উৎপাদন ছিল ৪লাখ ৯৬হাজারর টন। যা সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে ৫লাখ টন অতিক্রম করেছে। এ দাবী মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ইলিশের উৎপাদন হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে তা প্রতি বছর ৪-৮% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের ৫০Ñ৬০% এখন বাংলাদেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। এর বাইরে মায়ানমারে ২০Ñ২৫% এবং অবশিষ্ট ১০-১৫% ইলিশ ভারতে আহরিত হয়। আমিষের চাহিদা পুরনে মৎস্য সেক্টর অত্যন্তÍ গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর এরই মধ্যে মৎস্য সম্পদে সয়ম্ভরতার দ্বার প্রান্তেÍ পৌছো আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান ১%-এরও বেশী। একক প্রজাতি হিসেবে মৎস্য সেক্টরে এ মাছের অবদান প্রায় ১২Ñ১৩%।
এদিকে ইলিশের বংশ বিস্তার সহ টেকসই স¤প্রসারনের লক্ষে জাটকা আহরন, পরিবহন ও বিপননে টানা ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা গত ৩০ জুন উঠে গেছে। এসময়কালে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত সাইজের যেকোন ইলিশ পোনা-জাটকা আহরন পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ ছিল। ‘মৎস সংরক্ষন আইনÑ১৯৫০’এর আওতায় ১নভেম্বর থেকে ৩০জুন পর্যন্ত জাটকা আহরন নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। এছাড়াও আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার দিন এর আগে ও পড়ের ২২দিন দেশের উপক‚লীয় ৭হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার মূল প্রজননস্থল সারা দেশেই ইলিশ আহরন পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ থাকছে।
মৎস বিজ্ঞানীদের মতে দেশের উন্মূক্ত জলাশয় বা নদ-নদীগুলোতে সারা বছরই কমবেশী ইলিশ ধরা পড়লেও জাটকা ধরার প্রধান মওশুম জানুয়ারী থেকে এপ্রিল। তবে কোন কোন বছর তা মে মাস পর্যন্তও বিস্তৃতি ঘটে। বিজ্ঞানীদের মতে, দেশে মোট ধৃত জাটকার ৩০-৪০% এপ্রিল মাসে ও ১৫Ñ২৫% মার্চে লক্ষ করা গেছে । আবার উপক’লীয় নদ-নদীগুলোতে নভেম্বর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত জাটকার আধিক্য লক্ষ করা গেলেও জানুয়ারীতেই সবচেয়ে বেশী জাটকা ধরা পড়ে। ইতোপূর্বে ব্যাপক হারে জাটকা আহরনের ফলে সরকার নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে জাটকা আহরন, পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ ঘোষনা করে।
গত ১নভেম্বর থেকে ৩০জন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সারা দেশে ১০সহশ্রাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ২হাজার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৩লাখ ৮০হাজার মিটার বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এছাড়াও ১হাজার ২৮০টি মামলা দায়ের ও ৫৫৫জন জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে। আইন অমান্যের কারনে এসময় জেলেদের কাছ থেকে ৬০লাখ টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। এছাড়াও আটককৃত নৌকা, ট্রলার ও রশি সহ অন্যন্য সরঞ্জাম নিলাম করে প্রায় ৩৫লাখ টাকা আয় করেছে সরকার। মৎস্য অধিদপ্তরের এসব কার্যক্রমের সিংহভাগই পরিচালত হয় বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলা সহ এর সন্নিহিত এলাকার নদ-নদী ও মাছের মোকামগুলোতে।
তবে এবারো জাটকা আহরন নিষিদ্ধকালীন ৮মাস সময়ে বেকার জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি অনুপস্থিত ছিল। নিষিদ্ধকালীন এ ৮ মাসের মধ্যে মাত্র ৪মাসের জন্য কিছু জেলের জন্য মাসে ৪০কেজি করে চাল বরাদ্ব দেয়া হয়। ১৭ জেলার ৮৫টি উপজেলার ২লাখ ৩৮হাজার জেলেকে চার মাসের জন্য ৪০কেজি করে চাল বরাদ্ব দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার মাস খানেক আগে, গত মে মাসে।
মৎস্য অধিদফ্তরের মতে, দেশের ৪০ জেলার সাড়ে ৪লাখ জেলে পরিবার ইলিশ আহরনের সাথে জড়িত। যার ৩২% সার্বক্ষনিক ও ৬৮% খন্ডকালীন এ পেশায় সম্পৃক্ত। এছাড়াও ইলিশ বিপনন, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরন, জাল, নৌকা ও বরফ তৈরী এবং মেরামত কাজে আরো ২০Ñ২৫লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তবে শুধু বরিশাল বিভাগেই সোয়া ৩ লাখ জেলে এ পেশার সাথে জড়িত। নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত টানা আট মাস জাটকা অহরনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রতিবছর নিম্ন মেঘনা, শাহবাজপুর চ্যানেল ও তেতুলিয়া নদীতে মার্চ ও এপ্রিল মাসে এবং পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীতে নভেম্বর থেকে জানুয়ারী মাসের সময়কালকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষনা করে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ রাখা হচ্ছে। এছাড়াও শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং দক্ষিনে চাঁদপুর জেলার মতলব ও শরিয়তপুর উপজেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০কিলোমিটার এলাকায়ও মার্চÑএপ্রিল মাসে অভয় আশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে বিজ্ঞানীদের সুপারিশে। এছাড়াও মৎস বিজ্ঞানীদের গবেষনা অনুযায়ী মেঘনার ভাটিতে সাগর মোহনার ৪টি এলাকার ৭হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘ইলিশ প্রজননস্থল’ হিসেবে চিঞ্হিত করে প্রতি বছর আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগেÑপড়ের ২২দিন সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ রাখা হচ্ছে।
ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে দেশে এখন কোন প্রকল্প চলমান নেই। ২০১৫-এর জুন মাসে ‘জাটকা সংরক্ষন ও বেকার জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান’ শির্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ সমাপ্তির পরে এলক্ষে প্রায় সোয়া ২শ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ একটি ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’পেস করার পরে গত বছরাধীককালেও তা অনুমোদন লাভ করেনি। ডিপিপি’টি প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠান হলেও জনবল মঞ্জুরীর প্রশ্নে তা আটকে গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন