বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রফতানি বহুমুখীকরণে অবহেলা

আচার ছাতা জুতা জুস কিছুই বাদ নেই আমদানি আর চোরাচালানে!

শফিউল আলম : | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

কাপড়, আচার-সস, চিপস, ছাতা, জুতা-স্যান্ডেল, জুস, মলম, খেলনা, ব্যাগ, সিগারেট কিছুই বাদ নেই আমদানি অথবা চোরাচালানে। দেদারসে আসছে হরেক রকমের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স, ভোগ্যপণ্য, গৃহস্থালী, সৌখিন দ্রব্য। প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার ছাড়াও চীন, থাইল্যান্ড থেকে বিশেষ করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্থল ও নৌপথে সীমান্ত পেরিয়ে দেশের বাজার হু হু করে সয়লাব করছে। আমদানি ও চোরাপথে আনীত এসব পণ্যসামগ্রী নিম্নমানের। শুধু তাই নয়; অত্যন্ত নিকৃষ্টমানের মিয়ানমারের আচার, মলম, ভারতের ত্বক ফর্সা করার ক্রিমসহ বাজে প্রসাধন সামগ্রী, চায়না ছাতা, জুতা কিংবা ভূটানের জুস চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ফেনীর বাজারে ‘বিদেশী’ উৎকৃষ্টমানের জিনিস হিসেবেই বিকিকিনি হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে মানহীন শুটকির আচার পর্যন্ত আসছে চোরাপথে। ঠকছে ক্রেতারা। আর দেশের বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে যাচ্ছে ওইসব দেশে।
অন্যদিকে আমদানি ও চোরাচালান উভয় পথে আসা উপরোক্ত পণ্যসামগ্রী দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে আরও ভাল মানের। নেপাল, ভারত, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ও ভূটানে বাংলাদেশে উৎপাদিত তুলনামূলক উৎকৃষ্টমানের অনেক ধরনেরই পণ্যসামগ্রীর বাজার চাহিদা রয়েছে ব্যাপক এবং বিস্তৃত। এসব রফতানিযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ওষুধ ও পেটেন্ট সামগ্রী, সিরামিক ও মেলামাইন পণ্য, প্লাস্টিক দ্রব্যাদি, শাড়ীসহ বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র, তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক পণ্যসামগ্রী, আসবাবপত্র, ইমিটেশনের অলংকার-গহনা, তথ্য-প্রযুক্তির (আইটি) সামগ্রী, আসবাবপত্র, সিমেন্ট, ঢেউ টিরসহ স্টিল ও লোহাজাত সামগ্রী, হালকা যন্ত্রপাতি, রেফ্রিজারেটর, টিভি, কেবলস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও বেকার্স দ্রব্য, আচার, সচ, চিপস, বিস্কুট, চানাচুর, নুডুলস, লজেন্স, খেলনা, হরেক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পপণ্য, সৌখিন সামগ্রী, কৃত্রিম ফুল, হরেক ফলের জুস, পান ও পানের খয়ের, বিভিন্ন রকম ভেষজ ও কৃষিজ দ্রব্য, বাঁশ ও বেতের ফালি প্রভৃতি।
অথচ অপ্রচলিত ও কম প্রচলিত হরেক দেশীয় পণ্যসামগ্রীর রফতানি বহুমুখীকরণের দিকটি সবসময়ই অবহিলত থাকার কারণে প্রতিবেশী দেশসহ বিভিন্ন দেশে বাজার চাহিদা থাকলেও সম্প্রসারণ করা যাচ্ছেনা। এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বা বিভাগগুলোর মাঝে রয়েছে সমন্বয়ের অভাব। তাছাড়া রফতানি বাজার বিস্তার এবং বহুমুখীকরণে সরকারী সুযোগ-সুবিধা বা প্রণোদনার উদ্যোগ এখনও খুবই সীমিত।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা জানান, প্রতিবেশী দেশসমূহে বিশাল রফতানির বাজার অনেকটাই অধরা রয়ে গেছে। নিকট প্রতিবেশী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর কদর ব্যাপক। চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সেখানে অনায়াসে পণ্য রফতানি করা সম্ভব। কিন্তু তা অসম্ভব করে রেখেছে ভারতের শুল্ক ও অশুল্ক বাধাসমূহ। চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি নেপাল, ভারতের সাতটি রাজ্য, মিয়ানমার, চীন ও ভূটানে হরেক রকম নিত্যপণ্য, শিল্পজাত, ভোগ্য ও সেবাপণ্যের বাজার দেশের জন্য বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের সম্ভাবনা ধারণ করে আছে। কিন্তু সেসব অঞ্চল থেকে উল্টো আসছে পণ্যের ঢল। বাজারে মার খাচ্ছে দেশীয় শিল্পের উৎপাদন ও কৃষিজ পণ্য। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে নেপালের জোরালো আগ্রহ থাকলেও তা কাজে লাগানো হচ্ছেনা। দেশটিতে রফতানির আরও সুযোগ আটকে আছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলটির তিন দিকজুড়েই রয়েছে বিরাট রফতানি বাজার। প্রধান বন্দরের সুবিধার সাথে বাজার সম্ভাবনাকে সম্পৃক্ত করে রফতানি প্রসারের সুযোগ কাজে লাগানো হচ্ছেনা। রয়েছে পদে পদে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। বাজার প্রসারের পরিবর্তে দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। নিকট প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঘুরপথে পণ্য আমদানি ও রফতানি হচ্ছে সিঙ্গাপুর, কলম্বো, মালয়েশিয়ার সমুদ্রবন্দর দিয়ে। সরাসরি রফতানি বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যয় ও মূল্য সাশ্রয় করা সম্ভব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন