উত্তরঃ জুম্মার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন মাজীদে সূরা আল জুমুয়ার ৯ নম্বর আয়াতে দোজাহানের মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝো।’ এ আয়াতের মাধ্যমে জুম্মার নামাজের গুরুত্ব অনুধান করা যায়। জুম্মার নামাজের তাকিদ শুধু পবিত্র কোরআনেই নয় পবিত্র হাদিস শরীফে ও এসেছে। হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি- এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুম্মার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য।’ (আবু দাউদ : ১০৬৭, মুসতাদরেকে হাকেম : ১০৬২)।
কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে জুম্মার নামাজ ছেড়ে দেয়, তবে তার ব্যাপারে রয়েছে কঠোর হুশিয়ারী। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তন ও করা যাবে না।’ (তাফসিরে মাজহারি , ৯ম খন্ড, ২৮৩ পৃ.)।
জুম্মার দিন মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এবং এটি দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। ইবনে মাজায় বর্ণিত হাদিসে রাসলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে জুমু‘আর দিন সেরা দিন ও আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন। আল্লাহর নিকট তা ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও উত্তম।’ আর মুসলিম শরিফের হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে সকল দিনে সূর্য উদিত হয়েছে তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো জুমু‘আর দিন। সেই দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং সেই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং সেই দিনেই জান্নাত থেকে তাকে বের করা হয়েছে। যে দিন কিয়ামত হবে, সে দিন ও হবে জুম্মার দিন।
সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবে জুম্মার দিনের ফজিলত অনেক বেশি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে ফেরেশতাগণ মসজিদের প্রতিটি দরজায় দাঁড়িয়ে যান। তাঁরা মসজিদে আগমনকারী মুসলিদের নাম পর্যায়ক্রমে লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। অতঃপর যখন ইমাম সাহেব এসে যান, তখন তারা রেজিস্টার বন্ধ করে খুতবা শুনতে থাকেন। যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, সে একটি উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা দান করার সওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়।’ (বুখারী, মুসলিম,মুসনাদে শাফী : ৬২।
হজরত সালমান (রা.) হতে একটি একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তার পর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তাঁর খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (মুসনাদে আবু দাউদ : ৪৭৯)
জুমাবারের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাঁকে তা দান করবেন। (সহীহ মুসলিম : ৮৫২, মুসনাদে আহমাদ : ৭১৫১)।
উত্তর দিচ্ছেন: মুফতি মাওলানা মোহাম্মাদ এহসানুল হক মোজাদ্দেদী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন