শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মুশফিকের মিসফায়ার

স্পোর্টস রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

জর্জটাউন। দেহরাদুন। বেঙ্গালুরু। হারারো।
এই চারটি শহরের দুরত্ব কমপক্ষে ১৮ হাজার কিলোমিটার। তবে একজন মানুষ এই নামগুলোকে মিলিয়েছে এক সূঁতোয়া; মুশফিকুর রহিম। কিভাবে? শেষ ওভারে রোমাঞ্চকর রান তাড়ায় বাউন্ডারি মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন লেগ-সাইডে! একবার দুবার নয়, অভিজ্ঞ এই উইকেটক্ষক-ব্যাটসম্যানের জীবনে গত ৭ বছরে এমনটা ঘটেছে ৫ বার! আর পরিণতি- জয়ের খুব কাছ থেকেও প্রতিবারই হৃদয়ভাঙা হারের ক্ষত বাংলাদেশের বুকে। সবশেষ এই তালিকায় যুক্ত নামটি জর্জটাউন।
ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এ কথায় ‘গৌরব’ আর ‘অনিশ্চয়তা’ শব্দ দুটি প্রায় বিপরীত হলেও মুশফিক তা একই সঙ্গে ধারণ করছেন। বুঝলেন না? গৌরবের তিরিতিরি ঝিলিক ছুটিয়ে শেষবেলায় অনিশ্চয়তার অন্ধকারে তার ডুবে যাওয়ার সা¤প্রতিকতম নিদর্শন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই দ্বিতীয় ওয়ানডে। গায়ানায় ৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। এ ম্যাচেও মুশফিক দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেও হতে পারেননি নায়ক! ৬৭ বলে ৬৮ রানের একটা দারুণ ইনিংস খেলেও সেটিকে ‘ম্যাচ জেতানো’ বানাতে পারলেন না!
লোকে বলতে পারে, এই মুশফিক ‘চোকার’। চাপের মুখে এলোমেলো করে ফেলে সবকিছু। লোকে আবার এটিও বলতে পারে, এই মুশফিক আসলে ‘হিরোইজম’-এ বিশ্বাসী। কিন্তু একটু গভীর দৃষ্টি রাখলে কিন্তু দেখবেন তার উইলোয় এ দুটো শব্দেরই ছাপ রয়েছে।
গতকালের ম্যাচ থেকে শুরু করা যাক। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ৮ রান। বোলিংয়ে জেসন হোল্ডার, যিনি তার আগের ওভারগুলোয় গড়ে প্রায় সাত করে রান দিয়েছেন। আর স্ট্রাইকে মুশফিক। তখন উইকেটে সেট এবং নিজের দুর্দান্ত ইনিংসটিকে পরিণতি দেওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু এই পরীক্ষায় তিনি সেই আগের ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করেছেন। আর তাই ‘চোকার’ আর ‘হিরোইজম’ দেখানোর লোভ- এ দুটি ব্যাপার অনাকাক্সিক্ষতভাবে হলেও তার নামের সঙ্গে সেঁটে যাচ্ছে। উপায় কী! মুশফিক যে ভুল থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন না।
সেটি বোঝা গেছে হোল্ডারের প্রথম বলেই। মুশফিক যেন তীর দেখেই তরি থেকে ঝাঁপ দিলেন! নয় তো কী? ৬ বলে ৮ বলের সমীকরণ মেলাতে যেকোনো সেট ব্যাটসম্যানই মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচটা শেষ করে আসতে চাইবেন। আর অপর প্রান্তে যেহেতু মোসাদ্দেকের মতো সতীর্থ, উইকেটে নতুন এলেও সিঙ্গেল নিয়ে তার ওপর ভরসা রাখা যেত। চড়াও হওয়া যেত তৃতীয় কিংবা চতুর্থ বলে। তাতে অন্তত জয়ের আরেকটু কাছে যাওয়া যেত। প্রথম তিনটি ডেলিভারি অন্তত ‘ডট’ হতো না।
কিন্তু মুশফিক ভরসা রেখেছিলেন নিজের সামর্থ্যে, আত্মবিশ্বাসে। যেমনটা তার ব্যাটে বাংলাদেশ সব সময় রেখে থাকে। তারপরও প্রশ্নটা উঠবেই- হোল্ডারের হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া ফুলটস ডেলিভারিটি কি মুশফিকের উইকেটটির যথার্থ দাবিদার? সেই ফুলটস ডেলিভারিকে মুশফিক তার প্রিয় ¯øগ শটে সীমানাছাড়া করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ফিল্ডারের তালুবন্দী! হ্যাঁ, পরের পাঁচটি ডেলিভারি থেকে হয়তো জয় তুলে নেওয়া যেত। কিন্তু মুশফিক যে নেই। মুশফিক যে এই সময়টা ড্রেসিংরুমে বসে বসে পুড়লেন, সেটি তো টিভি পর্দায় স্পষ্ট দেখা গেল! ইশ্! একটু যদি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারতেন তিনি!
একই ভুল তিনি করেছেন বেঙ্গালুরুতে। দুই বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টেনের সেই ম্যাচে শেষ ওভারে দরকার ছিল ১১ রান। প্রথম তিন বলেই এল ৯ রান। শেষ ৩ বলে ২ রানের সহজ সমীকরণে থাকতে মুশফিক আবারও সেই ডিপ মিডউইকেটে ধরা! মাত্র এক মাস আগেই তো তিনি এই কাজ করেছেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেরাদুনে।
আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচের শেষ ওভারে দরকার ছিল ৯ রান। প্রথম বলেই রশিদ খানকে ¯øগ সুইপে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট। অথচ আজকের মতো সেদিনও উইকেটে সেট ছিলেন মুশফিক। শেষ মুহূর্তে এসে তার পায়ের তলে মাটি কি নড়ে যায়? নাকি এক হাতে জেতানোর লোভ সংবরণ করতে পারেন না? এসব প্রশ্নের জবাব শুধু মুশফিকই জানেন। ভক্তেরা ভেবেই পান না বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানটি চাপের মুখে এমন হয়ে যান কেন!
আশা-নিরাশার মুশফিক
অপরাজিত মুশফিক, দলের জয়
ফরম্যাট প্রতিপক্ষ সাল
টি-২০ উইন্ডিজ ২০১১
ওয়ানডে ভারত ২০১২
টেস্ট জিম্বাবুয়ে ২০১৪
টেস্ট শ্রীলঙ্কা ২০১৭
টি-২০ শ্রীলঙ্কা ২০১৮
শেষ ওভারে আউট, দলের হার
ফরম্যাট প্রতিপক্ষ সাল
ওয়ানডে জিম্বাবুয়ে ২০১১
টি-২০ জিম্বাবুয়ে ২০১৩
টি-২০ ভারত ২০১৬
টি-২০ আফগানিস্তান ২০১৮
ওয়ানডে উইন্ডিজ ২০১৮

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন