মহাবিপর্যয়ের পর মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে সাড়ে তিনশ ছাড়ানো পুঁজি পেল বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে স্বাগতিকদের হতাশ করে শ্রীলঙ্কাও দিচ্ছে জুতসই জবাব। প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের বড় কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারছে না টাইগার বোলাররা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একাধিক ক্যাচ মিসের আক্ষেপও। গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিন শেষে লঙ্কানদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১৪৩ রান। ৭ চারে ১২৭ বলে ৭০ রান নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক করুনারতেœ। দলের চাওয়া পূরণ করে টিকে যাওয়া নাইটওয়াচম্যান কাসুন রাজিথা ১১ বল খেলে এখনও খুলতে পারেননি রানের খাতা। হাতে ৮ উইকেট নিয়ে তারা পিছিয়ে আছে ২২২ রানে। এর আগে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থামে ৩৬৫ রানে।
৫০০ ছুঁয়েও জুটির আক্ষেপ
রেকর্ড ছিল হাতছোঁয়া দ‚রত্বে। তবে সেই অভিযান থেমে গেল ৫ বল পেছনে থেকেই। বাংলাদেশের তৃতীয় জুটি হিসেবে ৫০০ বল খেলা হলো মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড হলো না লিটনের বিদায়ে।
গতকাল মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন সকালে কাসুন রাজিথার বলে লিটন আউট হয়ে যান ১৪১ রান করে। মুশফিকের সঙ্গে তার ম্যারাথন জুটি থামে ২৭২ রানে। প্রথম দিনের প্রথম সেশন থেকে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশন পর্যন্ত ৫১৩ বল খেলেছে এই জুটি। বল খেলার হিসেবে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় দীর্ঘতম জুটি। আর ¯্রফে একটি বল খেললেই এই জুটি স্পর্শ করতে পারত মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তর জুটি। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে এই দুই বাঁহাতির ২৪২ রানের জুটি এসেছিল ৫১৪ বল খেলে।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি বল খেলা জুটির রেকর্ডে অবশ্য মুশফিকের অংশীদারী আছেই। প্রতিপক্ষ এখানেও শ্রীলঙ্কা। ২০১৩ সালে গলে মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে ২৬৭ রানের জুটিতে বল লেগেছিল ৫১৮টি। এবার সেই রেকর্ড ভাঙার পথে অটল ছিলেন মুশফিক, কিন্তু কাছে গিয়েও পারলেন না লিটন। বাংলাদেশের আর কোনো জুটি ৫০০ বল খেলতে পারেনি। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে নাফিস ইকবাল ও জাভেদ ওমর ১৩৩ রানের জুটি গড়েছিলেন ৪৯৮ বল খেলে।
রানের হিসেবেও মুশফিক-লিটনের জুটি টেস্টে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২৭২ রানের এই জুটির ওপরে থাকা দুটি জুটিই তিনশ ছাড়ানো। মুশফিকের নাম আছে এখানেও রেকর্ড গড়া জুটিতে। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে সাকিবের সঙ্গে ৩৫৯ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি পঞ্চম উইকেটে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১২ রানের জুটি তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় এই জুটি গড়েছিলেন তারা ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে। টেস্টে কোনো দলের দ্বিতীয় ইনিংসে যা টেস্ট ইতিহাসের প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র তিনশ রানের উদ্বোধনী জুটি।
৬ শূন্যের পরও রেকর্ড
দুটি বিশ্বরেকর্ড। দুটি পরস্পর সম্পর্কিত। একটি হতাশার রেকর্ড। সেই হতাশার মাঝেও গৌরবের কীর্তি আরেকটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে এভাবেই রেকর্ড বইয়ে নাম উঠে গেছে বাংলাদেশের। গতকাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় শূন্য রানে ইবাদত হোসেনের রান আউটে। বাংলাদেশের ইনিংসের সেটি ষষ্ঠ শূন্য। ইবাদতের আগে শূন্য রানে আউট হন মাহমুদুল হাসান জয়, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
এতে বাংলাদেশ স্পর্শ করে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানে আউট হওঢার বিশ্বরেকর্ড। এক ইনিংসে ৬ শূন্য টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে দেখেছে ৫ বার। সেখানেও একবার ছিল বাংলাদেশের নাম। ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ওই বিব্রতকর অভিজ্ঞতা হয় সেই সময়ে খালেদ মাসুদের নেতৃত্বধীন দলের। এছাড়াও ইনিংসে ৬ শূন্য আছে ১৯৮০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাকিস্তানের, ১৯৯৬ সালে ভারতের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার, ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের ও ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের।
ব্যর্থতার এই প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশ রচনা করে গৌরবগাঁথার। ৬ ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হওয়ার আগের ৫ দফায় কোনোবারই ওই ধাক্কা সামাল দিতে পারেনি দল। সর্বোচ্চ ছিল ¯্রফে ১৫২, ভারত যে রান করেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ২০১৪ সালে। এবার বাংলাদেশ অনেকটা ছাড়িয়ে গিয়ে করেছে ৩৬৫। ৬ শূন্যের ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রানের বিশ্বরেকর্ড। আগের ৬ শূন্যের ৫ ইনিংসে ওই দলের কেউ কোনো সেঞ্চুরি করেত পারেননি। এবার বাংলাদেশের ইনিংসে সেঞ্চুরি দুটি, মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ১৭৫ ও লিটন দাসের ১৪১। শুধু টেস্ট ক্রিকেটেই নয়, বাংলাদেশের এই রান প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও রেকর্ড। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ইনিংসে ৬ বা ততোধিক শূন্য এই ইনিংসসহ হলো ৩০৮ বার। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বাংলাদেশের এই ৩৬৫। আগের সর্বোচ্চ ছিল গতবছর ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে সাসেক্সের ৩০০।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১১৬.২ ওভারে ৩৬৫ (আগের দিন ২৭৭/৫) জয় ০, তামিম ০, শান্ত ৮, মুমিনুল ৯, মুশফিক ১৭৫*, সাকিব ০, তাইজুল ১৫, খালেদ ০, এবাদত ০; রাজিথা ৫/৬৪, আসিথা ৪/৯৩)।
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ৪৬ ওভারে ১৪৩/২ (ওশাদা ৫৭, করুনারতেœ ৭০*, মেন্ডিস ১১, রাজিথা ০*; খালেদ ৯-১-২৭-০, ইবাদত ৯-০-৩১-১, সাকিব ৯-৩-১৯-১, মোসাদ্দেক ২-০-১৪-০, তাইজুল ১৭-১-৪৯-০)। দ্বিতীয় দিন শেষে
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন