শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জড়িতদের খোঁজে দুদক

কয়লা কেলেঙ্কারি : ৪ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মালেক মল্লিক: | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির কয়লা খনির ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা উধাও হওয়ার ঘটনায় জড়িতের খোঁজতে তদন্তে মাঠে নেমেছে দুৃর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে উপ-পরিচালক শামসুল আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। প্রাথমিক তদন্তে কয়লার ঘাটতি পেয়েছে দুদক। অনুসন্ধানে নামার পর কোম্পানির ঊর্ধ্বতন ৪ কর্মকর্তার বিদেশযাত্রা ঠেকাতে ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। তারা যাতে কোনোভাবে দেশত্যাগ করতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন কমিশন। প্রাথমিক এছাড়াও তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়জুউল্লাহ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ শামসুল হাসান মিয়ার বক্তব্য নিয়েছে দুদক। তবে এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি দুদকের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন কয়লা খনির কয়লা চুরির ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে তাদের মতে, প্র্রয়োজনে যে কাউকে তলব করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনও দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা দিবে দুদক।
এদিকে কয়লার উধাও এর ঘটনায় খনির ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার নথি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়। ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করে ২৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। কয়লার হিসাবে গরমিলের বিষয়টি দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) এবং ৪০৯ ধারা অনুযায়ী এজাহারভুক্ত করে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে ওই আর্জিতে।
তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি: দুদকের উপপরিচালক শামসুল আলমের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন সহকারী পরিচালক এ এস এম সাজ্জাদ হোসেন ও উপসহকারী পরিচালক এ এস এম তাজুল ইসলাম। দুদক পরিচালক কাজী শফিকুল আলমকে এই অনুসন্ধান কাজের তদারকি করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ লাখ ১৬ হাজার টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবীব উদ্দিন আহমদ ও অন্যদের বিরুদ্ধে। যা দুদক আইন অনুযায়ী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
৪ কর্মকর্তার বিদেশ যাওয়া নিষেধাজ্ঞা: কয়লাকেলেঙ্কারির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন চার কর্মকর্তার দেশত্যাগ আটকাতে বলেছে দুদক। প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন ৪ কর্মকর্তার বিদেশযাত্রা ঠেকাতে ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। কমিশন থেকে ইমিগ্রেশন বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, তারা যাতে কোনোভাবে দেশত্যাগ করতে না পারে। তারা ৪ জন হলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহম্মদ, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) আবু তাহের মোঃ নুর-উজ-জামান চৌধুরী, সচিব মো. আবুল কাশেম প্রধানীয়া ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর বিভাগ) এ কে এম খালেদুল ইসলাম। এছাড়াও গত ২৫ জুলাই দুদকের পরিচালক ও তদারকি কর্মকর্তা কাজী শফিকুল আলমের নেতৃত্বে বিশেষ টিম পেট্রোবাংলা ও বিপিডিবি প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানদের বক্তব্য গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়েছে। দুদক সূত্রে জানা যায়, মূলত অনুসন্ধান কাজে গতি আনতেই পেট্রোবাংলা ও বিপিডিবির চেয়ারম্যানের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করা হয়েছে।
দুদকের একটি কমিটি গঠনের পরপরই গত ২৩ জুলাই দিনাজপুরে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কয়লা খনি পরিদর্শনে যায় দুদক। প্রাথমিক তদন্তে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনির ইয়ার্ডে কয়লার ঘাটতি পেয়েছে তদন্ত দল। খনি পরির্দশন শেষে দিনাজপুর দুদক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, কয়লার মজুদ সংক্রান্ত কাগজপত্রে দেখলাম এক লাখ ৪৬ হাজার টন কয়লা মজুদ থাকার কথা। কিন্তু ইয়ার্ডে মজুদ দেখলাম প্রায় দুই হাজার টন। সেখানে এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লার ঘাটতি রয়েছে। পরে দুদক উপ-পরিচালক সাংবাদিকদের জানান, দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তারা এখানে এসেছেন এবং তদন্ত কাজ করছেন।
দুদক জানায়, ২০০৫ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয়। দীর্ঘ ১৩ বছরে কয়লা উত্তোলন হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টন। বর্তমানে কোল ইয়ার্ডে কয়লার মজুত থাকার কথা এক লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু বাস্তবে কয়লার মজুত পাওয়া গেছে ১৪ হাজার টনের মতো। এক লাখ ১৬ হাজার টনের মতো কয়লার কোনো হদিস নেই। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন থেকে একটি চক্র চুরি করে খোলা বাজারে এসব কয়লা বিক্রি করে দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইর্লে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য ইনকিলাবকে বলেন, তদন্ত চলছে। এখন কোন মন্তব্য নয়। তবে দুদক সচিব ড. মো: শামসুল আরেফিন বলেন, জাল জালিয়াতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন খোলা বাজারে বিক্রি করে আনুমানিক ২০০কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রয়োজনে যে কাউকে তলব করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনও দ্রæত সময়ের মধ্যে জমা দিবে দুদক। গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা চুরির ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
মামলার নথি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে:
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৯ জনকে আসামি করে দুর্নীতি দমন আইনে অভিযোগ দায়ের করা মামলাটি দুদকের প্রধান কার্যালয় রয়েছে পাঠানো হয়েছে। প্রধান কার্যালয় গুরুত্বসহকারে বিষয়টি তদারকি করছেন বলে সূত্রে জানা যায়। দুর্নীতির মাধ্যমে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করে ২৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। কয়লার হিসাবে গরমিলের বিষয়টি দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) এবং ৪০৯ ধারা অনুযায়ী এজাহারভুক্ত করে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে ওই আর্জিতে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন