তেল-গ্যাসের মতো বিশ্ববাজারে বেড়েই চলছে কয়লার দাম। অন্যদিকে এখনও উৎপাদনে যেতে পারেনি দেশের বড় দুই বিদ্যুকেন্দ্র। সহসাই এই দাম কমার সম্ভাবনাও দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, ইউক্রেন সংকটের জেরে এই দাম আরও বাড়তে পারে। এই অবস্থায় দ্রুতই দেশের বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে উৎপাদনের আওতায় আনার পরামর্শ তাদের।
বাংলাদেশ যে কয়লা আমদানি করছে তার দাম পায়রাতে প্রতিটন ১৮০ ডলার। বছরের শুরুর দিকেও যা ১০০ ডলারের মধ্যে ছিল। পরিবহন ব্যয়ের কারণে বছরের শেষভাগে চালু হতে যাওয়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার দাম টনপ্রতি ২২০ ডলারে ঠেকবে বলে পিডিবির ধারণা। তবে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লার দাম এখন ১৩৬ ডলার করে মেটাচ্ছে পিডিবি। তবে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো কয়লার দাম টনপ্রতি এখন ৩০০ ডলার।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচ পড়ছে প্রতি ইউনিটে ছয় টাকার মতো। রামপালে সাত টাকার বেশি পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট করে। ফলে কেন্দ্র দুটি ফুল লোডে চালানো হলে দুই হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। সরকার ধারণা করেছিল এসব কেন্দ্রের জ্বালানি অর্থাৎ কয়লার দাম কম থাকলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। তবে দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই আশা ফিকে হয়ে আসছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়লার দাম বাড়ার অন্যতম কারণ জাহাজ ভাড়া ও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি। বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটকেও দায়ী করছেন অনেকে।
পশ্চিমা দেশগুলোর নানামুখী অবরোধের কারণে রাশিয়া তাদের জ্বালানি তেল সরবরাহে অনেক কাটছাঁট করেছে। এই সংকট মোকাবিলায় সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তেলের উৎপাদনও বাড়ায়নি। ফলে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করছে। এই বিকল্পই হলো কয়লা। অর্থাৎ এর আগে যেসব কয়লাচালিত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা কমানো হয়েছিল এখন আবার তা বাড়ানো হয়েছে। এতেও কয়লার বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে পশ্চিমা দেশগুলো কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন একেবারে কমিয়ে দিয়েছিল। এর বিকল্প হিসেবে তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি গ্যাসও ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন সেই গ্যাসই দুষ্প্রাপ্য তাদের কাছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, কয়লার দাম বিশ্ব বাজারে ৪-৫ গুণ বেড়েছে। আবার অন্য জ্বালানির চেয়ে কয়লার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এখন কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দ্রæত চালু করা দরকার। এতে তেল-গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। সামগ্রিক উৎপাদন খরচও কমে আসবে।
কয়লার দাম যদি আরও বাড়ে তাহলে কী করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু করার নেই। ব্যাপারটা আমাদের হাতে নাই। বিশ্ব পরিস্থিতিই এমন। যুদ্ধের প্রভাবে কোনও জ্বালানির দামই এখন কমবে না। আরেকটি কারণ হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি করোনা মহামারি থেকে রিকভার করছে। এতেও জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে।
পিডিবি আশা করেছিল পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট দিয়েই বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। একই সঙ্গে রামপালের প্রথম ইউনিটও উৎপাদনে আসবে। এর বাইরেও রামপালের দ্বিতীয় ইউনিট ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। কিন্তু অব্যাহতভাবে কয়লার দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ এক্ষেত্রে জ্বালানি খরচ পিডিবিকেই বহন করতে হয়। আর ফসিল ফুয়েলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিট-প্রতি ব্যয়ের ৬০ ভাগই জ্বালানি খরচ বিবেচনা করা হয়। বাকি ৪০ ভাগের মধ্যে কেন্দ্র নির্মাণসহ আনুষাঙ্গিক খরচ ধরা হয়।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আমরা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এনে সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে চেয়েছিলাম। এখম যে দাম, তাতেও সাশ্রয় হবে। কয়লার দাম আরও বেড়ে যদি বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ১০ টাকাও হয় তাহলেও তা তেলের চেয়ে কম হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন