শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

টেকনাফ যেন মাদকের খনি

থামছে না পাচার : উদ্ধার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাদক : ধরাছোঁয়ার বাইরে গডফাদাররা

কক্সবাজার থেকে বিশেষ সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

টেকনাফ যেন মাদকের খনি! প্রতিদিন উদ্ধার হচ্ছে কোটি টাকার মাদক। গতকালও টেকনাফে উদ্ধার হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার ইয়াবা। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সাঁড়াশী অভিযানে সত্ত্বে ও প্রতিরোধ করা যাচ্ছেনা মাদকের সয়লাব। জানা গেছে, গত ১৫ দিনে শত কোটি টাকার মাদক দ্রব্য উদ্ধারের সাথে চুনোপুটি ধরা পড়লেও এপর্যন্ত ধরা পড়েনি তালিকাভুক্ত কোন গডফাদার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেও গত এক মাসে আত্মগোপনে থেকে আবারো শুরু করেছে মাদক পাচার। অনেকে আবার প্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়ছে পুরনো পেশায়। অভিযানে হা হা করা সেই ইয়াবা কারবারিদের রাজপ্রাসাদগুলোর আবারো ভরপুর হচ্ছে রাজা-রানীতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের ভয়ে রাজপ্রাসাদে ছেড়ে পালিয়ে ছিল রাজা-রানীরা। ফলে নিষ্ফল অভিযানে শুধু দেখা মিলেছে প্রাসাদের পাহারাদারের ।
অভিযানে যা পেলো আইনশৃঙ্খলাবাহিনী : অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১৫ দিনে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সাঁড়াশী অভিযানে শত কোটি টাকারও বেশি মাদক দ্রব্য উদ্ধার হয়েছে। কোন কোন অভিযানে ধরা পড়েছে চুনোপুটি। আবার কোন অভিযানে ফিরতে হয় খালি হাতে। সচেতন মহলের মতে এটি গডফাদর সিন্ডকেটের কারসাজি হতে পারে। তারা আড়ালে থেকে চুনোপুটিদের দিয়ে মাদকের এই রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার সময় ৩ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে ইয়াবার বৃহত্তর এই চালান ধরা পড়লেও পাচারে জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি। জব্দকৃত ইয়াবার মূল্য আনুমানিক ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা বলে জানান, টেকনাফ-২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার। এর আগে গত ১ আগস্ট টেকনাফ থানা পুলিশ ২১ হাজার ইয়াবাসহ ৬ জন, একইদিন রাত ১২ টায় টেকনাফ বিজিবি ১ কোটি ৪৯ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা টাকা মূল্যের ইয়াবা ও মাইক্রোবাসসহ চালককে আটক করেছ। ৪ আগস্ট ভোররাতে র‌্যাব-৭, টেকনাফ ক্যাম্প কমান্ডার লেঃ মির্জা শাহেদ মাহতাব মাদক বিক্রয় ও নাশকতার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফ পুরান পল্লান পাড়ার সৈয়দুর রহমান প্রকাশ কালুর পুত্র মোঃ হারুন রশিদ (২৪) কে দেশীয় অস্ত্র ওয়ান শুটারগান, পশ্চিম লেদার আবুল খায়েরের পুত্র মোঃ মিজানুর রহমান (১৯) কে কিরিচ ও কামরুন্নাহার (২১) কে আটক করে। তাদের দেহ তল্লাশী করে ১ হাজার ৬শ ৭৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এছাড়া বিজিবি ১ কোটি ২৯ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যমানের ৪৩ হাজার ৬৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্ধ এবং ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের ১টি মাইক্রোবাসসহ চালককে আটক করে। ৬ আগস্ট টেকনাফে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ৩০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড সদস্যরা। ৭ আগস্ট টেকনাফ থেকে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে র‌্যাব পুলিশ ও কোস্টগার্ডের অভিযানে উদ্ধার হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা মুল্যের ইয়াবাসহ মাদক দ্রব্য। ১০ আগস্ট ১০ হাজার ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা। র‌্যাবের দাবি, ওই দিন ভোরে টেকনাফের পুরাতন পল্লনপাড়ার মায়মুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়। এতে দুজনকে আটক করা হয়। তবে সব অভিযানে এপর্যন্ত গডফাদাররা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, মাদকের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছে। এ অভিযানে কোনো ধরনের পেশিশক্তিই বাধা হয়ে দাড়াতে পারবে না। মাদক ব্যবসায়ী বা ইয়াবার গডফাদার যতই শক্তিশালী হোক তাদের খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে মাদক প্রতিরোধে কক্সবাজারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে র‌্যাব। মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা ও মাদক পাচারকারীদের মাঝে ভিতি সঞ্চারের লক্ষ্যে র‌্যাব মাদক বিরোধী যৌথ টহল ও মহড়া শুরু করেছে কক্সবাজারে। কিন্তু এতেও যেন মাদক কারবারীরা থেমে নেই। সচেতন মহলের মতে ইয়াবা গডফাদাররা ধরা না পড়লে সরকারের মাদক নির্মূলের সব আয়োজনই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন