নানা উদ্যোগ সত্তে¡ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আট শতাংশ কমেছে। সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের ঘাটতি এবং অবকাঠামো দুর্বলতার কারণে নতুন বিনিয়োগ কম আসছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষের অর্থবছর হওয়াও একটি কারণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ লেনদেনের ভারসাম্য বিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে মোট এফডিআই এসেছে ২৭৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ কম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছিল। নিট এফডিআই কমেছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিট এফডিআই ছিল ১৬৫কোটি ৩০ লাখ ডলারের। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যার পরিমাণ ১৫৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিট এফডিআই ৩৩ শতাংশ বেড়েছিল।
গত অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই শেয়ারবাজারে বিদেশিরা ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেন। যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাজারের অস্থিতিশীলতা, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন, মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার দর হারানোসহ বিভিন্ন কারণে পোর্টফলিও বিনিয়োগ কমেছে বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উন্নয়নে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা সহজ করতে করা হয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন। জমি ও ইউটিলিটির স্বল্পতা দূর এবং বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হচ্ছে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়িয়েছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগ উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো এখন বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও গত বছরজুড়ে বন্দরে জটও বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ৩৮টি সংস্থার সঙ্গে সেবা সহজ করার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়া আমেরিকা-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ ও বেক্সিটের মতো আন্তর্জাতিক বিষয় এবং বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একধরনের অনিশ্চয়তা বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্ব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেন, যে সকল পদক্ষেপের ফলে এফডিআই আকৃষ্ট হবে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা ও পরিকল্পনা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। যে কারণে এফডিআই তেমন আসছে না। যে এফডিআই দেখা যাচ্ছে তার বড় অংশ পুনঃবিনিয়োগ। অর্থাৎ বিদেশি কোম্পানিগুলো মুনাফা নিজের দেশে না নিয়ে পুনরায় বিনিয়োগ করছে। এ ছাড়া আন্তঃকোম্পানি ঋণও রয়েছে বিনিয়োগে। নতুন মূলধন আসার পরিবেশ এখনও হয়নি। নতুন মূলধন বিনিয়োগের জন্য জমির নিবন্ধন, কর নিবন্ধন, অবকাঠামো, বন্দর, জ্বালানি ও দক্ষতার উন্নয়নের বিকল্প নেই।
অনেকদিন ধরে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) থেকে বলা হচ্ছে বিদেশি অনেক কোম্পানি আসছে। অনেকে সমঝোতা স্মারক সই করছে।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এফডিআই বাড়েনি। এর মানে বিনিয়োগকারীরা আসছে এর আগ্রহ দেখাচ্ছে কিন্তু কোনো না কোনো কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন