কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে সহিংসতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানির ঘটনায় দায়েরকৃত ৫১টি মামলায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর গ্রেফতার অভিযান অব্যহত রয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে অভিযান চালিয়ে এরই মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। এ নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। গতকাল ভোরে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও থানা পুলিশ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে ইডেন কলেজ ছাত্রী কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুর নাহার লুমাকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গতকাল ঢাকায় আহমাদ হোসাইন (১৯) ও নাজমুস সাকিব (২৪) নামে দু’জন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। সাকিব ঢাকার ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং আহমাদ হোসাইন কামরাঙ্গীরচরের জামিয়া নুরিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস থেকে শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি নামের এক ছাত্রীকে আটকের ৫ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে আটক করা হয় এবং রাত ১২টার দিকে ছেড়ে দেয়া হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে সামনে রেখে একাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। জড়িত এ ধরনের দু’শতাধিক ফেইসবুক আইডি শনাক্ত করে মাঠে নেমেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। ওই চক্রের সাথে সমান তালে সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথিপয় শিক্ষার্থী। এরা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন্ করার জন্য বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট লেখা, পোস্ট, ছবি ও ভিডিও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে স¤প্রচার করছে। এদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনে সহিংস ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানির প্রেক্ষিতে রমনা বিভাগে ১৪টি মামলায় ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। যার মধ্যে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয় ১০টি। যেখানে গ্রেফতার করা হয় ২০ জনকে এবং ৮৪ জনকে আসামি করে করা ৪টি মামলায় গ্রেফতার করা হয় ১১ জনকে। ১৪টি মামলার মধ্যে ১৩টির তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ এবং একটি মামলা তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। লালবাগ বিভাগে একজনসহ অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামি করে ১টি মামলা করা হয়। মামলায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওয়ারী বিভাগে মামলা হয়েছে ২টি। অজ্ঞাতনামা ৩৫০/৪৫০ জনকে আসামি করে করা দুই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে একজনকে। মতিঝিল বিভাগে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ৬টি মামলা করা হয়েছে। ৬টি মামলায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তেজগাঁও বিভাগে ৬ জনকে আসামি করে দুটি মামলা করা হয়েছে। যার মধ্যে ২ জন এজাহারনামীয়সহ সন্দিগ্ধ আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, মিরপুর বিভাগের মিরপুর মডেল থানায় বিইউবিটি ইউনিভার্সিটি ও কমার্স কলেজসহ অন্যান্য কলেজের অজ্ঞাতনামা ৫০০/৬০০ ছাত্র শিক্ষককে আসামি করে ১টি মামলা। অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামি করে কাফরুল থানায় ১টি মামলা এবং ৯৬ জনকে আসামি করে আরও ৩টিসহ মোট ৫টি মামলা করা হয়েছে। গুলশান বিভাগে অজ্ঞাতনামা ২০০০/২৪৫০ জনকে আসামি করে ৭টি মামলা এবং ৩১ জনকে আসামি করে আরও ২টি মামলাসহ ৯টি মামলা করা হয়েছে। ৯টি মামলায় ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উত্তরা বিভাগে অজ্ঞাতনামা ১০০/১৫০ জনকে আসামি করে ৩টি মামলা এবং ১১৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলাসহ ৪টি মামলা করা হয়েছে। মামলায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে ২৯ জনকে আসামি করে দায়ের করা ৮টি মামলায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৮টি মামলার মধ্যে ৪টি মামলা ডিএমপি’র সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ, একটি ডিবি পুলিশ এবং একটি থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার ওসি মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, রমনা থানার তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় কাউন্টার টেররিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও থানা পুলিশ যৌথ অভিযানে লুৎফুর নাহারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। লুৎফুর নাহারের আত্মীয়দের সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জে তার দাদার বাড়ি থেকে ভোর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসলাম উদ্দিন জানান, দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে পল্টন থানায় মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আহমাদ হোসাইনের বাবা আতাউর রহমান। বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাটে ও সাকিবের বাবা জহির উদ্দিন বাবর, বাসা পূর্ব রাজাবাজারে।
তিনি আরো বলেন, গত ৪ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম নিহত হওয়ার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে কিছু দুষ্কৃতকারী মিথ্যা তথ্য সংবলিত বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য অপপ্রচার করে। এরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ অরাজকতা ও অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করছে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন্ করার জন্য বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট লেখা, পোস্ট, ছবি ও ভিডিও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে স¤প্রচার করেছে। সিআইডি কম্পিউটার ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যম তদারকি করে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য তদন্ত শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় রাজধানী থেকে ওই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, ফেসবুকে গুজব ছড়ানো সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইমিকে আটক করা হয়েছিল। পরে মুচলেকা রেখে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন