বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

মহান হজ্জ : একটি অনন্য সওগাত

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

দুই
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ বাইতুল্লাহ শরীফের হজ্ব সমাগত। যাদেরকে আল্লাহ তা’য়ালা তাওফিক দিয়েছেন তারা অনেকেই ইতিমধ্যে তালবিয়া আদায় করতে করতে পবিত্র ভূমিতে পৌছে গেছেন বা সহসাই পৌছে যাবেন। হজ্বের দিনগুলোতে হাজী সাহেবান তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, মুযদালেফা, আরাফাতে অবস্থান, মিনায় কংকর নিক্ষেপ, কুরবানী ইত্যাদি বহুবিধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফযীলতের আমল সমূহে সদা ব্যস্ত থাকবেন। মূলত দুনিয়াদারীর সংশ্রব ত্যাগ করে একান্তভাবে আল্লাহমুখী হয়ে ইবাদতে মশগুল থেকে গুনাহ সমূহ মাফ করিয়ে নেয়ার সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকবেন। আর আমরা যারা হজ্বের কর্মে ব্যস্ত নই, তারা তো এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। যারা হজ্ব করছেন না, তাদের জন্য কি এ পবিত্র সময়ে কিছুই নেই। আল্লাহ তা’য়ালা দয়া পরবশ হয়ে আমাদেরকে একেবারে বঞ্চিত করেননি। তিনি আমাদের জন্য কিছু সুযোগ রেখেছেন। প্রথমতঃ দশই যিলহজ্ব কুরবানীর ঈদের দিন হাজী সাহেবান যেমন কুরবানী আদায় করবেন, আমাদেরও তাদের মত কুরবানী করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যাদের সামর্থ রয়েছে তাদের প্রতি কুরবানী করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন।দ্বিতীয়ত ঃ যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশটি দিনের আমলকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সূরা আল ফযরের মধ্যে এ দশটি দিনের কসম করেছেন। ‘‘ওয়া লায়ালিন আশর’’ অর্থাৎ দশটি রাত বলতে যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশটি দিন বুঝানো হয়েছে বলে মুফাস্সিরীনে কেরামের সম্মিলিত অভিমত। প্রিয় নবীজী (সা:) হাদীস শরীফে এদিনগুলোর ফযীলত প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এ দিন গুলোর আমলের ন্যায় অন্য কোন দিনের আমল আল্লাহর কাছে এত পছন্দনীয় নয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল এমন কি আল্লাহর পথে জিহাদ করলেও নয়? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করলেও নয়! তবে, যে ব্যক্তি নিজের জানমাল নিয়ে এমনভাবে জিহাদে গিয়েছে যে, আর কোনটা নিয়েই ফেরত আসেনি (এমন শাহাদাতের মর্যাদা অবশ্য সর্বোচ্চ)-বুখারী। ‘‘সেদিন আল্লাহ যত লোককে মাফ করে দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন, তা আর কোন দিন ঘটেনা’’-মুসলিম। এ দশটি দিনে বেশি বেশি করে নেক আমলের সুযোগ হাত ছাড়া করা নিশ্চয়ই ঠিক হবে না। এ সময়গুলোতে কি কি আমল করা উচিৎ। নফল আমলের মধ্যে সর্বোচ্চ হল নফল সালাত, বিশেষ করে সালাতুত্ তাহাজ্জোদ। কুরআন তেলাওয়াত, যিকর, ইস্তেগফার, দোয়া ও দরূদ ইত্যাদি। এ সময়ে নফল রোযার আমল করা খুবই উত্তম। দশ তারিখে যেহেতু ঈদ হওয়ার কারণে রোযা রাখা হারাম। তাই সেদিনটি বাদ দিয়ে তার পূর্বের ৯টি দিন রোযা রাখার চেষ্টা করা খুবই উত্তম ইবাদত। যারা ৯ দিন রোযা রাখতে পারবেন না, তারা অন্তত ৯ই যিলহজ্ব আরাফাতের দিন এবং সম্ভব হলে তার পূর্বের দিনটির রোযা রাখার চেষ্টা করা উচিৎ। নবী করীম (সা:) ইরশাদ করেছেন, “আরাফাতের দিনের রোযা গত এবং আগামী এ দু’বৎসরের গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়ার কারণ হয়ে যায়’’-(মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)। প্রিয় নবীজী (সা:) যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশটি দিনের রোযা (ঈদের দিন ছাড়া) রাখা কখনও ছাড়েননি’’-(আহমদ, নাসায়ী)। এ দশদিনের সর্বশেষ দিনটি কুরবানীর ঈদ। ইবরাহীম (আ:)’র কুরবানীর এ সুন্নাতকে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের ন্য জারী করে দিয়েছেন। আর তাতে আমাদের জন্য রেখেছেন নেকী অর্জনের অফুরন্ত সুযোগ। কুরবানীর এ বিশাল সওয়াবের কথা উল্লেখ করে প্রিয় নবীজী (সা:) ইরশাদ করছেন, “কুরবানীর ঈদের দিন পশু যবাই করে রক্ত প্রবাহ করার মত আর কোন আমল এত পছন্দনীয় নয় আল্লাহর কাছে। কুরবানীর পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, ক্ষুর, পশম ইত্যাদি সহকারে আসবে বান্দার নেকীর ওজন বাড়িয়ে দিতে। পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায় (কবুল হয়ে যায়)। কাজেই পবিত্র মনে কুরবানী করো”-(ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)। অন্য হাদীসে তিনি বলেছেন, “প্রতিটি পশমে রয়েছে নেকী” (রিমিযী, আহমদ, ইবন মাজাহ)। এবার চিন্তা করে দেখুন, একটা পশুর কতগুলো পশম রয়েছে। দিবারাত্রি গুণতে থাকলেও কখনও গুণে শেষ করতে পারবেন নি? এত অগণিত পরিমাণ নেকী আল্লাহ দান করবেন কুরবানী করলে। কেউ কেউ প্রশ্ন করে বসেন: বাংলাদেশে যেহেতু গবাদি পশু কম। তাই এতগুলো গবাদিপশু কুরবানী না করে সম পরিমাণ মূল্য গরিব মিসকিনকে দান করে দিলে হয় না? প্রথমত: শরীয়তের হুকুম যেভাবে এসেছে সেভাবে পালন করার নামই ইবাদত। শরীয়তের হুকুমে পরিবর্তন আনার কোন ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই। দ্বিতীয়ত: প্রথমেই হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, কুরবানীর আমলে যে সওয়াব আছে লক্ষ কোটি টাকা দান খয়রাত করেও কুরবানীর আমলের সমপর্যায়ের সওয়াব অর্জন করা যাবেনা। যারা কুরবানী করবেন, তাদের জন্য খুবই ফযীলতের সুন্নাত আমল হচ্ছে যিলহজ্ব মাস প্রবেশ করলে শরীরের কোন পশম, দাঁড়ি, চুল, গোঁফ এবং হাত পায়ের নখ ইত্যাদি কাটবেন না-(মুসলিম)। কারো কাটতে হলে যিলহজ্ব মাস আসার আগেই কেটে নিবেন। তবে কেউ যদি আগে খেয়াল না করে থাকেন, আর যিলহজ্ব মাস এসে যায় এবং নখ, চুল, বা অনাকাংখিত পশম বেড়ে গিয়ে থাকে, কেটে নেয়া জায়েয আছে। হারাম নয়। শুধু সুন্নাতের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন