বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

মহান হজ্জ : একটি অনন্য সওগাত

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

শেষ

উপরের লেখার আলোকে যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিনের আমলের ফযীলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। আজকের লেখায় সে দশদিনের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিবস আরাফাহ, ঈদুল আযহা এবং তৎপরবর্তী আইয়ামুত তাশরীক সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এদিন সমস্ত হাজী সাহেবান সকাল থেকেই তালবীয়া উচ্চারণ করতে করতে আরাফাতের ময়দানে হাজির হয়ে যাবেন। দুপুর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকুফে আরাফাহ বা আরাফাতে অবস্থানের সময়। সেখানে যোহর ও আসরের সালাত আদায় শেষে আল্লাহ তা’য়ালার কাছে কায়মনোবাক্যে দু’আ করতে থাকবেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করছেন, “আরাফাতের দিনে আল্লাহ এত বেশি সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন যা আর কোন দিন ঘটেনা। আল্লাহ তাদের অনেক কাছে চলে আসেন এবং ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন’’-(মুসলিম)। অন্য হাদীসে এসেছে, “আল্লাহর কাছে আরাফাতের দিনের চেয়ে আর কোন দিন এত পছন্দের নেই। আল্লাহ সেদিন দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। দুনিয়াবাসীদেরকে নিয়ে আসমানের ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করে বলেন, দেখ, আমার বান্দারা এলোমেলো চুল আর ধুলায় মলিন, ক্লান্ত দেহে হজ্বের উদ্দেশ্যে দূর দূরান্তের রাস্তা পাড়ি দিয়ে সমবেত হয়েছে। আমার রহমতের তামান্না করছে, অথচ আমার আযাব তারা দেখেনি। আরাফাতের ঐ দিনে যত বেশি সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রদান করা হয়, তা আর কোন দিন ঘটেনা’’-(ইবনে হাব্বান)। তিনি আরও বলেছেন, আরাফাতের দিনে আল্লাহর অবারিত রহমতের বর্ষণ, আর বড় বড় গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়ার অবস্থা দর্শন করে শয়তান এত ভেঙ্গে পড়ে যে মর্ম যাতনায় সে একেবারে ক্ষুদ্রাকৃতির হয়ে যায়। ব্যর্থ, বিপর্যস্ত হয়ে ক্রোধের আগুনে জ্বলতে থাকে’’-(মুওয়াত্তা)। আরাফাতের ময়দানে এত ফযীলতের মধ্যে ডুবে থাকবেন সৌভাগ্যবান হাজী সাহেবান। কিন্তু আমরা যারা এবার হজ্ব করতে যাইনি, তাদের করণীয় আমল কি? আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকেও সুযোগ দিয়েছেন কিছু আমল করার জন্য। রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, “আরাফাতের দিনের ১টি রোযা গত বৎসর এবং আগামী বৎসর এ দু’বৎসরের গুনাহ মাফ হওয়ার কারণ হয়ে যায়’’-(মুসলিম)। কাজেই এ দিনের রোযা রাখার সুযোগ হাত ছাড়া করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। উপরোল্লিখিত হাদীসে সগীরা গুনাহ বুঝানো হয়েছে। কবীরা গুনাহসমূহ মাফ করানোর জন্য তাওবাহ করা জরুরী। আরাফাতের দিনে যে দু’আ সর্বাধিক পরিমাণে পড়া দরকার তা হচ্ছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু তা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্পে শাইয়্যিন ক্বাদীর-(তিরমিযী)।যিলহজ্ব মাসের দশ তারিখে হাজী সাহেবান পবিত্র ভূমিতে হজ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ আদায় করবেন। মুযদালিফা থেকে ফযরের পর পরই মিনায় গমন করবেন। জামরাতুল আকাবাতে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। কুরবানী করবেন। মাথার চুল কাটবেন। ইহ্রাম খুলে জামা কাপড় পরবেন। বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ ও ছাফা মারওয়ায় ছায়ী (সাফা-মারওয়ায় দৌড়াদৌড়ি) করবেন। সংখ্যার দিক থেকে হাজীদেরকে সর্বাধিক পরিমাণ কাজ দশই যিলহজ্ব করতে হয় বিধায়, এ দিনটিকেই লক্ষ্য করে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবার। হাজীদের কাজে আংশিকভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে দিয়েছেন ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ। হাজীদের অবশ্য ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব নয়। যারা হজ্ব করবেন না তাদের জন্য ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। হাজীরা মিনায় বা মক্কাতে কুরবানী করবেন। আর অন্যরা মালিকে নেছাব হলে নিজ জায়গায় কুরবানী করবেন। ইবরাহীম (আ:) স্বীয় পুত্র কলিজার টুকরা ইসমাঈল (আ:)কে আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী করার জন্য তৈরী হয়ে যেভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেন সেভাবে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে পশু কুরবানী করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এর বিনিময়ে তিনি আমাদেরকে দান করবেন বিশাল পরিমান সওয়াব। কুরবানীর পশুর গায়ে যত পশম আছে তত পরিমাণ নেকী তিনি আমাদেরকে দান করবেন। ঈদেরন দিনে কুরবানীর আমলটি আল্লাহর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয়। জবাই করার সময় পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়-(বুখারী, মুসলিম) কিন্তু সেটা করতে হবে পরিপূর্ণ ইখলাসের সাথে, সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে। শুধু গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে বা প্রদর্শনেচ্ছার উদ্দেশ্যে করলে তা কখনো আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, কুরবানীর পশুর গোশত বা রক্ত কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছেনা। আল্লাহর কাছে যা পৌঁছে তা হচ্ছে তোমাদের (অন্ত:করণে নিহিত) তাক্ওয়া-(হজ্ব : ৩৭)।বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় বড় বড় সওদাগররা প্রদর্শনেচ্ছার উদ্দেশ্যে একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে সর্বাধিক মূল্যে কুরবানীর গরু ক্রয় করে তারপর মালা পরিয়ে সাজিয়ে গুজিয়ে যেভাবে প্রদর্শনীর মহড়া করেন, সেটা আল্লাহর কাছে কতটুকুন কবুল হয়, সেগুলো জানারও বোধ হয় বেচারাদের কোন সুযোগ হয়নি। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের প্রতি কত এহসান করেছেন। তার উদ্দেশ্যে নিবেদিত কুরবানীর গোশত খাওয়া আমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। তাই বলে স্বার্থপরের মত শুধু নিজেদের ভুরিভোজেই নয়, গরীব বা কুরবানী করতে অসমর্থদের মধ্যেও যেন গোশতের একটা পরিমাণ বিতরণ করি তা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, কুরবানীর গোশ্ত থেকে তোমরা নিজেরাও খাও এবং বিত্তহীন ও গরীবদেরও খেতে দাও। আমাদের দেশে কুরবানীর ঈদের আগে ফ্রিজ কেনার ধুম পড়ে যায়। যাতে করে গরীবদেরকে বঞ্চিত করে নিজেরা খেয়ে আগাম কয়েক মাসের জন্য মওজুদ রাখা যায়।
কুরবানীর ঈদের দিনের আরেকটি সুন্নাত আমল হচ্ছে ঈদের নামায পড়ার পূর্বে কিছু না খাওয়া। নবী করীম (সা:) খালি মুখে কুরবানীর ঈদের নামায পড়তে যেতেন। আর নামায পড়ে এসে কিছু খেতেন। ঈদের দিন এবং তারপর আরও তিনটি দিন যা আইয়্যামে তাশরীক হিসেবে পরিচিতি, রোযা রাখা হারাম। কুরবানর গোশ্ত সহ খাওয়া, পান করা এবং পাশাপামি আল্লাহর যিকর ও শোকর এ মশগুল থাকার সময় এ দিনগুলো। আল্লাহর শোকর ও যিকরের জন্য প্রত্যেক ফরয নামাযের পর কমপক্ষে একবার তাকবীর পড়া ওয়াজিব, আর তিনবার পড়া সুন্নাত। ৯ই যিলহজ্ব আরাফাতের দিন ফযরের নামায থেকে শুরু হয়ে ১৩ই যিলহজ্ব আসরের নামায পর্যন্ত তাকবীর পড়া অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু নামাযের পরেই নয়, অন্যান্য সময়ও বেশি বেশি করে পড়া মুস্তাহাব। ঈদের দিনে বা তদোপলক্ষে যিকর আর শোকরের পরিবর্তে সিনেমা, ভিডিও দেখা বা অন্যান্য নাফরমানীর আমল থেকে নিজেরাও দূরে থাকা উচিৎ এবং পরিবারের অন্যদেরকেও দূরে রাখা উচিৎ। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে তাওফিক দিন।-আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন