শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

সংস্কারের দুই মাসেই উঠে গেল কার্পেটিং

সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

সিরাজগঞ্জের সড়ক মহাসড়কে সংস্কার কাজের সরকারের ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে যাত্রী সাধারণের কোন কাজে লাগেনি। বরং কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আর সড়ক ও জনপদ বিভাগের এক শ্রেণির অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের পকেট ভারী হয়েছে। এ তিনটি সড়কে যানবাহন চলাচলে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিম্নমানের কাজের কারণে অল্প সময়ে কার্পেটিং উঠে গর্ত ও খানা খন্দের সৃষ্টি হলেও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের। ফলে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এসব দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে চলছে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা।
গত ঈদুল ফিতর থেকে শুরু করে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যাত্রীদের দু:খের যেন শেষ নেই। সংস্কার কাজের পরেও প্রতিনিয়ত চলছে যানযট।
সিরাজগঞ্জের তিনটি মহাসড়কেরই বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সদ্য সংস্কার কাজের দুই মাস অতিক্রম হওয়ার আগেই মহাসড়কের অনেক স্থান থেকে কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। মহাসড়ক জুড়ে অসংখ্য গর্ত আর ঢিবির সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে এই তিনটি মহাসড়ক ব্যবহারকারি যানবাহন ও যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। অভিযোগ উঠেছে ফোর লেনের কাজ শুরুর অজুহাতে জোড়াতালি দিয়ে দায়সারা সংস্কার কাজ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু কিছু ঠিকাদার এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা।
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর ও তাড়াশ উপজেলা মধ্যে ঢাকা-বগুড়া, নগরবাড়ি-বগুড়া ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক প্রায় ৭৬ কিলোমিটার মহাসড়ক অবস্থিত। এই তিনটি মহাসড়কের ঢাকা-নগড়বাড়ি-বগুড়া মহাসড়কের রায়গঞ্জ, শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা অংশের ৪৫ কিলোমিটার এবং উল্লাপাড়া ও তাড়াশ উপজেলা অংশের হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের ১০ কিলেমিটার মহাসড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তসহ খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
স¤প্রতি বগুড়া-নগড়বাড়ি মহাসড়কের উল্লাপাড়ার শ্রীকোলা মোড় থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে বিটুমিনের কার্পেটিং করা হয়। কিন্তু কাজ চলমান অবস্থাতেই কার্পেটিং উঠে যেতে শুরু করে। উঠে যাওয়া স্থানে পুনরায় সংস্কার করা হলেও তা স্থায়ী হচ্ছেনা। এই সড়কের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি, শাহজাদপুর বাসস্ট্যান্ড, পারকোলা, উল্লাপাড়া উপজেলার শ্যামলী পাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ অন্তত ২৫টি স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে।
এদিকে গত ঈদুল ফিতরের পূর্বে ১৯ কোটি টাকা ব্যায়ে জেলার রায়গঞ্জ উপজেলা অংশের ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের হাটিকুমরুল থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার মহাসড়কে সংস্কার ও কার্পেটিং করা হলেও দুই মাসের ব্যবধানেই সেগুলো উঠে গেছে। অভিযোগ রয়েছে সংস্কার কাজ করার সময় ঘুরকা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ৫০ মিটার, রয়হাটি সেতু থেকে উত্তরদিকে এক কিলোমিটার, ভূইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ডের দুটি স্থানে ২০০মিটার, চান্দাইকোনা বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ রায়গঞ্জ উপজেলার সংযোগ রোড পর্যন্ত সড়কের দুটি অংশে ৭০০মিটার অংশে খানা খন্দ থাকলেও কার্পেটিং এর কাজই করা হয়নি। ফলে বেলতলা, ঘুরকা, চান্দাইকোনা বাস স্ট্যান্ড, সাহেবগঞ্জ এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ধীর গতিতে যান চলাচলের কারনে প্রতিনিয়ত এই স্থান গুলোতে দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হচ্ছে, ঘটছে দূর্ঘটনা।
এছাড়া ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের হাটিকুমরুল গোলচত্তর থেকে নলকা সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের মমতাজ ফিলিং স্টেশন, হানিফ হাইওয়ে রেষ্টুরেন্ট এর সামনে, ধোপাকান্দি ও পাচিলায় অসংখ্য খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কেরও। এই মহাসড়কটির মহিষলুটি, খালকুলা, হরিনচরাসহ ১০ কিলোমিটার এবং পার্শ্ব সড়কের ২৬ কিলোমিটার ধরেই বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে।
ট্রাক চালক মিজানুর রহমান বলেন, মহাসড়কের কার্পেটিং উঠে এখন এমন গর্ত হয়েছে যে প্রতিদিন দুই একটি গাড়ী গর্তের মধ্যে পড়ে এ্যাক্সেল ভাঙছে, হচ্ছে দুর্ঘটনা। এর আগেও অনেকবার সড়ক সংস্কার করা হয়েছে কখনো এক বছরের মধ্যে সড়কের এত খারাপ অবস্থা হয়নি।
মহাসড়কগুলোর বেহাল দশা, নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগসহ সার্বিক বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্স এন) মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বর্ষা মৌসুমে এমনিতেই সড়কের অবস্থা খারাপ থাকে। তা ছাড়া সংস্কার কাজ চলাকালীন বৃষ্টি ও সময়ের অভাবে কিছু স্থানে কার্পেটিং করা হয়নি। মহাসড়কের বেশি খারাপ অংশে পুরাতন উপকরন তুলে নতুন মজবুত ভাবে কাজ করা হবে, এতে কিছুটা সময় লাগবে।
তিনি আরো বলেন, যে ঠিকাদারের এই মহাসড়কগুলো সংস্কার কাজ করেছে তাদেরকে পুনরায় সড়ক মেরামত করে দিতে অফিসিয়ালি চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করি অতি দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে চলাচল নির্বিঘ্ন করা হবে। এতে কোন ঠিকাদার গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, স¤প্রতি যমুনা বহুমুখী সেতুর লিংক রোড নলকা মহা সড়কে নলকা ব্রীজ থেকে বালু উত্তোলন করায় ব্রীজটি ডেবে যায়। ফলে যানবাহন দীর্ঘমেয়াদী যানযটের সৃষ্টি করে। নলকা ব্রীজের উভয় পার্শ্বের বালু উত্তোলন বন্ধ ও তা জব্দ করে জড়িমানা করা হয়। অথচ বর্তমানে এ সেতুর উভয় পার্শ্ব থেকে ৫-৬ টি ড্রেজার বসিয়ে পাহাড় পরিমাণ উচ্চতায় আবারও বালু মহল গড়ে তোলা হচ্ছে। এটা দেখার যেন কেউ নেই। ফলে এ ব্রীজটি যেকোন সময় ভেঙে পড়ে উত্তর জনপদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যানযটের সৃষ্টি করার আশঙ্কা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Rakibul Islam ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:০১ এএম says : 0
মহা পরিকল্পনা হয়েছে এটা মামুলি ব্যাপার আপনারা নাকে তৈল দিয়ে ঘুমান সব ঠিক হয়ে যাবে ! রাস্তা ঠিক হয়ে গাড়ি চলবে আর যদি না চলে তাহলে নৌকা আছে না !!
Total Reply(0)
Siyam Sharif ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:০২ এএম says : 0
এটা সড়ক নির্মাণ না যাতির সাথে গাদ্দারি
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন