শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

অর্ধ যুগেও সড়ক সংস্কার না হওয়ায় আমুচিয়ার ২০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের সবকটি সড়কই চলাচলের অযোগ্য হয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। দীর্ঘদিন এ সড়কগুলোয় কোন ধরনের সংস্কার কাজ না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এ এলাকার সবকটি সড়কের অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সড়কগুলোতে গাড়ি চলাচল বাদ দিয়ে জন চলাচলও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এক সময় এ রাস্তাগুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত মিনিবাস, মালবাহী ট্রাক, ট্যাক্সি, টেম্পো, কার, মাইক্রোবাস চলাচল করলেও বর্তমানে জন চলাচলও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে হাজারো পরিবারের সদস্যরা একধরনের জিম্মি হয়ে আছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে এসব এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ, রোগী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, শ্রমজীবী মানুষের যেন দুর্ভোগের সীমা নেই। এ ছাড়া একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও এ ঐতিহ্যবাহী আমুচিয়া ইউনিয়নে সব কিছু থাকার পরও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ন্যূনতম উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকার সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিন পর গত কয়েক মাস পূর্বে পোস্ট অফিস সড়কে নামমাত্র পাথর-বিটোমিনের লিপস্টিক দিলেও বর্ষা আসার আগেই তাতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী এ ইউনিয়নে রয়েছে শত বছরের পুরনো ধর্মীয় তীর্থস্থান খ্যাত বুড়া মসজিদ, দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম কানুনগোপাড়া স্যার আশুতুষ সরকারি কলেজ, আঞ্চলিক গানের স¤্রাজ্ঞী একুশে পদকপ্রাপ্ত শেফালী ঘোষের জন্মস্থান, ব্রিটিশ আমলে রতœগর্ভা উপাধিপ্রাপ্ত মুক্তকেশী ও কানুনগো পরিবারের জন্মস্থল। ফলে স্বভাবত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমুচিয়া ইউনিয়ন এগিয়ে থাকার কথা থাকলেও জনপ্রতিনিধিদের কোন মাথা ব্যথা নেই এদিকে। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন দুষ্কৃতকারীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধাভুগী স্থানীয়, জেলা ও উপজেলা লেভেলের কিছু নেতা শত ঐতিহ্যের চারণভূমি এ আমুচিয়াকে কলুষিত করার লক্ষ্যে সমাজ ধ্বংসকারী পাহাড়ি বাংলা মদের মজুদদার বা ব্যবসায়ী সৃষ্টিতে লিপ্ত। তারাই মূলত, এ এলাকার উন্নয়নে ঘোর বিরোধী। এসবে প্রশাসনকে ব্যবহারে যোগান দিয়ে যাচ্ছে দলীয় নেতা সেজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। অজোপাড়া গাঁয়ের ন্যায় দীর্ঘ ৬/৭ বছর ধরে সব ধরনের উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ৯নং আমুচিয়া ইউনিয়ন। ফলে এলাকার খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে বেড়ে যাচ্ছে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কর্মকা-ে নাভিশ্বাস। আমুচিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান কাজল দে সরকারি দলের মদদপুষ্ট হিসেবে পরিচয় দিলেও গত ৫ বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোন কাজই করেনি। বরং এ ৫ বছরে গুটি কয়েক সড়ক পাশে প্যালাসেটিং ও কয়েকদিন সামান্য রাস্তার পার্শে মাটি দেয়া ছাড়া আর কিছুই করেনি। দেখা গেছে, টিয়ার, কাবিখা, কাবিটা, ১ পার্সন, ৪০ দিনের কর্মসূচী, এলজিএসপি, এলজিইডি ও এডিবি থেকে শুরু করে লাখ লাখ টাকার বরাদ্দ থাকলেও ইউনিয়নের উন্নয়নে কোন কাজই করেনি। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ এসব উন্নয়ন এগুলোর ধারই ধারে না। এক কথা নেই যেমন উন্নয়নে, তেমনি তদারকিতেও মহাগাফিলতি। জানা যায়, উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের প্রধান বদর শাহ সড়ক, কানুনগোপাড়া পোস্ট অফিস সড়ক, খরঞ্জাপাড়া-বগাচড়া-মাস্টার বাজার সড়ক, আমুচিয়া রাবার বাগান সড়ক, ধোরলা কালীবাড়ী সড়ক, ধোরলা খান বাহাদুর শাহ সড়ক, ধোরলা-জ্যৈষ্টপুরা সড়ক, রাবার বাগান-জ্যৈষ্টপুরা সড়ক, ধোরলা সরদারপাড়া সড়ক, বগাচড়া তুলাতল-বুড়া মসজিদ সড়ক, আমুচিয়া বুড়া মসজিদ-বড়ুয়াপাড়া সড়ক, কালাইয়ার হাট-হযরত মহিউদ্দিন শাহ সড়ক, ধোরলা বান্ধব পাঠাগার-সরদারপাড়া-মাস্টার বাজার সড়ক, পূর্ব আমুচিয়া-জ্যৈষ্টপুরা সড়ক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত আঞ্চলিক গানের স¤্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষের বাড়ী-মুক্তকেশী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সড়কের বেহাল দশা একমাস দু’মাস বা এক বছর দু’বছর নয় যেন প্রায় আর্ধ যুগ ধরে। সেই ২০০৪-২০০৫-২০০৬ সালের উন্নয়ন দিয়েই চলছে দীর্ঘদিন। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে যেন আমুচিয়ার সব কটি সড়কের অবস্থা প্রায় অস্তিত্বহীন। জরাজীর্ণ সড়কগুলো উন্নয়নের জন্য জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের যেমন কোন মাথা ব্যথা নেই, তেমনি সংস্কারের জন্যও যেন বেমালুম আলা-ভোলা। ব্যস্ত শুধু পকেট পুজারিতে। লিপ্ত বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা লুটে নিতে। ফলে প্রতিনিয়ত প্রায় ২০ হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কষ্ট পাচ্ছে এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ, রোগী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, শ্রমজীবী ও পুণ্যার্থী মানুষ। এলাকাবাসী আগামী বর্ষার আগেই এসব জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংস্কার করে এখানকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু, আবালবৃদ্ধবনিতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী-শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষদের দুঃখ লাঘবে এগিয়ে আসার আসার আহ্বান জানান সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি। এ ব্যাপারে ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোসলেম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, কি উন্নয়ন করব, কোন বরাদ্দ আসলে কয়েকদিন চেয়ারম্যানকে পাওয়াই যায় না। ঘরে বসে বসে কোন হিসেবে টাকা পকেটে ঢুকাবে তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর প্রায় বরাদ্দ তার নিজস্ব লোক দিয়ে কমিটি সাজিয়ে কাজ দেখায়। কোন সদস্যের সাথে আলোচনা করার গরজ মনে করে না। নিয়ম না থাকলেও তার অনুচরি কিছু লোককে খুশি করতে নিজস্ব মালিকানা পুকুরে ঘাট বসিয়ে লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ নিয়ে আমুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করনেনি। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মঈনউদ্দীন খান বাদল এমপি বলেন, বোয়ালখালীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেকটা উন্নত হয়েছে। ঝুঁকিপুর্ণ ও গুরুত্বপুর্ণ কাজগুলো দ্রুততার সাথে করার চেষ্টা করব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন