শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

দেখা করব না ট্রাম্পের সাথে : এরদোগান

যুক্তরাষ্ট্র মানবিজ চুক্তির বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে

হুররিয়াত ডেইলি নিউজ | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান সেপ্টেম্বরের শেষদিকে জাতিসংঘের সভাগুলোতে যোগ দেবেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক বিরোধের কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে তিনি দেখা করবেন না। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার মানবিজ শহর থেকে ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের প্রত্যাহার বিষয়ে স্বাক্ষরিত একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বাস্তবায়ন বিলম্বিত করছে।
৩ সেপ্টেম্বর কিরঘিজস্তানের রাজধানী বিশকেক থেকে আংকারায় ফিরে এরদোগান সাংবাদিকদের বলেন, কাজটিতে দেরি করা হচ্ছে। আমাদের এটা দেখতে হবে। আমরা ভালো জায়গায় নেই। আমরা যে চুক্তিতে পৌঁছেছিলাম তা সঠিক পথে বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান যে চুক্তির কথা বলেছেন তা ৪ জুন স্বাক্ষরিত হয়েছিল তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রী মেভলুত কাভোসোগলু ও তার মার্কিন প্রতিপক্ষ মাইক পম্পেওর মধ্যে। এতে তুরস্কে নিষিদ্ধ ঘোষিত কুর্দি গ্রæপ পিকেকের সিরীয় শাখা ওয়াইপিজির যোদ্ধাদের মানবিজ থেকে প্রত্যাহার এবং শহরটি তুর্কি ও মার্কিন সৈন্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা। তুর্কি কর্মকর্তারা বলেন, ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের প্রত্যাহারসহ সব প্রক্রিয়া ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তুর্কি ও মার্কিন সৈন্যরা এখনো সেখানে যৌথ টহল মিশন শুরু করেনি। ঐ অঞ্চলে দুদেশের সামরিক প্রশিক্ষণ বিলম্বিত করার জন্যই তা ঘটেছে।
এরদোগান আশা প্রকাশ করেন যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাভাসগলু ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসি আকারের সাথে তাদের মার্কিন প্রতিপক্ষের বৈঠকের পর চুক্তি বাস্তবায়নের নতুন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
তিনি বলেন, একটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং মানবিজ ও তেল রিফাত যৌথ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমি আশা করি।
আংকারা সিরিয়া বিষয়ে নয়া বিশেষ প্রতিনিধি নিযুক্ত জেমস জেফ্রিকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়ার মধ্যে এরদোগানের কাছ থেকে এ কথা শোনা গেল। জেফ্রি বাগদাদে মার্কিন দূত নিযুক্ত হওয়ার আগে ২০০৮-২০১০ মেয়াদে তুরস্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
এরদোগান বলেন, আমি জেফ্রির নিয়োগকে সঠিক সিদ্ধান্ত হিসেবেই দেখছি। তার সাথে তিনি আংকারায় রাষ্ট্রদূত থাকার সময় থেকেই আমার বন্ধুত্ব রয়েছে। আংকারা মনে করে যে বিশেষ করে ব্রেট ম্যাকগার্কের পর তার নিয়োগ ইতিবাচক ঘটনা। কারণ,সিরিয়ার ক্ষেত্রে ম্যাকগার্কের কর্মকান্ড আংকারার ক্রোধ সৃষ্টি করে।
এক প্রশ্নের জবাবে এরদোগান জোর দিয়ে বলেন, মার্কিন ধর্মযাজক অ্যান্ড্রু ব্রানসনের আটকের ব্যাপারে আইনগত প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ধর্মযাজকের মুক্তির ব্যাপারে তুরস্ক ওয়াশিংটনের কোনো বেআইনি দাবি মানবে না।
তুরস্ক যদি নতুন মার্কিন অবরোধের সম্মুখীন হতে না চায় তাহলে ধর্ম যাজককে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার মার্কিন আহবান নাকচ করে বলেন, তুরস্ক আইনের শাসন সমুন্নত রাখবে। কোনো অবৈধ দাবি বিবেচনা করা হবে না।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এখন যা ঘটছে তা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে হাল্কব্যাংক ডেপুটি জেনারেল ডাইরেক্টর হাকান আতিলার কথা বলা যায়। হাল্কব্যাংক ও তারঃ ডেপুটি ম্যানেজার কী অন্যায় করেছে? তার কোনো প্রমাণ নেই। তারা আইনের কোনো পরোয়া করেন না। তারা নিজের সম্পর্কে মনে করে যে আমি আমিই ঠিক, কারণ আমার শক্তি আছে। কৌশলগত ন্যাটো মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মতভেদ এবং তুরস্কের বিরুদ্ধে দেশটির অন্যায় পদেক্ষেপের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করে এ কথা বলেন।
এরদোগান বলেন, এসব ঠিক নয়। কোনো কৌশলগত অংশীদারের জন্য এভাবে অগ্রসর হওয়া ঠিক নয়। আমি প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত ১৬ বছর কাজ করেছি। এমনও সময় গেছে যখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সরবরাহ পাইনি। অথচ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো কোনো অর্থ না দিয়েই সকল প্রকার অস্ত্র পেয়ে যায়। আর সে অস্ত্র আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। তিনি প্রশ্ন করেন, এটা কি ধরনের কৌশলগত অংশীদারিত্ব?
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নেপথ্য ব্যক্তি ফেতুল্লাহ গুলেনকে তুরস্কের অনুরোধ সত্তে¡ও যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যর্পণ করেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মাসের শেষ দিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় যোগ দিতে তিনি নিউইয়র্ক যাবেন। কিন্তু ট্রাম্পের সাথে দেখা করার কোনো আগ্রহ তার নেই। তিনি বলেন, আমি তার সাক্ষাত চাইব না।
এরদোগান ইদলিবে সিরিয়ার আশু সামরিক অভিযান সম্পর্কেও কথা বলেন। ইদলিব এখন আল কায়েদার সিরিয়া শাখা হায়াত তাহরির আল -শাম কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত।
ইদলিব পরিস্থিতি নিয়ে তুরস্ক, রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে চলমান আলোচনার উল্লেখ করে এরদোগান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এ প্রদেশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হলে ভয়াবহ হত্যাকান্ড ঘটবে।
তিনি বলেন, এ রকম কিছু হলে এখানকার মানুষগুলো পালিয়ে কোথায় যাবে? তারা বিপুল সংখ্যায় তুরস্কে আসবে যা নতুন জটিলতার সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, তুরস্ক, রাশিয়া ও ইরানের নেতারা ৭ সেপ্টেম্বর তেহরানে বৈঠকে মিলিত হবেন।
তিনি বলেন, শীর্ষবৈঠকে এ ব্যাপারে আমরা অগ্রগতি লাভ করব। এরদোগান আরো বলেন, এ আলোচনা আস্তানা বৈঠকের অগ্রগতি এবং জেনেভা বৈঠকের বিরোধী নয়।
ইদলিবের পরিস্থিতিকে নির্মম আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, যখন সিরিয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে ও তারা দেশে ফিরে যাবে তখন আবার নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
তুরস্কের অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে তুরস্ক -ইইউ সম্পর্ক বিষয়ে এরদোগান বলেন যে সেপ্টেম্বরের শেষদিকে তিনি এক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সফরে জার্মানি যাবেন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলকে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে ইইউ আমাদের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো বিষয়ে ইতিবাচক জবাব দেয়নি। ভিসা উদারিকরণ ও উদ্বাস্তু সাহায্য বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিলম্বিত করছে। তিনি প্রশ্ন করেন, আমরা কতদূর যাব? বাস্তব কিছু ঘটবে কি?
এরদোগান বলেন, ফ্রান্সের সাথে সম্পর্ক ভালো, কিন্তু তিনি ফ্রান্স সফর করলেও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তুরস্কে সফরে আসেননি। ইইউর মধ্যে নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়াম কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ ইতিবাচক নয়, অস্ট্রেলিয়ার মনোভাবও নেতিবাচক। ১৯৬৩ সাল থেকেই তুরস্ক ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে আসলেও ইইউ দেশগুলো তা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা বলে যে তারা পিকেকে-কে এক সন্ত্রাসী সংগঠন বলে গণ্য করে অথচ তারা তাদের নিজেদের দেশে বক্তৃতা করতে, পোস্টার লাগাতে দেয়। তারা তাদের পার্লামেন্টের সামনে তাদের তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করতে দেয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন